গরমটা ভালোই পড়েছে। সেই সঙ্গে সূর্যের তাপ, ধুলোবালি কিছুই আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছে না। এই গরমে যতই এগুলো থেকে দূরে থাকতে চান না কেন, ঘুরে-ফিরে তা আপনার কাছে আসবেই। ত্বকে না হয় সানস্ক্রিন বা লোশনে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন, কিন্তু চোখ দুটো? চোখ দুটোকে বাঁচাবে কে? ঠিক ধরেছেন-রোদচশমা। এই গরমে রোদচশমা যে কতটা দরকারি তা জেনে নিন চিকিৎসকের কাছ থেকে। ‘গরমেই মূলত চোখের নানা ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।’ বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ শফিকুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ‘গরমে চোখের ভেতরটা শুকিয়ে যায়। আবার পরিবেশগত কারণে বারবার ঘেমে যাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এই ঘাম যদি চোখের ভেতর চলে আসে, চোখে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। আবার রোদে বের হওয়ার ফলে চোখ জ্বলে এবং লাল হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ফলেও চোখ লাল হয়। কড়া আলোর উপস্থিতি চোখের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচণ্ড রোদের মধ্যে সূর্যের দিকে তাকানো হলে চোখের জন্য নানা ধরনের অসুখের সৃষ্টি করে। এসব সমস্যা থেকে খুব সহজে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো রোদচশমা ব্যবহার করা।’
নজর যখন ব্র্যান্ডেড
ব্র্যান্ডেড জিনিসের প্রতি প্রায় সবারই একটা বাড়তি আকর্ষণ থাকে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বহুতল বিপণি-সবখানেই রোদচশমার দোকান খুঁজে পাওয়া যায়। ব্র্যান্ডেড রোদচশমা কিনতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ভালো দোকানে যেতে হবে। ব্র্যান্ডেড রোদচশমায় দুই ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। রোদচশমার গুণগত মান ভালো থাকে এবং এগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক ফ্যাশনেবল হয়। বিভিন্ন নামের ব্র্যান্ডেড রোদচমশার ক্ষেত্রে আছে রে ব্যান, গুচি, সিকে, পুলিশ ইত্যাদি। এসব ব্র্যান্ডেড রোদচশমা ছেলেমেয়েদের আলাদা ডিজাইন এবং ভিন্ন দামে পাওয়া যায়।
এ ছাড়া দেশের সবখানেই রোদচশমার নন-ব্র্যান্ডেড পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। এগুলোতে দেখা যায় বৈচিত্র্যতা এবং দামটাও হাতের নাগালে। ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয়। তবে কিছু কিছু রোদচশমা ছেলেমেয়ে সবাই ব্যবহার করতে পারবে। ফ্যাশনের প্রয়োজনে যদি কিছুদিন অন্তর অন্তর রোদচশমা বদলাতে চান, তবে নন-ব্র্যান্ডেড পণ্যই ব্যবহার করা ভালো।
কেমন রোদচশমা চাই
হালের ফ্যাশনে গা ভাসাবেন না। যেমন মাপেরই রোদচশমা বাজারে আসুক না কেন, সেটা কেনার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নেবেন-সেটা আপনাকে মানাচ্ছে কি না? গোলগাল চেহারা হলে অবশ্যই আপনি রোদচশমার গ্লাসটা যেন একটু লম্বাটে ধরনের হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আবার একটু লম্বাটে ধরনের মুখ হলে ডাম্বেল আকৃতি বা মুগুরাকৃতির রোদচশমায় বেশ ভালো মানাবে। খেয়াল রাখবেন, চোখের কোল ঢেকে যায় এমন রোদচশমা ব্যবহার করুন।
মিলবে কোথায়?
ঢাকা শহরের এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, কাকরাইল, বিজয়নগরসহ সবখানেই রোদচশমা পাওয়া যায়। ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা, বনানীর বড় বড় শপিং মলেও রোদচশমার বিপণি রয়েছে। এ ছাড়া সুপার শপগুলো-নন্দন, মীনাবাজার, স্টপ অ্যান্ড শপ, ওয়ানস্টপ মলেও রোদচশমা পাওয়া যায়। এ ছাড়া শহরের শপিং মলগুলোর মধ্যে রাইফেলস স্কয়ার, রাপা প্লাজা, জেনেটিক প্লাজা, মেট্রোশপিং মল, বসুন্ধরা সিটিসহ সব বড় মলেও রোদচশমা পাওয়া যাবে। ব্র্যান্ডেড চশমাগুলো পাবেন ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যে। আর নন-ব্র্যান্ডের দামটা শুরু হতে পারে ১৫০ থেকে। তবে এ ক্ষেত্রে দরদাম করে নেওয়াটাই ভালো।
লক্ষ রাখুন
— চিকিৎসকের মতে, বাদামি রং এবং বাদামি শেডের চশমা চোখের জন্য ভালো, আরাম পাওয়া যায়।
— রোদচশমায় নীল রংটা এড়িয়ে চলুন।
— চোখের সমস্যা ব্যতীত রাতে রোদচশমা এড়িয়ে চলুন।
— রোদে রোদচশমা পরে বাড়ি ফিরে চোখে পানির ঝাপটা দিন।
— খালি চোখে বা রোদচশমা পরে সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না।
নাজমুল হাসান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ৩০, ২০০৯
Leave a Reply