মাধ্যমিক পাস করেই যারা পেশাজীবনের প্রস্ততি নিতে চায় তাদের জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। তবে সে ক্ষেত্রে এমন বিষয়ই বেছে নিতে হয়, যাতে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যৎ পেশাজীবন। সিরামিক প্রকৌশল তেমনই একটি বিষয়। বাংলাদেশে কাচ ও সিরামিক প্রকৌশলে চার বছরের ডিপ্লোমা প্রকৌশল কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।
আমাদের দেশের সিরামিকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই পালন করছে। গত কয়েক বছরে এই শিল্পে এক কথায় বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ছোট-বড় সব মিলিয়ে শ দুয়েক সিরামিক পণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশি সিরামিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের দেশের চাহিদা পূরণ করছে প্রায় শতভাগ। এ ছাড়া অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি দেশে রপ্তানি করে চলছে। এভাবে বাংলাদেশের সিরামিকশিল্প প্রতিনিয়ত ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠছে বিভিন্ন দেশে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও কাঁচামাল সস্তা হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এই শিল্পে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ বোধ করছে। তাই একদিকে পণ্যের ব্যাপক চাহিদাবৃদ্ধি, অন্যদিকে বিনিয়োগ বাড়ায় এই শিল্পে বেড়েছে দক্ষ সিরামিক প্রকৌশলীর। তাই যাঁরা সিরামিকের ওপর পড়াশোনা করে বের হচ্ছেন, তাঁদের জন্য নিশ্চিত পেশা হয়ে আছে এই শিল্পে।
পেশা হিসেবে কেমন
বাংলাদেশে চাকরির বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সিরামিক প্রকৌশলীদের। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম মীর বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে কর্মমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সিরামিক প্রকৌশলীরা হাতে-কলমে দক্ষ বিধায় তাঁদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে যারা চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (সিরামিক) পড়ে বের হচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই শিক্ষানবিশি সময়ই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে।’ সিরামিক প্রকৌশলীরা মূলত চাকরি শুরু করে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বা উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। তবে চাকরির অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে প্রমোশন পেয়ে তাঁরা কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক পর্যন্ত হতে পারেন বলে জানান একটি কোম্পানিতে কর্মরত একজন প্রকৌশলী।
কোম্পানিভেদে বেতনকাঠামোর পার্থক্য থাকলেও শুরুর দিকে একজন সিরামিক প্রকৌশলী বেতন হিসেবে প্রায় ছয় হাজার টাকা পান। তবে অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বেতন-ভাতা তো বাড়বেই।
কোথায় পড়বেন
সিরামিক প্রকৌশলীদের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে এ বিষয়ে শিক্ষালাভের সুযোগ তেমন বিস্তার লাভ করেনি। ১৯৫১ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশে একটিমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক নামের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। এটা ছাড়া আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেকে আগ্রহী হয়েও এই চাহিদাবহুল বিষয়ে আসন-সীমাবদ্ধতার কারণে পড়তে পারছে না। এ ছাড়া আমাদের দেশে এ বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় আগ্রহী অনেক শিক্ষার্থী স্মাতক বা স্মাতকোত্তর পড়তে পারছেন না। কিন্তু এই শিল্পে উচ্চতর বিভিন্ন পদে গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ডিপ্লোমা পর্যায়েও একটিমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় সিরামিকশিল্পগুলো তাদের চাহিদামতো দক্ষ মানবসম্পদ পাচ্ছে না।
পড়াশোনার পদ্ধতি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন হওয়ায় এর শিক্ষা কার্যক্রম, পরীক্ষা গ্রহণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ওই বোর্ড। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে মোট আটটি পর্ব বা সেমিস্টারে পড়াশোনা শেষ করতে হয়। আট পর্বের একটি থাকে ইন্টার্নশিপের জন্য, যেখানে শিক্ষার্থীরা চাকরিজীবনে পূর্বপ্রস্তুতি বা মহড়া হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
প্রতিবছর এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই মূলত ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।
ভর্তির যোগ্যতা
ডিপ্লোমা ইন সিরামিক পড়তে চাইলে তাকে ন্যূনতম মাধ্যমিক বা সমমান পাস হতে হবে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ন্যূনতম জিপিএ ৩·০০ ও গণিত বা উচ্চতর গণিত থাকতে হবে।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ সিরামিক প্রকৌশলীদের রয়েছে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। তাই আগ্রহ থাকলে পড়তে পারেন সিরামিক প্রকৌশলে।আর এ জন্য আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, সাতরাস্তা, তেজগাঁও, ঢাকা। ফোনঃ ৯১১০৩১৯।
সাইদ আরমান
সূত্রঃ প্রথম আলো, জুন ২৭, ২০০৯
Leave a Reply