ত্বককে সজীব ও ন্যাচারাল রাখতে আজকাল অনেক ধরনের বিউটি এইডস বের হয়েছে। আধুনিক রূপচর্চায় ত্বকের ধরন, বয়স, প্রহর, মৌসুম এমনকি উৎসবকে মাথায় রেখে কসমেটিকসের উপাদান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এখন থেকে দুই যুগ আগেও যা কল্পনা করা যেত না। ফেসে লাগাবার জন্য দুই রকম ক্রিম বা লোশন প্রচলিত ছিল। একটি হচ্ছে কোল্ড ক্রিম অপরটি স্নো বা ভ্যানিশিং ক্রিম।
বর্ষার এই দিনগুলোতে কখনো কড়া রোদ আবার কখনো ঝমঝম বৃষ্টি। এমন দিনে ত্বকের ময়েশ্চার নিয়ন্ত্রন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। ত্বকের ময়েশ্চার নিয়ন্ত্রনে আছে বেশ কিছু প্রাকৃতিক আর কৃত্রিম উপায়। ত্বকের এই অনুষঙ্গ নিয়ে লিখেছেন হেয়ারোবিক্স ব্রাইডাল এর হেড অফ অপারেশন্স রূপ বিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমীন মিউনী
কোল্ড ক্রিম : মূলত শীতের প্রতিকূলতা থেকে ত্বকে যে জীর্ণতা তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে কোল্ডক্রিম তা প্রতিহত করে। এই ক্রিমে যে উপাদানগুলো থাকে তা হল মধু, ওয়াক্স, আলমন্ড অয়েল, বোরাকস্ পাউডার, রোজ ওয়াটার এবং সুগন্ধি। গ্রীষ্মকাল ছাড়া মোটামুটি সব ঋতুতেই কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করা যায়। বহুদিন ধরে এটি ‘অলপারপাস ক্রিম’ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
স্নো বা ভ্যানিশিং ক্রিম : ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে আবহাওয়ার আর্দ্রতার বৈষম্য ঘটে। কিন্তু ত্বকের জন্য প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত আর্দ্রতা। ভ্যানিশিং ক্রিমের কাজ হচ্ছে ত্বকে আর্দ্রতার ভারসাম্য করে রাখা। যাদের মুখমন্ডল অতিদ্রুত তৈলাক্ত হয়ে ওঠে। তারা সাধারণত এই স্নো ব্যবহার করেন। এর উপাদানগুলো হচ্ছে- টেয়ারিক এসিড, পটাশিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড, গ্লিসারিন, ডি-গ্লাইকোল, স্টেয়ারেট এবং মিনারেল ওয়াটার।
ত্বকে সজীব ও উজ্জ্বল রাখতে কোল্ডক্রিম বা স্নো ছাড়াও রয়েছে নারিশিং ক্রিম, ক্লিনজিং ক্রিম, এ্যাসট্রিনজেন্ট লোশন, ক্যালামাইন লোশন, ফাউন্ডেশন ক্রিম, ফেয়ারনেস ক্রিম, ডে-ক্রিম, নাইট-ক্রিম, এ্যান্টি রিংকেল ক্রিম, সানব্লক ক্রিম ইত্যাদি।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজিং
স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বক : ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা নারিশিং ক্রিম দিয়ে ম্যাসাজ করুন। রাতে নাইট ক্রিমের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পানি মিশিয়ে আপওয়ার্ড ও আউটওয়ার্ড স্ট্রোকে ম্যাসাজ করুন। চোখের তলায় অনামিকা দিয়ে ম্যাসাজ করুন ১ মিনিট ধরে। থুতনি থেকে গলার নিচের অংশও ক্রিম দিয়ে ম্যাসাজ করুন। তারপর ভিজা তুলো দিয়ে মুছে ফেলুন। চোখের চারধারে আন্ডার আই ক্রিম লাগান। ১৫ মিনিট পর ভেজা তুলো দিয়ে মুছে ফেলুন। চোখের চারধারে ক্রিম লাগিয়ে কখনও শুয়ে পড়বেন না। চোখের কোণ ফুলে যাবে। ত্বক খুব শুষ্ক প্রকৃতির হলে ক্রিম লাগানোর পর হালকা ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগাতে পারেন। না হলে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর দরকার নাই।
তৈলাক্ত ও মিশ্র প্রকৃতির ত্বক : তৈলাক্ত ত্বকে নারিশিং ক্রিম ব্যবহার করবেন না। কারণ এতে ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়ে যাবে। লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাবে। হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। মিশ্র প্রকৃতির ত্বকের শুষ্ক অংশে নারিশিং ক্রিম লাগাতে পারেন।
হাত, পা ও ঠোঁটের যত্নে : ঘুমাতে যাওয়ার আগে নখের ওপর ময়েশ্চারাইজার ম্যাসাজ করুন। নখ মসৃণ থাকবে। নখের কিউটিকল ড্যামেজড হলে ভিটামিন ই অয়েল, অলিভ অয়েল বা সুইট আমন্ড অয়েল দিয়ে নখ ম্যাসাজ করুন। হালকা গরম পানিতে হার্বাল শ্যাম্পু মিশিয়ে পা বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। ভাল করে পামিস স্টোন দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে পারলে ভাল। তারপর ফুট লোশন দিয়ে ম্যাসাজ করুন, গোড়ালি, আঙুলের ফাঁকে। পায়ের পাতার নিচের অংশে ম্যাসাজ করুন। হাতের তালু বা পায়ের পাতা রুক্ষ হলে পেট্রোলিয়াম জেলি বা কোকোয়া বাটার দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। নরম কাপড় দিয়ে ঠোঁট ঘষুন। তারপর পেট্রোলিয়াম জেলি বা লিপবাম লাগান।
নাইটক্রিম কেন লাগাবেন : নাইট ক্রিম আসলে এক ধরনের নারিশিং ক্রিম। স্বাভাবিক ও শুষ্ক প্রকৃতির ত্বকের জন্য নাইট ক্রিম আদর্শ। তবে তৈলাক্ত ত্বকে বা যাদের ত্বকে ব্রণের সমস্যা আছে তারা নাইটক্রিম ব্যবহার করবেন না। শুষ্ক প্রকৃতির ত্বকে সইজেই বয়সের ছাপ পড়ে। বয়সের ছাপ রুখতেও নাইটক্রিম সাহায্য করে। নাইটক্রিম ত্বক মসৃণ ও সতেজ রাখে। এর পাশাপাশি নাইটক্রিম স্কিন ও ফেশিয়াল মাসলস টোনড রাখে, স্ক্রিনের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে এবং ত্বকের স্বাভাবিক কার্যকলাপে সাহায্য করে। ভিটামিন ই বা রেটিনাল সমৃদ্ধ নাইটক্রিম লাগান।
সানস্ক্রিন : বাজারে নানা ধরনের ক্রিম, লোশন, জেল, পাউডার বেরিয়েছে যা ত্বককে রোদের হাত থেকে বাঁচায়। বাজারে ইদানিং নানা কোম্পানির সানব্লক পাবেন যার উপরে লেখা থাকে কতটা এসপিএফ দেয়া আছে। এফপিএফ অর্থাৎ সান-প্রোটেকশান ফিল্টার ১৫ হলেই যথেষ্ট। তবে আজকাল এফপিএফ ২০, ৩০, ৪০ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সানব্লকে আবার ভিটামিন-ই এবং আরও অনেক উপাদান থাকছে যা ত্বকের পক্ষে উপকারী। কিছু কিছু কসমেটিকস যেমন- ফাউন্ডেশন, মুজ, লিপস্টিক, চেপিস্টিক ইত্যাদিতে আজকাল এসপিএফ দেওয়া থাকে। যেগুলো দিনের বেলায় ব্যবহার করলে রোদের প্রখর তেজ থেকে বাঁচবেন। বাইরে বের হবার অন্তত আধঘন্টা আগে সানব্লক লাগাবেন। সারাদিন আরও দু’একবার লাগালে হয়। প্রত্যেকবার মুখ পরিষ্কার করে সানব্লক লাগানো ভাল।
এমএইচ মিশু
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ২১, ২০০৯
Leave a Reply