রঙের বর্ণিলতায় নীলের জনপ্রিয়তাটা আকাশচুম্বী। আকাশের চাঁদোয়া নীল বলেই হয়তো বিশালতার উপমায় ঠাঁই হয়েছে নীলের। এ নীল শুধু জাগতিক বাস্তবতাকেই নয়, ক্ষণে ছুঁয়ে যায় স্বপ্নিল পরাবাস্তবকেও। রঙধনু বুকে নিয়ে নীল আকাশ যেমন ধরত্রীতে রঙের বর্ষণ ঘটায় তেমনি আমাদের মানব জীবনেও নীলের ছোঁয়া বয়ে আনে স্নিগ্ধ সুখের পরশ। প্রকৃতির পরম উপহার ছয়টি ঋতুই আসে রঙের ভিন্নতা নিয়ে। আর এর মাঝে বর্ষার কাছেই খুঁজে পাওয়া যায় প্রিয় নীলের সান্নিধ্য। ঝমঝম নির্লিপ্ত বর্ষা ঝরা দিনে একফালি নীল বুঝি না হলেই নয়। বৃষ্টি ধোয়া আকাশ চাঁদোয়ার যখন হেসে ওঠে হৃদয়গ্রাহী নীলে নিপুণ খুনসুটি, তখন যাপিত জীবনে নেমে আসে স্বস্তির আঁচ। কাঁদা ধোয়া গ্রাম-কিশোরীর কাছে নীল পাড়ের একখানা শাড়ি হয়তো উপাসনার বস্তু, কিন্তু শহুরে তরুণী এই বর্ষায় ঠিকই বেছে নেন তথাকথিত ক্রিয়েটিভ ফ্যাশন কিংবা নান্দনিক স্টাইলের কোনো বসন। বৃষ্টি দিনে এই নীলের খেলা নিয়েই আমাদের কড়চার এবারের মূল ফিচার লিখেছেন এমএইচ মিশু
বর্ষার স্নিগ্ধতা নগর জীবনকে যতটা ছুঁয়ে যায়, তার থেকে অনেক বেশী ছুঁয়ে যায় গ্রাম বাংলাকে। সেখানে বর্ষা মানের খাল বিলে নতুন পানি। সবুজ জলের সন্তরণে ভেসে উঠে নীল আকাশের ছবি। আর শহর জীবনে বর্ষার বর্ষণ হয়তো ব্যস্ত জীবনে কিছুটা ছন্দপতন আনে। কিন্তু ফ্যাশন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ভাসে বর্ষার স্নাত নীল রঙের ভেলা। নীল শুধু পোশাকে নয়, ভরা বর্ষায় নীল ছুঁয়ে যায় সবকিছু।
ফ্যাশন অঙ্গে নীল বার্তা
বর্ষা এলেই নীলের প্রভাব খুজে পাওয়া যায় ফ্যাশন হাউসগুলোতে। দেশের নামকরা সব ফ্যাশনহাউসগুলো বর্ষা এলেই সব নীল পোশাকের ভাজ খুলতে শুরু করে। আর সেই সুবাদে বর্ষা জুড়ে ফ্যাশনে নীলের প্রভাবটা লক্ষণীয়। সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এযুগের বাঙালীরা এখন রঙ আর ঋতু সচেতন। আর তাই বর্ষার পোশাক মানেই নীল গ্রহণ। মেয়েদের জন্য বর্ষার জন্য বিশাল একফালি নীল আচল হয়ে উঠতে পারে ফ্যাশনের সেরা অনুষঙ্গ। সাথে মানানসই টিপ কিংবা খোপায় ফুলেল সাজ মানিয়ে যাবে যেকোনো বর্ষার বিকেলে। শাড়ির বদলে নীল কামিজও মানাবে দারুণ। বর্ষায় সাধারণত সুতির আধিক্যতাই একটু বেশী থাকে। তবে এসময় সফট সিল্ক, ধুপিয়ান, মসলিন এসব কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন। যে কাপড়ই গায়ে জড়ান না কেন, মনে রাখবেন আমাদের দেশে বর্ষা কিন্তু খুব ঠান্ডা পরিবেশ বয়ে আনে না। বরং অনেক সময় আবহাওয়াটা একটু ঘোলাটে গরমের জন্ম দেয়। আর তাই পোশাকে কোনো ভারি কাপড় আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিতে পারে। নীল কামিজে একটু স্নিগ্ধ ভাব খুঁজে বের করুন। সাথে গয়নাগাটি খুব ভারি ব্যবহার করবেন না। আর জুতা এমন ভাবে নির্বাচন করুন যেন কার্দমাক্ত পথে মাড়াতে আপনাকে জুতো জোড়া বগলদাবা করতে না হয়। তরুণ তুর্কীরা এই বর্ষায় জিন্সের সাথে পড়তে পারেন ফতুয়া। আপনার প্রিয় নীল জিন্সটি নিঃসন্দেহে এই বর্ষায় হয়ে উঠবে আপনার প্রিয় পোশাক। বর্ষায় নীল জিন্সের সাথে নীলের কোনো ভিন্ন শেডের ফতুয়া ব্যবহার করুন। সাথে কনর্ভাস কিংবা যেকোনো ক্যাজুয়াল স্নিকার্স মানিয়ে যাবে দারুণ।
ছেলেদের জন্য বর্ষার ফ্যাশনের নীল উঠে আসে শার্ট, পাঞ্জাবী কিংবা ফতুয়ায়। বর্ষায় শার্টে শুধুই নীল রাখতে পারেন। কিংবা কোনো ট্রাইবাল টেক্সচারের নীল শার্ট আপনার স্মার্টনেসের পাশাপাশি আপনার রুচিরও বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। বর্ষায় এমন কিছু ফতুয়া ব্যবহার করুন যেগুলো ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করবে আর সেই সাথে নীলের ছোয়া এনে দেবে প্রশান্তি। শার্ট ফতুয়ার বাইরে ছেলেরা বর্ষায় নীল শেডের টিশার্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটু ভিন্ন লুক আনতে ক্যাজুয়াল স্নিকার্সের সাথে সাদা প্যান্ট আর উপরে কোনো নীল শার্ট কিংবা টিশার্ট পড়ুন, দেখবেন এই বর্ষায় সবার নজর আটকে যাবে আপনার দিকেই।
জীবন ধারায় বর্ষা নীল
শুধুই পোশাক আর ফ্যাশনে নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও বর্ষা আসে যেন নীল বার্তা নিয়ে। প্রিয় মানুষটির কাছে লেখা চিঠিটা যখন সযতনে ঠাঁই নেয় নীল খামে তেমনি প্রেয়সীর নীল আচল কিংবা জানালা জুড়ে নীল পর্দার এক দৌঁড় মনে করিয়ে দেয় বাইরের ভেজা বর্ষার বৃষ্টি কথা। তাই জীবনের প্রতিটি পরত বুঝি ভেসে যায় বর্ষা নীলে। ঘরের কোনায় ছোট্ট কুশন কভার থেকে শুরু করে বিছানা চাদর, পর্দা এসবেও নীলের ব্যবহার বর্ষাকে আরো বেশী উপভোগ্য করে তুলবে। তাই এমন করে সাজিয়ে তুলুন আপনার অন্দরকে। বর্ষায় অন্দর সাজাতে এমন কিছু উপাদান সাজানে যেগুলো আপনার পুরো পরিবেশটাকে অনেক বেশী নীলাভ করে তুলবে। যদি ঘর ছোট হয় তাহলে এক রঙা নীল পর্দা ব্যবহার করুন। আর বড় ঘরের জন্য নীলের কোনো ছাপাও মানিয়ে যাবে বেশ। কুশন কভারগুলোতে নীল ভাবনাটা রাখতে চেষ্টা করুন। এমনকি আপনার গাড়িতেও এমন ২-৩টা নীল কুশন থাকলে দারুণ মানাবে। বিছানার চাদরে নীল অথবা নীল সাদা মিশেল রাখুন। আর খাবার টেবিলে রাখুন নীল রঙা ন্যাপকিন। দেখবেন এই বর্ষায় বর্ষা আপনাকে আলিঙ্গন করবে নীল চাদরে জড়িয়ে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ১৪, ২০০৯
Leave a Reply