চোখের নীরব ভাষা নাকি হাজারো শব্দের তুলনায় জোরালো। ওই চোখ নিয়ে কবির যত কাব্য···পাখির নীড়ের মতো চোখের বনলতা সেনকে নিয়ে আজও মানুষের কল্পনার অন্ত নেই। মনের কথা বলতে পারা সে চোখের ভাষা সহজ করে তুলতে পারাটাও কম কৃতিত্বের নয়। চোখের সৌন্দর্যের নানা দিক নিয়ে বলেছেন রূপ বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান।
মুখের সঙ্গে মানানসই ভ্রু
চোখের সৌন্দর্যের অনেকটাই নির্ভর করে চোখের ওপর বসে থাকা ভ্রু জোড়ার ওপর। তাই ভ্রু জোড়া হতে হবে মুখের সঙ্গে মানানসই। আপনার মুখের ও চোখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভ্রু তুলুন। যাঁদের মুখের আকৃতি গোলগাল, তাঁরা ইউ-আকৃতির ভ্রু রাখতে পারেন। যাঁদের মুখের আকৃতি ডিম্বাকৃতি বা লম্বাটে, তাঁদের ভি-আকৃতিতে ভালো দেখাবে। যাঁদের জোড়া ভ্রু মানিয়ে যায়, তাঁরা জোড়া ভ্রুও রাখতে পারেন। ভ্রু যাঁদের পাতলা, তারা চেষ্টা করুন একটু দেরি করে ভ্রু তুলতে।
কাজল কালো চোখ
বর্তমানে চোখের ফ্যাশনে নতুন যোগ হয়েছে ষাটের দশকের মোটা করে কাজল দেওয়ার বিষয়টি। কাজল ছাড়াও গাঢ় নীল, সবুজ, হালকা নীল, গ্লসি বিভিন্ন রঙের কাজল পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরার ফ্যাশন লক্ষ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি আইলাইনার, মাশকারা আর আইশ্যাডোর ব্যবহার তো আছেই।
চোখের সাজ
চোখের সাজের সময় ফ্যাশনের পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে চোখের আকৃতি ও রঙের ওপর। একেক চোখের সাজ হয় একেক রকম।
ছোট চোখ যাঁদের, তাঁরা মেকআপের ক্ষেত্রে হালকা রং বেছে নিন। চোখের পুরোটা এলাকায় হালকা গোলাপি রঙের শ্যাডো লাগিয়ে চোখের পাতার ওপর পর্যন্ত বাদামি রং মিশিয়ে নিন। এরপর চোখের পাতা ও বাইরের দিকে গাঢ় গোলাপি রং লাগিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। আপনি যদি গাঢ় রঙের আইলাইনার লাগান, সে ক্ষেত্রে চোখের নিচের পাতার কোলে লাগাবেন না। চোখের নিচের পাতার কোলে সাদা, সোনালি, রুপালি প্রভৃতি রঙের পেনসিলের টান দিতে পারেন। এতে চোখ উজ্জ্বল, বড় ও প্রশস্ত দেখাবে। চোখে লাগাতে পারেন ঘন করে মাশকারা।
বড় চোখে আইশ্যাডো লাগানোর সময় চোখের পাতার ওপরে হালকা রঙের শেড লাগিয়ে বাইরের কোণে গাঢ় শেড লাগাবেন। আইলাইনার দিয়ে খুব চিকন করে লাইন আঁকুন। একেবারে পাপড়ির ধার ঘেঁষে এবং চোখের নিচের অংশের কোলে কাজল পরে কিছুটা বাইরে টেনে দিন। এরপর ভ্রু ও চোখের মাঝখানে সাদা অথবা ঘিয়া কালারের শ্যাডো আলতোভাবে ছুঁয়ে দিন। চোখের নিচের ও ওপরের পাতায় গাঢ় আইলাইনার লাগাতে পারেন।
যাঁদের চোখ ফোলা ধরনের, তাঁরা চোখের পাতা এবং চোখের চারপাশে হলদে টোনের লুজ পাউডার আইশ্যাডো লাগিয়ে নিন। চোখের পাতায় ভাঁজের নিচ পর্যন্ত মিডিয়াম রঙে শ্যাডো লাগান। আই ভ্রু কোণে হাইলাইট করুন। এরপর বাইরের কোনা থেকে ভেতরের দিকে গাঢ় রং লাগান। এ ধরনের চোখে কখনোই ঘিয়া আইশ্যাডো লাগাবেন না। ওপরের পাতায় একেবারে পাপড়ির কোল ঘেঁষে বাইরে দিকের তিন ভাগে আইলাইনার লাগান। গোল চোখকে দীর্ঘ দেখানোর জন্য আইশ্যাডো ও লাইনারের টান বাইরের দিকে বাড়িয়ে দিন। কোনাগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে যেন কোমল ও নরম দেখায়। এই চোখকে সম্প্রসারিত রূপে নিতে চোখের ভাঁজ পড়া অংশ পর্যন্ত মিডিয়াম শেডের আইশ্যাডো লাগান। শেডটি টেনে চোখের কোনার বাইরে নিচের চোখের নিচের পাতার বাইরের কোনা থেকে ভেতরের দিকে যেতে থাকুন। কালো আইলাইনার দিয়ে চোখের নিচের ও ওপরের পাতায় লাইন আঁকুন। চোখের ওপরের পাতায় মাশকারা লাগাবেন। বাইরের দিকের অর্ধেকটায় বেশি ঘন করে লাগাবেন।
যাঁদের চোখ একটু ভেতরের দিকে চাপা, তাঁরা মেকআপের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখুন চোখকে বেশি ফুটিয়ে তোলার দিকে। চোখের ভাঁজ পড়া অংশে গাঢ় রঙের আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। চোখের পাতায় পেনসিল আইলাইনার ও মাশকারা লাগাবেন। আঙুল দিয়ে লাইনারগুলো ছড়িয়ে দিন।
দুই চোখের মাঝখানে দূরত্ব বেশি থাকলে চেষ্টা করুন মেকআপের মাধ্যমে দূরত্ব কমিয়ে আনতে। চোখের ভেতরের কোনার দিকে গাঢ় রঙের শ্যাডো দিতে পারেন। আবার যাঁদের দুই চোখের মাঝখানে দূরত্ব কম, তাঁরা মেকআপের সময় চোখের বাইরের কোনার দিকে গুরুত্ব বেশি দিন।
চোখের সাজের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আনতে দুই রঙের আইশ্যাডো দিন। পেনসিল লাইনার চোখের ওপর-নিচ দুই পাতায় লাগানো গেলেও লিকুইড লাইনার শুধু চোখের ওপরের পাতায় লাগান। আইলাইনার মোটা করে লাগাবেন না। এতে চোখকে ভারী ও ক্লান্ত দেখায়। আপনি যদি লেন্স ব্যবহার করেন, মেকআপের শুরুর আগেই তা পরে নিন।
চোখের যত্ন
চোখের সাজের পাশাপাশি নজর দিতে হবে চোখের যত্নের দিকেও। চোখে প্রচুর পানির ঝাপটা দিন। বাইরে থেকে ফিরে ভালোভাবে চোখের মেকআপ তুলুন। যাঁদের চোখের নিচে কালি পড়ার সমস্যা আছে, তাঁরা শসা চাক করে চোখের পাতায় ২০-২৫ মিনিট রাখুন। গোল আলুর রসও ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া বাজারে বিভিন্ন আইকেয়ার জেল পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করতে পারেন। মাঝেমধ্যে ঘড়ির কাঁটার দিকে অথবা বিপরীতে খুব হালকাভাবে চোখ ম্যাসেজ করতে পারেন। চোখকে বিশ্রাম দিন। দৈনিক অন্তত ছয় ঘণ্টা ঘুমান এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফলমূল খান।
শান্তা তাওহিদা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ৩০, ২০০৯
Leave a Reply