ছোট্ট ফুটফুটে সামি-এই পৃথিবীতে তার বয়স মাত্র ১০ দিন। সামির সবচেয়ে কাছের মানুষ তার মা সাদিয়া। সামির ব্যবহারের সব জিনিস হওয়া চাই একদম ঠিকঠাক। তাই এ কাজটির জন্য কারও ওপর ভরসা না করে মায়ের কাছে সামিকে রেখে সাদিয়া নিজেই চলে এসেছেন তার সোনামণির জামা, খেলনা, ন্যাপকিন, জুতোসহ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনতে।
নবজাতক শিশুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহানা রহমান। বাচ্চাদের ত্বক অত্যন্ত কোমল ও সংবেদনশীল। ত্বকের আর্দ্রতা সাধারণ মাত্রার চেয়ে একটু কম থাকে, তাই বাচ্চাদের জিনিসপত্র নির্বাচন করতে হয় সাবধানে।
পোশাক ও কোমল বিছানা
বাচ্চাদের পোশাক নির্বাচন করতে হয় সুতি, নরম ও পাতলা দেখে। যাতে সেটি আরামদায়ক হয়। বাচ্চাদের ন্যাপি ও নিমায় যতটুকু সম্ভব কারুকার্য কম হলে ভালো হয়। পোশাকের পাশাপাশি বাচ্চাদের ব্যবহৃত বিছানাটিও হতে হবে নরম ও আরামদায়ক। যেহেতু নবজাতক শিশুদের মাথার আকৃতি গঠনের একটি ব্যাপার রয়েছে, তাই মাথার নিচের বালিশ হিসেবে গোলাকার করে সুতি কাপড় পেঁচিয়ে নিতে পারেন অথবা বাজারেও বিশেষ এক ধরনের বালিশ পাওয়া যায় তা কিনে নিতে পারেন। বাচ্চার ব্যবহৃত কাঁথাও নরম সুতি কাপড়ের হওয়া উচিত। বিছানা ভিজে যাওয়ার ভয়ে বাচ্চাকে ম্যাটে শোয়ালে খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেন আরামদায়ক হয়। প্লাস্টিক ম্যাট বেছে না নিয়ে তুলা বা ফোমের হালকা ম্যাট বেছে নিতে পারেন। বাচ্চাকে বিছানায় না শুইয়ে দোলনায় শোয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন দোলনার চারপাশ যেন যথেষ্ট উঁচু হয়। মশা তাড়াতে কয়েল, স্প্রে ব্যবহার না করে মশারি পেতে দিন। বাজারে অনেক সুন্দর সুন্দর মশারিসহ দোলনা পাওয়া যায়, তা বেছে নিন।
মৃদু কসমেটিক্স
পোশাকের পাশাপাশি নবজাতকের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকার জন্য কসমেটিক্স গুরুত্বপূর্ণ। আগে বাচ্চাদের জন্য আলাদা কসমেটিক্স ব্যবহারের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হতো না। কিন্তু বর্তমানে বাচ্চাদের উপযোগী বাজারে নানা রকম কসমেটিক্স পাওয়া যাচ্ছে। শিশু বিশেষজ্ঞ শাহীন রহমান মনে করেন, বাচ্চাদের কসমেটিক্সে রাসায়নিক পদার্থ কম, অ্যালার্জি রোধক ও কম সুগন্ধিযুক্ত হওয়া উচিত। তাই সেদিকে নজর রেখে আপনার বাচ্চার উপযোগী কসমেটিক্স নির্বাচন করুন। বাচ্চাদের কসমেটিক্সের মধ্যে মাদার কেয়ার, জনসন অ্যান্ড জনসন, ফারলিন, নুনোসহ দেশীয় মেরিল বেছে নিতে পারেন।
রঙিন খেলনা
বাচ্চাদের হাতে খেলনা তুলে দেওয়ার সময় লক্ষ রাখুন সেটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কি না। খেলনা নরম হওয়া উচিত এবং এমন হতে হবে যেন শিশু কোনোভাবেই ব্যথা না পায়। খেলনা রঙিন হলে শিশুরা খুব পছন্দ করে। তবে খেয়াল রাখুন সেটি থেকে যেন রং না ছড়ায়।
অন্যান্য
বাচ্চার খাবারের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ অবশ্যই যেন পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হয়। ফিডার বিভিন্ন আকৃতির পাওয়া যায়। ছোট বাচ্চার জন্য ছোট্ট ফিডার নির্বাচন করুন। নিপল যেন নরম হয় তা লক্ষ রাখুন। এ ছাড়া বাচ্চার গোসলের বাথটাব, প্যামপারস, বোটল ওয়াশ, ফিডার কভার, বিব, ভেজা টিস্যু-এসব দ্রব্য কেনার সময় বাচ্চার কোমল ত্বকের কথা মনে রেখে নির্বাচন করুন। বাচ্চার ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করুন।
দরদাম
বাচ্চার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পাবেন-বেবি সেটঃ তিনটি শিমুল তুলার বালিশ, দুটি নিমা, দুটি বিব, দুটি ন্যাপকিন ও একটি নকশিকাঁথা ৬০০ টাকা। নিমা সেট (পাঁচটি) ২০০ টাকা, নকশিকাঁথা সেট ৩৭৫ টাকা, গায়ে দেওয়ার কাঁথা সেট ২০০ টাকা, কম্বল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, নিমা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, ফতুয়া ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, জুতো ৯০ থেকে ১১০ টাকা, বিব ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ন্যাপি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ফিডার ৮০ থেকে ২০০ টাকা, ফিডার কাভার ৮০ থেকে ১০০ টাকা, নিপল ৩০ থেকে ৫০ টাকা, মশারি ৩৭০ থেকে ৫০০ টাকা, ম্যাট ১২০ থেকে ২০০ টাকা, তোয়ালে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, ডায়াপার ১০০ থেকে ৭৫০ টাকা, বেবি শ্যাম্পু ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, লোশন ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেল ১১০ থেকে ১৭০ টাকা, বোটল ওয়াশ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পাউডার ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, বাথটাব ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, দোলনা ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের নরম খেলনা যেমন বল, আপেল, মাছ, পুতুল ৪০ থেকে ১৫০ টাকা, ঝুনঝুনি ৯০ থেকে ১২০ টাকা।
কোথায় পাবেন
নবজাতকের ব্যবহার্য জিনিসগুলো পাবেন-
— চাঁদের হাসি, ১/ই/১ পরিবাগ, ঢাকা।
— কিডস অ্যান্ড মামস, বাড়ি-৪৬, রোড-১১, ব্লক-সি, বনানী, ঢাকা।
— আড়ং — নিপুণ।
— তারেকস জোনস
— কিডস কালেকশন, আদেল প্লাজা, লালমাটিয়া, মিরপুর রোড, ঢাকা।
এ ছাড়া নিউমার্কেট, গাউছিয়া, মৌচাক, ইস্টার্ন প্লাজাসহ বিভিন্ন সুপারশপ ও শপিং মলে বাচ্চাদের ব্যবহৃত জিনিসগুলো পাওয়া যাবে।
শান্তা তাওহিদা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৮, ২০০৯
Leave a Reply