কয়েক বছর ধরেই ঘর সাজানো অর্থাৎ বসতবাড়ির ইন্টেরিয়রে প্রাধান্য পাচ্ছে দেশীয় ও লোকজ উপাদানগুলো। যেমন জানালায় বাঁশের শিক, নামফলকে দামি টাইলসের পরিবর্তে টেরাকোটা, কার্পেটের বদলে শতরঞ্জি যেন অনেক বেশি স্বতন্ত্র। এ ধরনের পরিবর্তন যেন আমাদের জাতীয় চেতনার মূল্যবোধকে সচেতন করে। তাই এখন অনেক অভিজাত বাড়িতেই ক্রিস্টালের শো-পিসের জায়গা কেড়ে নিয়েছে টেরাকোটার মটকা।
মাটির পটারিতে ঘর সাজানো যেন বাঙালিয়ানারই বহিঃপ্রকাশ। আর এই পটারিও তাই বাজারে আসছে নানা আঙ্গিকে-কখনো পালপাড়ার একহারা লাল গড়নে, আবার কখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে পুড়ে অজন্তা-ইলোরার টেরাকোটার ঢঙে। কখনো এই পটারির গায়ে চড়ছে সোনালি কিংবা রুপালি রং আবার কখনো সাদা, কালো বা অন্যান্য রং। এই ধরনটা চলল বেশ কিছুদিন। এখন আবার শৌখিন বাঙালির পছন্দ, পটে যেন ছবি আঁকা থাকে। এ ধরনটা শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি।
মাটির পটারিতে ছবি এঁকে তাতে ভিন্নতা এনেছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রুমানা আফজাল খান। পটারিতে এনামেল পেইন্টে নানা রকম ছবি আঁকেন তিনি। আঁকাআঁকিতে বরাবরই তাঁর আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। সেই সঙ্গে পটারিতে আঁকাআঁকি তো বটেই। আর তাই পটারি নিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে আয়োজন করেছিলেন একটি প্রদর্শনীর। তবে এ জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেননি তিনি। স্রেফ কল্পনা আর সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন দারুণ সব পট। রুমানা পটারিতে আঁকাআঁকি করেন অনেক দিন ধরেই। সেই সঙ্গে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের বিদ্যাটা কাজে লাগিয়ে ঘরের বিভিন্ন স্থানে পটারি দিয়ে ঘর সাজানোর বুদ্ধি দিতেও তাঁর জুড়ি নেই। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ে ডিপ্লোমা করা রুমানা মনে করেন, পটারি ব্যবহার করে ঘরের অন্দরসজ্জায় যেমন বৈচিত্র্য আনা যায়, তেমনি এটি অনেক বেশি প্রশংসনীও বটে!
রুমানা মনে করেন, ঘরে ঢুকতেই সব বাড়িতে সাধারণত দেয়ালঘেরা করিডর অথবা আপাত খোলামেলা জায়গা দেখা যায়। সেখানে একটা মাটির ফ্রেমের আয়না বসিয়ে দিলে বেশ ভালো লাগবে। আবার ছোট ছোট অনেক ধরনের কর্নার দেখা যায় বসার ঘর, খাবার ঘর, বারান্দা অথবা শোয়ার ঘরেও। এসব কর্নারে ছোট ছোট পট পর্দা, চাদর বা সোফাসেটের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে রং করে অথবা একদমই মাটির রঙে রাখা যেতে পারে। আবার বড় মটকায় সুন্দর করে পেইন্টিং করে তার ওপর গোল করে গ্লাস দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে বসার ঘরের কর্নার টেবিল। আবার একইভাবে ছবি এঁকে রঙের সঙ্গে মিলিয়ে একটা শেড কিনে তৈরি করা যায় ল্যাম্পশেড। এভাবে নানা রঙে এঁকে পটারিকে ঘরের সৌন্দর্যে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন রুমানা।
পটারিতে রঙের ব্যবহার বহুমাত্রিকতা যোগ করেছে বলে মনে করেন রুমানা। কারণ পটারি দিয়ে ঘর সাজানোর বিষয়টি তো প্রতিষ্ঠিত। এবার তাতে রং দিয়ে একটু নতুনত্ব এনে শুরু হয়েছে আরেকটি নতুন ধরন। আর তাই রুমানার পরামর্শ হলো, রঙিন পটারি কেনার সময় অবশ্যই ঘরের অন্যান্য জিনিসের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিনতে হবে। অথবা বৈপরীত্য আনে এমন ধরনের পটারিও কেনা যায়। এ বছরের শেষ নাগাদ একটি পটারি প্রদর্শনীর আয়োজন করার ইচ্ছা আছে রুমানার। তাঁর পটারি পাওয়া যাবে ৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। কেউ চাইলে পটারির সঙ্গে অন্দরসজ্জার কাজটিও করিয়ে নিতে পারবেন। আবার পছন্দমতো রঙে এবং কী ধরনের পটারি হবে, তা বলে দিলে সেভাবেই তৈরি হয়ে যাবে রঙিন পটারি। যোগাযোগঃ ০১৭২৭৩৮১৩৪৪ ও [email protected]
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২১, ২০০৯
Leave a Reply