সারাদিন কাজ আর কাজ, উদয়া‘ খাটুনি, হাতে সময় নেই, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অগ্রাধিকার পায় না। কোনও কোন দিন অনেক বেলা ভরপেট খাওয়া হয় না, চটজলদি হালকা নাস্তা হয়। তবে নাস্তাটি স্বাভাবিক হলেই হলো। দু’বেলা আহারের মধ্যে যদি ক্ষুধা লাগে, তাহলে শরীরে পুষ্টি চাই, বোঝা গেলো। তাই ক্ষুধা মেটাতে কিছু একটা মুখে দিতে হয়। উল্টোপাল্টা নাস্তা খেলে কিন্তু সমস্যা। নাস্তায় যদি বেশি চর্বি ও শর্করা থাকে তাহলে রক্তে পরবর্তীতে কোলেস্টেরোল বাড়ে, ওজন বাড়ে শরীরে, পরবর্তীতে হতে পারে নানা জটিলতা যেমন হৃদরোগ, উঁচুমান কোলেস্টেরোল এবং ডায়েবেটিস। সুসংবাদ হলো এই যে আজকাল স্বাস্থ্যকর খাবার সম্বন্ধে এত সচেতন হয়েছে মানুষ সেজন্য অনেক খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লোফ্যাট লোশর্করা খাবার তৈরি করছে যা স্বাদে আসল জিনিসের একই রকম।
খাদ্য চয়ন যখন করবেন তখন কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে-
খাবেন প্রচুর ফল ও শাক-সবজিঃ এতে ক্যালেরি ও চর্বি কমে। এছাড়া এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন ও অন্যান্য এন্টিঅক্সিডেন্ট।
সম্পৃক্ত চর্বির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবেঃ যত কম সম্ভব, সম্পৃক্ত চর্বি খাওয়া কমাতে হবে। কারণ এরকম চর্বি বেশি খেলে রক্তে বাড়ে কোলেস্টেরোল। তেলে ঘিয়ে ভাজা খাবার, প্রাণীজ চর্বিতে রয়েছে সম্পৃক্ত চর্বি। সে বিবেচনায় কচি মোরগ, মাছ এগুলো লাল গোস্ত থেকে অনেক ভালো।
যে খাদ্য রান্না হচ্ছে সেদিকেও নজর রাখুনঃ
আংশিক হাইড্রোজিনেটেড উদ্ভিজ্জ তৈল, যা মার্জারিন ও শর্টেনিং-এ ব্যবহৃত হয়, এতে এক ধরনের চর্বি থাকে একে বলে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড। এগুলো খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এতে রক্তে বাড়ে কোলেস্টেরোল। ভাজা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন কুকিস, চিপস ও ক্যান্ডিস-এ এসব চর্বি পাওয়া যায়।
খাবারে যেসব তরল সস্ ছড়ানো হয়, সেগুলো কেমন হবেঃ স্যালাড ড্রেসিং সস বা যেসব তরলে খাবার ডুবিয়ে খাওয়া হয়, সেগুলোতে যেন চর্বি থাকে খুব কম। সেই সস খাবারের উপর না ঢেলে পাশে রাখা ভালো। এতেও এসব কম খাওয়া হবে। দুধজাত প্রিয় খাদ্যের মধ্যে যেগুলোতে চর্বি কম সেগুলো খাওয়া ভালো। এতে চর্বি কম খাওয়া হবে। যেমন ফুলক্রিম দুধ বা দধির বদলে লোফ্যাট দধি বা ক্রিম ছাড়া দুধ ভালো।
শ্বেতসার হলো শক্তির গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্রুত উৎসঃ এগুলো শরীরে শর্করায় পরিণত হয়, তাই বেশি বেশি শ্বেতসার খেলে দেহে ওজন বাড়ে এবং রক্তে বাড়ে শর্করা, বিশেষ করে ডায়েবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তো বটেই। এছাড়া আগের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে খুব বেশি শ্বেতসার খেলে হিতকরী কোলেস্টেরোল এইচডিএল রক্তে হ্রাস পায়। গোটা শস্য যেমন গমের রুটি, জইচূর্ণ এতে ময়দা কম, আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ কম। বাদাম, বীজ এসবও ভালো নাস্তা তবে এতে যেন নূন না থাকে। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর অসম্পৃক্ত চর্বি, যা রক্তের কোলেস্টেরোল কমাতে সহায়ক। বাদাম, আখম্স্নোট এতে রয়েছে ওমেগা-৩ মেদা, যা ক্ষতিকর এলডিএল কমাতে পারে আবার হিতকরী এইচডিএল বাড়াতে পারে। লাউয়ের বীচি এবং সূর্যমুখীর বীজ এগুলোতে আছে ভিটামিন ই, বি ভিটামিন ও খনিজ। নিবন্ধটি পড়ে মনে হবে যে খাবারে এত বিকল্প আছে, তত বৈচিত্র্য রয়েছে খাবারের মধ্যে এগুলো চেষ্টা করে দেখলে ক্ষতি কি? কেন খাবো ফাস্টফুড, তেলেভাজা, নোংরা ইটালিয়ান রেস্তোরাঁর পাশে নর্দমার উপর বসে কেন এসব ঝালমুড়ি, ফুচকা, তেলেভাজা মোগলাই খাওয়া? কেবল হ্নৎপিণ্ড কেন, দেহের পুরোটাই সুস্থ রাখা তো উচিত।
—————————–
অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ৩১ মে ২০০৮
Leave a Reply