প্রযুক্তির সাথে প্রতিনিয়তই আমাদের বন্ধুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রযুক্তির দৌড় আজ সর্বত্র। কিন্তু সকল শ্রেণীর জনসাধারণকে প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সবচেয়ে কার্যকর ছিল মোবাইল ফোন। ছেলে-বুড়ো সবার কাছে মোবাইল ফোন যেন আজ না হলেই নয়। তবে মোবাইল ফোনের নানাবিধ ব্যবহার আর হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাহারি হ্যান্ডসেট তৈরির প্রতিযোগিতা মোবাইল ফোনকে আজ ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইলের অংশ করেছে। এই ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে দ্রুততার সাথে যে প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা হলো নোকিয়া। শুধু মনকাড়া ডিজাইনই না, পাশাপাশি প্রযুক্তির নানা আবিষ্কারের সন্নিবেশ নোকিয়াকে করেছে অনন্য। নোকিয়ার প্রভাব আজ বদলে দিয়েছে আমাদের লাইফস্টাইল। আর তাই নিয়ে কড়চার শেষ মলাট আয়োজন লিখেছেন এমএইচ মিশু
বাজারে নোকিয়ার বেশকিছু সাড়া জাগানো মোবাইল হ্যান্ডসেট আছে। কিন্তু তারপরেও আর একটু আধুনিক আর একটু অভিজাত হ্যান্ডসেট নির্মাণের লক্ষ্যেই নোকিয়া ডেভেলপ করে এন সিরিজ। আর সেই এন সিরিজের সবচেয়ে আধুনিকতম হ্যান্ডসেটটি হচ্ছে নোকিয়া এন৯৭। এই হ্যান্ডসেটটি মূলত আধুনিক মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীদের লক্ষ করেই তৈরি। মোবাইল ডিভাইসে এখন ব্যবহারকারীরা কম্পিউটারের সব সুবিধা পেতে চায়। আর তাই নোকিয়া এন৯৭ এমন ভাবে তৈরি যেখানে অনেকগুলো কম্পিউটিং সুবিধা পাওয়া যাবে। ১৫০গ্রাম ওজনের এই হ্যান্ডসেটটি পুরোটাই স্টেনলেস স্টিল ফ্রেমে মোড়ানো। আর এর সাড়ে তিন ইঞ্চি ডিসপ্লেটি ১৬মিলিয়ন রঙ প্রদর্শন করতে সক্ষম। ব্যাটারির স্থায়ীত্ব বাড়াতে এখানে আছে প্রকিজমিটি সেন্সর। যার ফলে যখন ডিসপ্লেটি অব্যবহৃত থাকবে তখন আপনাতেই বন্ধ হয়ে যাবে ডিসপ্লে। আছে এক্সিলোমিটার সেন্সর। ফোন এপাশ থেকে ওপাশে কাত করতেই ফোনের পুরো ডিসপ্লে মেন্যু ঘুরে যাবে। ফোনটটির ডিসপ্লেটি টাচ সেনসেটিভ। স্ক্রিনে টাচ করে করেই সব কাজ চালানো যাবে। তবুও যারা খুব বেশী ইমেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে তাদের জন্য আছে পুরো কিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড কিবোর্ড। এর টাচ স্ক্রিনটি হাতের লেখা বুঝতে পারে। অর্থাৎ ইংরেজি লেখার সময় কিবোর্ড ছাড়াই স্ক্রিনে হাত ঘুরালেই আপনার লেখা বুঝতে পারবে এই ফোন। আছে ভাইব্রেশন ও স্টেরিও স্পিকার। আর স্পিকার ছাড়াও ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোনে গান শোনার ব্যাবস্থাও থাকছে। এন৯৭এর নিজস্ব মেমোরি ৩২ গিগাবাইট। এর বাইরে চাইলে অতিরিক্ত মাইক্রো এসডি কার্ডও সংযোজন করা যাবে। ফোনটিতে সংযোগ ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইনফ্রারেড ছাড়া প্রায় সব ধরনের সংযোগ ব্যবস্থা আছে। এখানে মোবাইল ফোন সিম কার্ডের মাধ্যে জিপিআরএস ও এইজ ব্যবহার করা যাবে। পাওয়া যাবে থার্ড জেনারেশন কানেক্টিভিটি সুবিধা। আছে এটুডিপি সুবিধা সহ ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি। এর কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা যাবে মাইক্রো ইউএসবি সংযোগ ব্যবহার করে।
মোবাইল ফোন ছবি তোলার রীতি এখন একরকম পুরাতন। কিন্তু নোকিয়া এন৯৭এ এই অভিজ্ঞতাটা একটু ভিন্ন রকম হবে। এখানে আছে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যা কার্লজায়েস এর লেন্স সমৃদ্ধ। ফলে ছবি তোলা যাবে ডিজিটাল ক্যামেরার মতোই ঝকঝকে। আর ছবি তোলার পরে দ্রুততার সাথে এই ফোন ব্যবহার করে ছবি আপলোড করা যাবে ফেসবুক কিংবা এমন সব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। নোকিয়া এই ফোনটিতে দিয়েছে জিও ট্যাগিং সুবিধা। ধরুন আপনি ছবিটি তুললেন দার্জিলিং-এর কোনো পাহাড়ে দাড়িয়ে। তখন এন৯৭এর জিপিএস(গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) চালু থাকলে তা সরাসরি আপনার ছবিতে জায়গার নামটি জুড়ে দেবে। ফলে ওয়েবে আপলোড করার পরে সহজেই আপনার বন্ধুরা জানতে পারবেন আপনার অবস্থান।
নোকিয়া তাদের এন৯৭ ফোনটিতে ব্যবহার করেছে পরিচিত ও জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম সিমবিয়ান। এখানে ব্যবহার হয়েছে সিমবিয়ানের সবচেয়ে আধুনিক ও চমৎকার গ্রাফিক্সের এস৬০ সিরিজের ৯.৪ ভার্সনটি। তাই পরিচিত সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে একটু অপরিচিত ও আরো দৃষ্টিনন্দন উপায়ে।
মোটকথা সোস্যাল নেটওয়ার্ক ব্রাউজ করা, ওয়েবে ছবি আপলোড করা, নোকিয়া অভি ব্যবহার করা, দ্রুত ইমেইল আদানপ্রদান করা সবই সম্ভব হবে সহজে ও দ্রুততার সাথে। আর তাই আপনার লাইফস্টাইলে নোকিয়ার এই এন৯৭ হয়ে উঠতে পারে এক ভিন্ন ও অনন্য আয়োজন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ৩০, ২০০৯
Leave a Reply