এখন জেট যুগ। সবকিছুই হতে হবে দ্রুত। একটু পিছিয়ে পড়লেই ‘ইউ মিস দ্য রেস’। পেশা গড়তেও এই গতি প্রয়োজন। সঠিক ধারায় না থাকলে উদ্দেশ্য সফল হবে না। অর্জিত হবে না লক্ষ্য। অর্থকে অনর্থের মূল বলা হয়, আবার অর্থ ছাড়া জীবনের চাকা চলে না, অচল চাকা দিয়ে তো আর সফল জীবন আশা করা যায় না।
ভালো উপার্জনের নানা পথ আছে। চাকরিতেও তা-ই। ভালো উপার্জনের পেশাগুলোর মধ্যে বিমান পরিবহন সংস্থার বৈমানিক, প্রকৌশলীর চাকরি অন্যতম। বিমান রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীদের (এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার-এএমই) চাহিদা সব সময়ই আছে। স্মাতক বা ডিপ্লোমা ডিগ্রি যদি থাকে, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা এএমইতে এগিয়ে থাকবেন। আর বিমান প্রকৌশল বিষয়টি দেশেই পড়া যায়।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অনুমোদিত কোর্স সম্পন্ন করে লাইসেন্স পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হবে। যেমন, এলডব্লিউটিআর (লাইসেন্স উইদাউট টাইপ রেটিং) বা বেসিক লাইসেন্স ও টাইপ রেটেড লাইসেন্স। বেসিক লাইসেন্স পরীক্ষায় (যা বেবিচক ফ্লাইট সেফটি পরিদপ্তর পরিচালনা করে) অবতীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা হলো-
— বয়স ২১ বছরের নিচে নয়
— ইংরেজিতে যথেষ্ট দক্ষতা
— মেডিকেল ফিটনেস
— নির্ধারিত কোর্স সম্পন্নকরণ
— বিমানে ব্যবহারিক কাজ করার যথোপযুক্ত অভিজ্ঞতা ইত্যাদি।
এসব যোগ্যতা থাকলে বেবিচকের নির্ধারিত পরীক্ষাসূচি অনুযায়ী আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে। যোগ্য বিবেচিত হলে পাঁচটি ট্রেডের (ইঞ্জিন, এয়ার ফ্রেম, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, বেতার ইত্যাদি) যেকোনো একটিতে পরীক্ষা দেওয়া যাবে। লিখিত ১৯টি বিষয়ের মধ্যে যে ট্রেডের জন্য বিষয়গুলো প্রযোজ্য, তাতে ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এরপর হবে মৌখিক পরীক্ষা। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দেওয়া হয় এলডব্লিউটিআর। এরপর প্রার্থীকে যেকোনো নির্দিষ্ট বিমান রক্ষণাবেক্ষণে চার থেকে ছয় মাস অভিজ্ঞতা অর্জন ও টাইপ কোর্স সম্পাদন করতে হয়। যে প্রার্থীর এলডব্লিউটিআর আছে, তিনি টাইপ রেটেড লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। অথবা তাঁকে টাইপ রেটিংয়ের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁর আগের লাইসেন্সে উল্লেখ করে দেওয়া হবে, কোন ধরনের বিমান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কী দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পিত হলো। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রশিক্ষণসহ কম করে হলেও পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন।
বাংলাদেশের দেড় শতাধিক এএমই বিশ্বের নানা দেশে জনপ্রিয় বিমান সংস্থায় কাজ করছেন। তাঁদের বেতনও ঈর্ষণীয়। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও টাইপ রেটিংয়ের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে তাঁরা মাসে চার হাজার থেকে ১১ হাজার ডলার পর্যন্ত উপার্জন করছেন। এ দেশে আজ পর্যন্ত ৪৮৯টি এএমই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের প্রকৌশলী দেশে কীভাবে তৈরি হবেন? দুঃখের বিষয়, এ দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজে পড়াশোনা করে সরাসরি এ লাইসেন্স পাওয়া যায় না। বিমান এইচএসসি (বিজ্ঞান) পাস বা ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দিয়ে (এক থেকে দুই বছর মেয়াদে) বেবিচক অনুমোদিত কোর্স করিয়ে লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে থাকে।
আশার কথা, দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিজস্ব প্রশিক্ষণকেন্দ্রের (বিএটিসি) বাইরেও বেসরকারি খাতে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম অ্যারোনটিক্যাল ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (এআইবি)। সংস্থাটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও ক্যাবের অনুমোদনপ্রাপ্ত। তারা ‘অ্যারোস্পেস’ ও ‘অ্যাভিওনিক্স’ দুটি শাখাতেই উত্তরা ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তিন ব্যাচের ছাত্র এখানে চার বছর মেয়াদি (বিমানে এক বছর অন দ্য জব ট্রেনিংসহ) শিক্ষাক্রম সম্পন্ন করছেন। প্রশিক্ষণ শেষে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিমান রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীতে ডিপ্লোমা পাবেন টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড থেকে। আর পাবেন ক্যাবের এলডব্লিউটিআর পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ।
সরকার ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অব্যাহত সহযোগিতা পেলে সংস্থাটি দেশের ও দেশের বাইরের খ্যাতনামা এয়ারলাইনসগুলোর জনশক্তি সৃষ্টিতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশাবাদী।
জালাল উদ্দীন আহ্মেদ, সাবেক উপপরিচালক, এয়ারওয়ার্দিনেস, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ
সূত্রঃ প্রথম আলো, জুন ২৭, ২০০৯
Leave a Reply