সময়ের কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আসলেও এই বর্ষায় সময় জ্ঞান নেই আকাশ বাবুর। আর ঠিক নেই তার মেজাজ মর্জির। তাই মেঘের সঙ্গে সারাদিন খেলা করে ক্লান্ত হয়ে উঠে সূর্যের মন। যখনই বিষাদ ভর করে তার মন জুড়ে তখনই নেমে আসে বৃষ্টির চাদর। কখন নামবে তার কিন্তু কোন ঠিক নেই। সকালে জানালা খুলে সূর্যের আলোর বদলে চোখ ভেসে যায় বৃষ্টির জলে। আর এই বাস্তবতাতেই আষাঢ় জুড়ে প্রাধান্য পায় বৃষ্টি ভাবনা। শুধু রোমান্টিকতায় নয় বরং এই বৃষ্টিতে আর এই বর্ষায় বাস্তবতাও অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। জীবনযাত্রা যায় বদলে। বদল হবার সেই সময় নিয়ে লিখেছেন মোর্শেদ নাসের টিটু
আষাঢ়ের শেষ ভাগে এসে বৃষ্টি যেন খুঁজে পায় তার আসল রূপ। ছড়াকাব্যের একজন হয়ে বৃষ্টি শুধু ঝরেই যায় যেন থামতে জানে না। এই অবিরাম বৃষ্টি বাদনে আপনারও থাকা চাই একটু বিশেষ প্রস্তুতি। যেমন বৃষ্টির দিন শুরু হওয়া মানেই আপনার প্রতিদিনের তালিকায় ছাতা, রেইনকোট, গাম বুট ইত্যাদি নানা শব্দগুলো ঠাঁই করে নেয়। পথ চলতে হঠাৎ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে খুবই প্রয়োজন ছাতা। কারণ বৃষ্টি আপনার মনে যতটাই রঙের সঞ্চার করুক না কেন বৃষ্টির অযুহাত দিয়ে অফিসে যাওয়া, বাজার করা, প্রতিদিনের কাজ সারা, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ কোন কিছুই বাদ দেয়া যায় না। তাই এই সময়ে নিজেকে পরিবেশের সঙ্গে আপডেট করে নিতে প্রয়োজন ছাতার। বাজারে নানা দামে নানা ব্র্যান্ডের ছাতা পাওয়া যায়। আপনার রুচি আর বাজেটের সঙ্গে মিল রেখে অফিসের ব্যাগে কিংবা পথচলায় হাতের মুঠোতে ধরে রাখুন প্রয়োজনীয় ছাতাটি। মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে মেলে ধরুন তার অস্তিত্ব। চেষ্টা করুন ফোল্ডিং ছাতা ব্যবহার করতে যাতে যখন বৃষ্টিদেবী তার জল ছড়াবে না তখন যেন আপনার স্মার্টনেসে কোথাও ঘাটতি না থাকে।
যারা বাইক চালান কিংবা ছাতাকে বন্ধু মনে না করেন তাদের জন্য বিকল্প হতে পারে রেইনকোট। নানা রঙের বাহারি ডিজাইনের বাজারে চমৎকার সব রেইনকোট পাওয়া যায়। তবে যথার্থ কার্যকারিতা আছে এমন ডিজাইনই বেছে নেয়া উচিত শুধু স্টাইলের জন্য রঙীন চটকদার কিছু নয়। আবার বৃষ্টির দিনে রাস্তায় বেরুলে কাদার সঙ্গে মাখামাখি হবার সম্ভাবনা থাকে পা যুগলের। সেই বিবেচনায় এই সময়ে শখের জুতা নয় বরং সময়কে ধারণ করে এই চিন্তায় রাবার বা প্লাষ্টিকের জুতা বেছে নিতে হয়। মনে রাখতে হবে র্যাক্সিন, রাবার বা প্লাস্টিকের জুতাগুলো বর্ষাবান্ধব হয়। তাই বৃষ্টির দিনগুলোতে জুতা ফোবিয়ায় না ভুগে বর্ষার তালিকায় সংযোজন করুন বৃষ্টি প্রতিরোধক জুতা। এ তো গেল বৃষ্টিকে বরণ করার প্রস্তুতি। অন্যদিকে পোশাকেও থাকা চাই বর্ষার বহিরঙ্গ আর অন্তরঙ্গকে মিলিয়ে নেবার চেষ্টা। বৃষ্টির দিন এলেই অনেকেই ভাবনায় পরেন কেমন ধরনের পোশাক সঙ্গী হবে আপনার। এ সময়ে জর্জেট, সিল্ক কিংবা সিনথেটিক কাপড়ই বেশি আদর্শ হয়। কেননা এই ধরনের কাপড়গুলো ভিজে গেলে দ্রুত শুকিয়ে যায়। পাশাপাশি কাদাধরা কিংবা বর্ষার জলে দূর্গন্ধ তৈরি হওয়া এই কাপড়গুলো কম হয়। তাই এই ধরনের কাপড় বর্ষায় আপনার স্টাইলে স্থান পেতে পারে। পাশাপাশি সুতি কাপড়ও যদি খুব বেশি ট্রান্সপারেন্ট না হয় তবে সঙ্গী হতে পারে। আর রঙের ক্ষেত্রে নীল, হালকা আকাশী, সবুজ, এ্যাশ, ব্ল্যাক কিংবা গোলাপী হতে পারে ট্রেন্ড সেটার। পোশাকের পাশাপাশি বৃষ্টির দিনগুলোতে মেকআপ সামগ্রী যেন ওয়াটার প্রুফ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। মনে রাখবেন বৃষ্টি আপনার মেকআপকে গোসল করিয়ে দিতে পারে। তাই তার উপাদানগুলো যেন সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে তার প্রস্তুতি আপনাকেই নিতে হবে। বৃষ্টির দিনে হালকা মেকআপ নেয়া জরুরি। চেষ্টা করুন মেকআপ নেয়ার আগে বরফ দিয়ে মুখ ঘষে নিতে। এতে মেকআপের পরে ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এই সময়ে ত্বককে পানি শূণ্যতা থেকে মুক্ত রাখতে ওয়াটার বেইজড মশ্চারাইজার দেয়া জরুরি। আর ক্রিম জাতীয় ফাউন্ডেশন ও প্যান কেক ব্যবহার করতে হয়। চোখ সাজানো আইলাইনার ও মাশকারাটি যেন ওয়াটার প্রুফ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। না হলে বৃষ্টি শেষে পথঘাটের মতো আপনিও যাবেন পুরোপুরি ধুয়ে। এ সময়ে চুল বেঁধে রাখা সাধারণ সতর্কতার মধ্যেই পড়ে। পাশাপাশি এ সময়ে চুলের যত্ন নেয়া বিশেষ করে বৃষ্টি শেষে ঘরে ফিরে দ্রুত চুল শুকিয়ে নেয়া জরুরি। পাশাপাশি রয়েছে ঘরের আসবাবপত্র আর অন্যান্য উপকরণগুলোকে বর্ষার এই দ্বিমাত্রিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। যত্নআত্তির সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এবারের কড়চা’য় যেমন থাকতে পরামর্শ তেমনি বর্ষার আগামী দিনগুলোতে তা আরো ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে আমাদের পরবর্তী আয়োজনে।
সাধারণ এই সতর্কতার পাশাপাশি অনেক সময়ই আপনার মন বাঁধা না মেনে বৃষ্টির জলে ভিজতে আকুল হয়ে উঠতে পারে। নিজের স্বাস্থ্যসচেতন মনকে তখন জাগ্রত করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন সর্দি, কাশি, জ্বর আর এ্যাজমা এসময়ে নিজেদের হাত অনেক বেশি ছড়িয়ে দেয়। তাই এই সময়ের রোগবালাই সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। পথে ভিজে গেলে ঘরে ফিরেই প্রথমে পুরো শরীর ও মাথা মুছে নিন। ঠান্ডার ধাত না থাকলে পরবর্তীতে গোসল করে নিতে পারেন।
এভাবে নিজের মনকে যদি বর্ষা বন্দনা থেকে দূরে রাখতে না পারেন তবে একসময় খানিকটা ভিজেই নিন এই বর্ষার জলে। কেননা আপনার ভেতর যে কবিমন বসবাস করে সবসময় তাকে বঞ্চিত করাও ঠিক নয়। এই বর্ষায় ভিজে জলের তোরে যে সুখ আপনি পাবেন তা তো আষাঢ় শেষেই শুধু শ্রাবণের অপেক্ষায় বসে থাকে। তার পরে আর নয়। তাই প্রস্তুতির কথা ভুলে গিয়ে আপনিও মেতে উঠতে পারেন বর্ষার জলে। তবে ঘরে ফিরে মনকে আবার নিয়ে যান চেতনার আবরণে যেন এই কবিসত্ত্বা আপনাকে না ভোগায়।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ০৭, ২০০৯
Leave a Reply