আষাঢ় মাসের বেশ কয়েক দিন কেটে গেল। ঝুম বৃষ্টি নামেনি এখনো। কিন্তু আকাশে মেঘের ঘনঘটা, মাঝে মধ্যে এক পশলা বর্ষণ, নতুন গজানো কচি লতাপাতা আর কদম ফুলের বাহারে বর্ষার আমেজ পাওয়া যাচ্ছে বেশ। আর ঋতুবদলটা প্রকৃতিতে ফুটে ওঠার পাশাপাশি সাজপোশাকে তো চোখে পড়বেই। যেমন মেয়েদের পরনে এখনই দেখা যাচ্ছে নীল-সবুজ পোশাক, চুলে কদম বা বেলি।
মূলত গরম আর শীত এই দুই সময়কে মাথায় রেখেই আমাদের দেশে পোশাক ডিজাইন করা এবং কেনা হয়। তবে এখন বর্ষা ঋতুর থিম ব্যবহার করেও অনেকে কাজ করছেন। বৃষ্টি, বর্ষার ফুল, লতাপাতা, মেঘলা আকাশ এসব বিষয় উঠে আসছে পোশাকের মোটিফ হিসেবে। আর এ সময়কার প্রকৃতির রংটাই ব্যবহার হচ্ছে পোশাকে। যেমন সবুজ, নীল, ছাই, আকাশি ইত্যাদি। সব সময় পরার জন্য আর জমকালো কোনো উপলক্ষের জন্য-দুই রকম পোশাকই ডিজাইন করা হচ্ছে এ ঋতুতে। ফ্যাশন হাউস মৃন্ময়ীর ডিজাইনার শুক্লা আহমেদ বলেন, ‘এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে আবহাওয়াটা বেশ গুমোট থাকে। তাই সব সময় সুতি কাপড়ই বেশি পরা হয়। আর একটু আনুষ্ঠানিক ভাব আনতে চাইলে অ্যান্ডি সিল্ক ব্যবহার করা যায়। এবার আমরা সুতির ওপরই বেশি কাজ করেছি। গরমের কথা ভেবে পোশাকে খুব সাদাসিধে কাজ করা হয়েছে। ব্লক আর স্ক্রিন প্রিন্টই বেশি ব্যবহার হয়েছে। যেমন কোনো শাড়ির আঁচলে ব্লক করা হলে কুঁচিতে হয়তো দেওয়া হয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট। হালকা এমব্রয়ডারি বা চুমকির কাজও আছে। তবে সেটাও করা হয়েছে এ ঋতুর আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই। এ সময় ব্লাউজে হাইনেক ফ্যাশনটা বেশ চলছে। তবে বর্ষায় সব সময় এটা পরা সুবিধাজনক নয়। তাই হাইনেক না করে গলার কাটিংয়ে অন্যভাবে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে।’
সকালে খটখটে রোদ দেখে বের হলেও যেকোনো সময় এক পশলা বৃষ্টির ছাঁটে কাকভেজা হয়ে যেতে পারেন। পোশাকটা তাই এ কথা ভেবেই নির্বাচন করা উচিত। যেমন সুতি বা জর্জেট যে শাড়িই পরুন, ব্লাউজ একটু মোটা সুতি কাপড়ের হওয়াই ভালো। রংটাও গাঢ় পরাই সুবিধাজনক। পাতলা কোটা শাড়িগুলো এ সময় এড়িয়ে চলাই আরামদায়ক। বর্ষার রং হিসেবে কেন জানি নীলের কথাই আগে মনে পড়ে। তবে অন্যান্য উজ্জ্বল রং পরলেও ভালো দেখায়।
পোশাকের সঙ্গে গয়না হালকা হলেই ভালো হয়। চুলে পরা যেতে পারে ফুল। কানে ছোট টপ বা হাতে কয়েকটি ব্রেসলেটই যথেষ্ট।
ফেম বিউটি কেয়ার অ্যান্ড ট্রেইনিং ইনস্টিটিউটের কর্ণধার রুমা মাহবুব জানালেন এ সময়কার মেকাআপ কেমন হতে পারে। ‘বর্ষার সাজে সব মিলিয়ে একটা স্মিগ্ধ ভাব থাকা চাই। হালকা মেকাআপই তাই ভালো। চুলটা বাঁধা থাকলেই বরং সুবিধা হবে। হাতখোঁপা করে তাতে গুঁজে দেওয়া যেতে পারে কদম, বেলি বা চাঁপা ফুল। কপালে ছোট গোল টিপ পরতে পারেন। চোখে নীল, সবুজ বা ছাই রঙের কাজলের টান থাকতে পারে। তবে সেটা যেন পানিরোধক হয়। আইশ্যাডো দিলেও তা হবে হালকা কোনো রঙের। মাসকারা এড়িয়ে গেলে আপনারই সুবিধা হবে। তবে মাসকারা ব্যবহার করলে তা যেন পানিরোধক হয়। হালকা ফেইস পাউডার লাগাতে পারেন। আর লিপস্টিক গ্লস হলেই ভালো হয়। হালকা গোলাপি, বাদামি এ ধরনের রং বাছতে পারেন লিপস্টিকের জন্য।’ বললেন রুমা।
বর্ষার প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তার সজীবতায়। সেই সজীব ও সতেজ ভাব যেন থাকে আপনার সাজপোশাকেও।
রুহিনা তাসকিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ৩০, ২০০৯
Leave a Reply