বহুদিন ধরে দেখছি, দুটি গাছ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। একটি গাছে প্রতিবছরই ফুল ফোটে, অন্যটি ফুলশূন্য। গাছ দুটির প্রকৃতি এমন-এরা খুব সুখী প্রকৃতির গাছ, আরাম-আয়েশ খুব পছন্দ। পরিচ্ছন্ন থাকতে এরা ভীষণ পছন্দ করে-একটু যত্ন-আত্তি, ভালোবাসা চায়; কিন্তু এখানে গাছ দুটি অনেকটা অবহেলিত। রোদ এদের তেমন পছন্দ নয়, আবার অল্প-স্বল্প না হলেই নয়। সকালে এদের গায়ে রোদ লাগা চাই-ই চাই; অথচ পাশের সালাউদ্দিন হাসপাতাল এদের সেই পাওয়া থেকে বঞ্চিত রেখেছে। বহুতল ভবনের উচ্চতার জন্য রোদ এদের পাশ কেটে চলে যায়। গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকা একেবারেই চলবে না; অথচ প্রায় সময়ই দেখা যায়, জমে আছে পানি। পরিচর্যার অবহেলার কারণেই গাছ দুটির এমন হতশ্রী অবস্থা। আদুরে এ গাছ দুটির নাম পোর্টল্যান্ডিয়া; ক্যারিবীয় অঞ্চলের গাছ।
জ্যামাইকার পোর্টল্যান্ড অঞ্চলের সাবেক সম্ভ্রান্ত বিধবাদের সম্মানে এর নামকরণ পোর্টল্যান্ডিয়া। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড· ব্রাউন ন্যাচারাল হিস্টোরি অব জ্যামাইকা গ্রন্থের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি এই সম্মান প্রদর্শন করেন। ন্যাশনাল আরবোরেটাম ফাউন্ডেশন অব জ্যামাইকা কয়েক শ বছর আগে দেওয়া এই সম্মানের স্বীকৃতি এত দিন দেয়নি। তবে কয়েক বছর আগে তাদের বোধোদয় হয়েছে। বিষয়টি তারা মেনে নিয়েছে।
ছোট্ট গাছ পোর্টল্যান্ডিয়া। উচ্চতা সাধারণত ৪ থেকে ১০ ফুট। দুধ-সাদা চমৎকার ফুল। প্রথম দর্শনে গার্ডেনিয়ার আত্মীয় বলেই মনে হবে; আবার দেখতে অনেকটা ধুতরা ফুলের মতো।
মনমাতানো সৌরভের তূর্যসদৃশ লম্বা ফুল পোর্টল্যান্ডিয়া। সকাল ও সন্ধ্যায় এর মিষ্টি সুবাসে ভরে যায় আশপাশ এলাকা। লম্বা একহারা গাছ। পামগাছের মতো পাতার অবস্থান গাছের উপরিভাগে। গাছ বেড়ে ওঠে খুব ধীরগতিতে। খুব আকর্ষণীয় গাছটিকে ভালো লাগবে ফুলের মতোই। গাছের কালচে সবুজ পাতা দেখতে অনেকটা কাঁঠাল পাতার মতো। শীতকাল বাদে সারা বছরই ফুল ফোটে। পোর্টল্যান্ডিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম Portlandia grandiflora। এরা Rubiaceae পরিবারের সদস্য। আমাদের দেশে পোর্টল্যান্ডিয়া গাছ নেই বললেই চলে। ভারতে এর নাম তুষারমতী; আর জ্যামাইকানরা বলে হোয়াইট রোজ। ওপরের পোর্টল্যান্ডিয়া ফুলের ছবিটি ঢাকার বলধা বাগান থেকে তোলা।
ফারুখ আহমেদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৭, ২০০৯
Leave a Reply