‘হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে, দেখা হবে তোমার-আমার অন্য দিনের ভোরে’। হ্যাঁ, প্রায় সবারই বন্ধু আছে আর বন্ধু থাকলেই দেখা হবে, কথা হবে, হবে অনাবিল আড্ডা। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ নিংড়ে, সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে যে জায়গায় কথা বলা যায়, তা হলো বন্ধু আড্ডা। আর এই আড্ডাটা যদি হয় বন্ধুদের একটি বিশেষ দিনে, তাহলে কোনো কথাই নেই।
২ আগস্ট বিশ্ব বন্ধু দিবস। এ দিনে সব বন্ধু মিলে কথার ফুলঝুরি নিয়ে কথার পসরা সাজিয়ে বসবে সবাই। কে কার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে নিজের কথাটি আগে বলতে পারবে-এ নিয়েই যেন প্রতিযোগিতার শেষ হবে না তাদের। হয়তো সেদিন কেউ কেউ বলতেই পারবে না পরানের গহিনে সাজানো কথাগুলো। তারা শুধু শুনেই যাবে।
এই দিয়েই কিন্তু শেষ নয়। দিনটি সামনে রেখে অনেকেই করবে অনেক আয়োজন, করবে নানা পরিকল্পনা। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা নানা কাজে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মধ্যেও মন চায় এই দিনটিতে বন্ধুর হাতে হাত রেখে হাঁটি, মন খুলে জমানো কথাগুলো খুলে বলি বন্ধুদের। সেই আয়োজনেই হয়তো অনেকে বিভিন্ন ধরনের উপহার আদান-প্রদান করবে বন্ধুদের মধ্যে। একসঙ্গে সারাটা দিন ঘুরবে, আড্ডা দেবে, হয়তো খাওয়া-দাওয়া করবে।
এ বিষয়ে এটিএন বাংলার সাংবাদিক ও গল্পকার শাহনাজ মুন্নী বলেন, ‘বন্ধুত্ব আসলে কোনো নির্দিষ্ট দিন সামনে রেখে হয় না। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা সব সময় এবং সব দিনের জন্যই। এই সময়ে এসে মনে হয়, বন্ধুত্বটা হচ্ছে লম্বা ধৈর্য্য এবং পরীক্ষার একটি বিষয়। আমি বন্ধুর জন্য কতটুকু করতে পারি এবং বন্ধু আমার জন্য কতখানি করতে পারছে, এখন এই বিষয়টিই মুখ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে। বর্তমান যুগে নিখাদ খাঁটি বন্ধুত্ব খুঁজে পাওয়া বেশ ভার। স্কুল-কলেজে যে বন্ধুত্ব হয়, তা মোটামুটি খাঁটি। হয়তো এই দিনে সেই স্কুল-কলেজের বন্ধুদের কথা মনে পড়বে। মনের মধ্যে একটা ্নৃতিকাতরতা কাজ করবে। আর এই ্নৃতিকাতরতাই মনের মধ্যে একটা অন্য রকম ভালো লাগার জন্ম দেয়। এই দিনে বন্ধুরা বন্ধুদের ফ্রেন্ডশিপ বেল্টসহ নানা রকম উপহার আদান-প্রদান করবে। আমাদের সময় এই দিনটিকে সেলিব্রেট করার মতো কিছু ছিল না। আগে আমরা সবাই মিলে বন্ধুদের বাসায় যেতাম। একসঙ্গে খেতাম। আমাদের জন্য আলাদা রান্না হতো। তখন বন্ধুত্বটা হতো পুরো পরিবারের সঙ্গেই। সেটা এক অন্য রকম বন্ধুত্বের আবহ তৈরি করত। বর্তমান যুগে এই বিশেষ দিনটিতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেয়, একসঙ্গে হাত ধরে হাঁটে। তাদের এই অনুভূতিগুলো আজ এই বয়সেও আমার মনে সঞ্চারিত হয়।’
এখনো অবশ্য আমাদের দেশে একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পাশাপাশি বন্ধু হয় পুরো পরিবারটিও। এর পরও এখন আগের সেই আবহটি আর নেই। সবকিছুই প্রায় যান্ত্রিক হয়ে গেছে। এখন বন্ধু দিবসে রাতের বেলায় বন্ধুদের মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। কেউ বা ইন্টারনেটে দূরের বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে শুভেচ্ছা জানানোর আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ফেইসবুক। এখন এই ফেইসবুক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বন্ধুরা অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। অনেকে এই ফেইসবুকেই জানাবে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছাবার্তা। আবার যারা একটু অবসর পাবে, তারা হয়তো মেতে উঠবে বন্ধুদের নিয়ে অনাবিল আনন্দে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্রী নাসরীন জাহান বলেন, ‘এই দিনে অনেক রাতে বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাব। বন্ধুদের ফ্রেন্ডশিপ বেল্ট, কলম প্রভৃতি উপহার দেব। দিনের বেলায় সকাল থেকেই চিংড়ি মাছ, ভাত আর পায়েস রান্না করে বন্ধুদের খাওয়াব। প্রতিবারই আমি এই রকম করি। বিকেল বেলায় বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কোনো পার্কে গিয়ে বসব। সেখানে ঝাল মুড়ি আর বাদাম খেতে খেতে অনেক আড্ডা দেব, মজা করব।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত হিরণ মাহমুদ বলেন, ‘আগে তো আমরা সব বন্ধু মিলে হাতে রাখি পরতাম। তারপর সুন্দর কাপড় পরে ভার্সিটিতে শোভাযাত্রা করতাম। কিন্তু এখন তো বেশ কর্মব্যস্ততা সবার। তাই এবার আর তা করা হবে না। এবার এই দিনটিতে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাব। বিকেল বেলায় কাজ শেষ করে কাছাকাছি যেসব বন্ধু আছে, তাদের নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাব। এর ফাঁকে আড্ডা এবং বেড়ানোটা একসঙ্গেই হয়ে যাবে। তারপর সবাই মিলে কোনো রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে ডিনার সারব। আবার সময় পেলে সবাইকে আমার বাসায় ডেকে নিজে রান্না করে খাওয়াব। বন্ধুদের রান্না করে খাওয়াতে আমি খুব তৃপ্তি পাই।’
এভাবেই হাসি, আনন্দ আর আড্ডায় কেটে যাবে বিশ্ব বন্ধু দিবস। পরের দিন থেকে আবার যে যার কাজে ব্যস্ত। বন্ধুর ভালো করে খোঁজ নেওয়ারও হয়তো ফুরসতটি আর হবে না। তাই যত ব্যস্ততাই থাকুক, অন্তত এই একটি দিন মনে করুন পুরোনো বন্ধুদের।
সুজন সুপান্থ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৮, ২০০৯
Leave a Reply