আকারে ছোট বলে ল্যাপটপের আরেকটি নাম আছে-নোটবুক। আর ছোট দেখেই এটিকে সব সময় সঙ্গে নিয়ে ঘোরা যায়। কিন্তু কাজের স্বার্থে এটি সঙ্গে নিয়ে যখন বের হবেন, তখন একে কোলে নিয়ে বা বগলদাবা করে অফিসে যাবেন, তাই কি হয়! ল্যাপটপের সঙ্গেই অবশ্য ব্যাগ পাওয়া যায়। তবে ওতে শুধু ল্যাপটপটাই রাখা যায়। মোবাইল ফোন, ডায়েরি-দরকারি আরও কিছু জিনিসপত্র বহনের জন্য চাই আরও ব্যাগ। এত ব্যাগ বয়ে বেড়ানোর দরকার কি! এক ব্যাগেই যদি সব এঁটে যায় তবে তা ভালোই হয়।
সেই ব্যাগও কিন্তু যেনতেন হলে চলবে না। ব্যাগটা হওয়া চাই ষোল আনা কাজের এবং স্টাইলিশ। ভাবছেন, ব্যাগ তো ব্যাগই, তার আবার স্টাইল কি! এই সময়ে নেহাতই ‘কাজের জিনিসে’ও চাই একটু স্টাইলের ছোঁয়া। আর পোশাকের সঙ্গে ব্যাগটিই কিন্তু আপনার আপাদমস্তক ব্যক্তিত্ব ও রুচিবোধের পরিচায়ক। তাই আপনার রোজকার দরকারি যন্ত্রপাতি বা অন্য জিনিসপত্র ব্যবহারের জন্য সব দিক দিয়ে উপযুক্ত একটি ব্যাগই কিন্তু হয়ে উঠতে পারে আপনার ভ্রাম্যমাণ কাজের জায়গা।
মেয়েদের জন্য···
বাংলাদেশে এখন বেশ ভালোভাবেই গড়ে উঠেছে করপোরেট সংস্কৃতি; তাতে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও জড়িয়ে পড়ছে সমান তালে। অফিসে ল্যাপটপ নিয়ে যেতেই হয়, আর তখনই পোশাকের সঙ্গে মানানসই ব্যাগ খুঁজে পেতে মেয়েরা বেশ সমস্যায় পড়ে। চশমার সঙ্গে যেমন খাপ দিয়ে দেওয়া হয়, তেমনি ল্যাপটপ রাখার ব্যাগও এর সঙ্গেই দিয়ে দেওয়া হয়; আলাদা করে কিনতে হয় না। আয়তাকার এই ব্যাগগুলো সাধারণত কালো, ধূসর বা বাদামি রঙের এবং ভারী হয়ে থাকে। মেয়েদের হাতে এই ব্যাগগুলো একটু বেমানানই লাগে।
বিজ্ঞাপনী সংস্থা টপ অব মাইন্ডের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপক সামিয়া আফরিন ল্যাপটপের সঙ্গে পাওয়া ব্যাগগুলো সম্পর্কে বলেন, ‘ফরমাল প্যান্ট-শার্টের সঙ্গে এই ব্যাগগুলো একটা করপোরেট লুক দিলেও শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে যখন এই ব্যাগে ল্যাপটপ নিই, মাঝে মাঝে বেশ বিব্রতই লাগে। ভাবি, ল্যাপটপের জন্য স্টাইলিশ ব্যাগ হলে মন্দ হতো না।’
শুধু করপোরেট দুনিয়াই নয়, অনেক পেশাজীবী মেয়েরা ব্যবহার করেন ল্যাপটপ, পিডিএ ইত্যাদি যন্ত্রপাতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শারমিন জাহানও সামিয়ার মতোই ভাবেন। শুধু ল্যাপটপ নয়, নিজের ও ক্লাসের বক্তৃতার প্রয়োজনে কাগজপত্র, বই প্রভৃতিও নিতে হয় তাঁকে সেই ব্যাগে। ক্যাম্পাসে পরেন সালোয়ার-কামিজ, এর সঙ্গে পুরুষালি ব্যাগটা খাপ খায় না বলে আলাদা ব্যাগ কিনেছেন তিনি। ‘ল্যাপটপ রাখার জায়গা আছে বলেই সেটি কেনা। কয়েক দিনের জন্য ঢাকার বাইরে বেড়াতে গেলে টুকটাক জিনিসপত্র ল্যাপটপের সঙ্গে এই ব্যাগের পকেটেই নিয়ে নিই’, বললেন তিনি। যাবতীয় জরুরি জিনিস মেয়েরা ব্যাগেই রাখেন বিধায় সব সময়ই ব্যাগ মেয়েদের ভীষণ দরকারি এক অনুষঙ্গ। ল্যাপটপ যদি নিতেই হয়, তাহলে একই সঙ্গে ল্যাপটপের ব্যাগ যাতে হাতব্যাগের কাজও করে আর দেখতেও ভালো হয়, সে রকমটি হলেই সুবিধা।
পাবেন হরেকরকম ব্যাগ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ইশতিয়াক। বললেন, ‘বইখাতার সঙ্গে ক্যাম্পাসে ল্যাপটপ নিই বলে পিঠে ঝোলানোর বড় ব্যাগ আনিয়েছি বিদেশ থেকে। নন-ব্র্যান্ড এই ব্যাগের দামই পড়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন হাজার ৫০০ টাকা, এর সঙ্গে পাঠানোর খরচ তো রয়েছেই। ব্র্যান্ডের ব্যাগ দেশেই পেলে দেখেশুনে কিনতে সুবিধা হতো।’
বেশ দাম দিয়ে কেনা শখের ল্যাপটপের জন্য আরও কিছু টাকা দিয়ে ব্যাগ কিনতে অনেকেরই আপত্তি নেই।
ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে এসব ব্যাগ পাওয়া যায়।
সম্প্রতি ঢাকার বাজারে আসা ব্র্যান্ড টারগাস ব্যাগের আমদানিকারক কম্পিউটার সোর্সের বিক্রয় বিভাগের পরিচালক এ ইউ খান বলেন, ‘অনেক সময় ল্যাপটপের সঙ্গে দেওয়া ব্যাগগুলো দেখতে আহামরি কিছু হয় না। আবার ল্যাপটপটা অনেক দিন থেকে যায়। ব্যাগটা অনেকে অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করে পুরোনো করে ফেলেন। নতুন করে আলাদা ব্যাগের প্রয়োজন হয় তখন।’
একমাত্র অ্যাপল ছাড়া যেকোনো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের সঙ্গেই থাকে ব্যাগ। এই অ্যাপলের বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপের জন্যও ব্যাগ তৈরি করে টারগাস। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশার নানা বয়সের ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে হরেক রকম ব্যাগ আছে টারগাস ব্র্যান্ডের।
ল্যাপটপের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে প্রতিটি ব্যাগের প্রতিটি খাপে বিশেষ ধরনের কুশন, প্যাড ও শক অ্যাবজরবেন্ট ফোম রয়েছে, যাতে চলাফেরার সময় বাড়ি খেলেও আপনার ল্যাপটপটি ব্যাগের মধ্যে থাকবে সম্পূর্ণ নিরাপদ। স্ক্রিন এ আঁচড় পড়ার ভয়ও নেই এতে। পলিস্টার, কসকিন, নাইলনের তৈরি এই ব্যাগগুলো ধোয়াও যায় বলে আমাদের এই রোদ-বৃষ্টি-ধুলো-কাদার দেশের জন্য বেশ উপযোগী। একটা ল্যাপটপের ওজন হতে পারে সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন কেজি। এর সঙ্গে আরও ওজন বয়ে নেওয়ার সুবিধার্থে তাই কাঁধে ঝোলানোর স্ট্র্যাপেও আছে নরম প্যাড।
কোন ল্যাপটপ, কেমন ব্যাগ
এ দেশে বর্তমানে যেসব ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর স্ক্রিন দৈর্ঘেø সাধারণত ৮·৯ থেকে ১৭ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে মাঝামাঝি ১২ ও ১৩·১০ ইঞ্চি স্ক্রিনের ল্যাপটপই এখন বেশি জনপ্রিয়। ল্যাপটপের ব্যাগে সর্বোচ্চ কত ইঞ্চি পর্দার মনিটর আটবে, তা নির্দিষ্ট করা থাকে। ব্যাগ কেনার সময় এই সর্বোচ্চ স্ক্রিনের উল্লিখিত মাপটি দেখে নেবেন। আপনার স্ক্রিনটির সমান বা তার চেয়ে বড় মাপের ব্যাগ কিনতে পারেন, কিন্তু ছোট কিনবেন না। কারণ ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটরের জন্য ব্যাগ মানে, এতে সর্বোচ্চ ১৫ ইঞ্চি বা তার চেয়ে ছোট, যেমন-১৪ ইঞ্চি স্ক্রিনের ল্যাপটপ অনায়াসে ঢুকে যাবে, কিন্তু ১৫·৪ ইঞ্চির পর্দা আটবে না।
ব্র্যান্ডের ব্যাগে ট্রেন্ডি লুক
ল্যাপটপের জন্য কেমন ব্যাগ কিনবেন, তা ঠিক করুন কোন পরিবেশে আপনি ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, কেমন পোশাক আপনাকে পরতে হয়, আপনার বয়স ও ব্যক্তিত্ব-সবকিছু বিবেচনা করে। নারীরা ল্যাপটপের ব্যাগ নির্বাচনের সময় সর্বাগ্রে আপনার পরিচ্ছদের কথা বিবেচনা করুন। পুরুষালি চেহারার ল্যাপটপ ব্যাগগুলো করপোরেট নারীদের ফরমাল শার্ট-প্যান্টের সঙ্গে মানায় বটে, তবে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে একেবারেই নয়। সে ক্ষেত্রে অফিসে ও ক্যাম্পাসে হাতব্যাগ স্টাইলের ল্যাপটপ ব্যাগগুলো তিন ধরনের পোশাকের সঙ্গেই মানানসই বলে সেটাই কেনা সমীচীন হবে। রংচঙে নয়, বরং কালো, খয়েরি, বাদামির মতো মার্জিত রঙের ব্যাগের ব্যবহার আপনাকে দেবে আভিজাত্য। ভেতরে অনেক জায়গা ও পৃথক খোপ আছে এমন ব্যাগ কিনুন, যাতে খুঁটিনাটি অনেক কিছুই নিতে পারেন একটিমাত্র ব্যাগে।
করপোরেট পুরুষেরা একদম কেজো চেহারার ব্যাগগুলো সব জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন। পিঠে ব্যাকপ্যাক নিয়ে তরুণেরা ক্যাম্পাসে নজর কাড়তে পারেন সবার। তবে ল্যাপটপ নিয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে-উভয়েই লাগেজ ব্যাগ, রোলার ব্যাগ বা কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগ ব্যবহার করুন।
ব্যাগ নেওয়ার স্টাইলেও নিজেই হয়ে উঠতে পারেন ট্রেন্ড সেটার। মেয়েরা হাতে ব্যাগ ঝুলিয়ে হয়ে উঠুন অনবদ্য। ছেলেরা মাথার ওপর দিয়ে এক কাঁধে স্ট্র্যাপ নিয়ে আরেক দিকে ব্যাগ ঝুলিয়ে দিন; দেখুন, কেমন চটপটে আর সাবলীল দেখাচ্ছে আপনাকে।
জেনে নিন
নানা রকম কাজ আর পেশার জন্য কয়েকটি সিরিজে ব্যাগ আছে।টারগাসের ব্যাগের দাম তিন থেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এ ছাড়া ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে বাটা, প্রেসিডেন্ট, পোলো ইত্যাদি।
ব্র্যান্ডের ব্যাগ ছাড়া চাঁদনী চক ও নিউমার্কেটে কিছু ব্যাগ পাবেন, যাতে ল্যাপটপ রাখার মতো জায়গা থাকে; তবে এগুলো নির্দিষ্টভাবে ল্যাপটপের ব্যাগ নয় বলে ভেতরে চারদিকে নিরাপত্তাবিধায়ক ফোম বা কুশন থাকে না। তাই ল্যাপটপ বহনের উদ্দেশ্যেই যে ব্যাগগুলো তৈরি হয়, তেমন ব্র্যান্ডের ব্যাগ ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়।
ফারাহ শাম্মা
সহযোগিতাঃ পারসোনা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৪, ২০০৯
Leave a Reply