হাওয়া বদলের সাথে সাথে মানুষের মনও বদলে যায়, সেই সাথে বদলে যায় পুরনো ফ্যাশন। প্রকৃতিতে এখন প্রচন্ড গরম। গরমে একটু স্বস্তির জন্য মানুষের মন অস্থির থাকে। কিন্তু কাজ তো থেমে থাকে না কোনো কিছুর জন্য। কাজের জন্য বাইরে বের হতেই হয়। আর বাইরে বের হলে একটু সাজ তো লাগেই। মেয়েদের সাজের প্রধান সামগ্রীই হচ্ছে গহনা। বিশেষ করে কানের দুল। কানের দুল না পরলেই নয়। সব মেয়েরাই পোশাকের সাথে মিলিয়ে কানের দুল পরবেই। এইতো কিছুদিন আগেও বড় বড় কানের দুল না পড়লে যেন সাজ অসম্পূর্ণই থেকে যেত। আর এই প্রচন্ড গরমে স্বস্তি পাওয়ার জন্য সবকিছুর হচ্ছে হালকা ব্যবহার। তা খাওয়া থেকে শুরু করে পোশাক, সাজ সবকিছুতেই। সেই সাথে কানের দুলও। এখন বড় কোনো অকেশন ছাড়া শাড়িতেও ফ্যাশন সচেতন মেয়েরা কেউ বড় কানের দুল পড়ছে না। সবাই সব রকমের ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে হালকা ছোট কানের দুল পড়ছে। শর্ট কামিজ, ফতুয়া, স্কার্ট এমনকি শাড়ির সাথেও মেয়েরা জারকান, রুমি এবং নরমাল পাথরের ছোট কানের দুল বেশি পড়ছে। এছাড়া সোনা, রূপা, হিরা, রুবি, মুক্তা, পিতল, কপার, অক্সিডাইজ, বাঁশ, নারকেলের আইচা, ফিতা, চট, কাপড়, লেস, কাঠ, পাটকাঠি, মাটি, গ্লাস, সিরামিক ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিসের তৈরি কানের দুল ছোট, বড়, বুড়ো সবাই কোনো না কোনোটি ব্যবহার করছে। বুড়ো যারা তারা সোনা, রুপা এবং মুক্তার কানের দুল বেশি পছন্দ করে। এছাড়া হিন্দু মেয়েদের মধ্যে স্বর্ণের ছোট কানের দুলের ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইয়াং জেনারেশন সোনা রূপার চেয়ে হিরা, রুবি এবং নরমাল স্টোনের ছোট কানের দুল ড্রেসের সাথে মিলিয়ে পড়তে বেশি পছন্দ করছে। ঢাকার এবং বিভিন্ন জেলা শহরের প্রায় সকল শপিং সেন্টারে আপনার পছন্দমত ছোট কানের দুল কিনতে পারেন। একটু দামী এবং আনকমন কানের দুল কিনতে যেতে পারেন আলমাস শপিং সেন্টার, বসুন্ধরা সিটি, হলমার্ক, আর্চিস গ্যালারি, নিউমার্কেট এবং চাঁদনী চক ইত্যাদি মার্কেটে। কথা বলেছি আলমাস সুপার শপের বিক্রেতা স্বর্ণা এবং জামিলের সাথে। তারা জানিয়েছেন তাদের কানের দুলের দরদাম। ছোট কানের দুল জারকান পাথরের ৮০-৫০০ টাকা, রুবি পাথরের দাম পড়বে ২৫০-৯০০ টাকা এবং নরমাল পাথরের কানের দুল ৮০-১৫০০ টাকা। উল্লেখ্য পাথর এবং পাথরের পরিমাণ অনুযায়ী দাম হয়। তারা জানালেন ছোট কানের দুল এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বসুন্ধরা সিটিতে ৫০-২৫০০ টাকার মধ্যে আনকমন কানের দুল কিনতে পারবেন। চাঁদনী চকে ৩৫-৩০০০ টাকার মধ্যে হোয়াইট গোল্ডের সাথে পুঁতির কাজের তৈরি ছোট কানের দুল কিনতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে দুলের অর্ডারও দিতে পারেন তৈরি করার জন্য। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দমত ডিজাইন অনুযায়ী কানের দুল ব্যবহার করতে পারবেন। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলো ফ্যাশনেবল মেয়েদের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ডিজাইনের কানের দুল তৈরি করছে ছোট কানের দুল সব বয়সের মেয়েদের চেহারার সাথে মানিয়ে যায়। অঞ্জনস, কে-ক্রাফট, বাংলার মেলা, আড়ং, রঙ-এ তাদের নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি এসব কানের দুলের দাম পড়বে ২৫-৫০০ টাকা। স্কুল, কলেজ এবং ব্যস্ত শপিংমলের ফুটপাতে লেস, পুঁতি, ঝিনুক, মাটির এবং স্টোনের দুল পাওয়া যায়। এখানে কম দামে ছোট কানের দুল কিনতে পারেন। দাম বেশি, কম কোনো বিষয় না, বিষয় হচ্ছে কানের দুল আপনার চেহারা এবং ড্রেসের সাথে মিলে ফ্যাশনে কতটা বৈচিত্র্য আনতে পেরেছে। আপনার সাজ-পোশাকের সাথে ছোট একজোড়া কানের দুল এনে দিবে আপনার সুরুচির পরিচয়। এছাড়া বিভিন্ন হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েও আপনি ঘরে বসেই তৈরি করতে পারেন আপনার পছন্দের কানের দুল। এভাবে সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে কানের দুল ব্যবহার করে আপনার সুরুচির পাশাপাশি ফ্যাশনেও আনতে পারেন নতুনত্ব। সেক্ষেত্রে আপনার ইচ্ছাটাই যথেষ্ট। মানুষ এক জায়গায় একটা ফ্যাশন নিয়ে বেশিদিন পড়ে থাকে না। প্রতিদিনই থাকে পুরনোকে ঘিরে নতুন কিছু করার প্রবণতা। প্রাচীনকাল থেকেই কানের দুলের ব্যবহার। আগে ছেলেরাও কানের দুল পরত। এখনও সেটা বিদ্যমান। ছেলেরাও এক কানে ছোট রিং ব্যবহার করছে। মেটালের রিং পাওয়া যায় বিভিন্ন ডিজাইনের। মেটালের মধ্যে পাথর বসানো ঝোলানো দুল আছে। পাথরের রিং পাওয়া যায়। পাথরের রিং ব্যবহার করতে হলে কান ফুটো করতে হবে। কান ফুটো করা ছাড়া ম্যাগনেট রিং পরতে পারেন। এছাড়া চাপ রিং পাওয়া যায়। সেটা কানে বসিয়ে জোরে চাপ দিতে হবে। ছেলেরা ২০-১০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ছোট রিং কানের দুল কিনতে পারেন। এগুলো পাওয়া যাবে বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে এবং আর্চিস, হকমার্ক ও নিউ মার্কেটে।
০ কাজী সানজিদা আফরিন
মডেল সারিকা ছবি ইকবাল আহমেদ
মেকআপ হেরোবিক্স ব্রাইডাল
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ৩০, ২০০৯
Leave a Reply