ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড· মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন। যে সমস্যার কথা আপনি ছাপতে চান না, তা লিখে পাঠাবেন না। খামের ওপর অবশ্যই ছুটির দিনে/মনের জানালা কথাটি লিখবেন।
-বি·স·
সমস্যাঃ সকাল থেকে রাতে ঘুমুতে যাওয়া পর্যন্ত আমার শুধু বাবা ও ভাইদের বকাঝকা শুনতে হয়। আমাদের এমন একটা দিন যায় না যেদিন এ ঘরে কোনো ধরনের ঝগড়া-ঝাঁটি হয় না। মা বলে প্রত্যেকটা সংসারে নাকি এ রকম হয়। কিন্তু আমি জানি তা হয় না। কলেজে বন্ধুদের আড্ডায় কিছুক্ষণের জন্য হলেও সব ভুলে যাই। কিন্তু যখনই বাসায় ফেরার সময় হয় খুব অস্থির লাগতে থাকে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করে কোনো ট্রাক বা বাসের নিচে পড়ে মরে যাই। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় শুধু প্রার্থনা করি যেন সকালের সূর্যটা আর দেখা না হয়। কিন্তু সকালে দেখি এ অভিশপ্ত জীবনটা শেষ হয়নি। যদি বলেন নিজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে, তবে বলব তা অসম্ভব। মাঝেমধ্যে মনে হয় নেশা করতে শুরু করি।
শাম্মী বড়ুয়া, চট্টগ্রাম।
পরামর্শঃ প্রতিটি মানুষের জন্য তার পরিবারের পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের অভ্যন্তরে সুস্থ চর্চাগুলো না থাকলে এর একটি ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটে শিশুসদস্যদের ওপর। তুমি লিখেছ তোমাকে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে যেন না বলি। আমি তা বলব না কারণ, এতটা নেতিবাচক পরিবেশে বড় হওয়ার পর তুমি অবশ্যই তা চট করে করতে পারবে না। তবে আমি তোমাকে অনুরোধ করব তুমি তোমার জীবনকে ভালোবেসে আগামী দিনগুলোকে অর্থপূর্ণ করে তোলার প্রতিজ্ঞা নাও। খুব যখন মন খারাপ হবে তখন এমন কিছু করো যাতে করে মনোযোগটি অন্যদিকে সরিয়ে রাখা যায়। একবার চেষ্টা করেই দেখো না নিজেকে ভালোবেসে তোমার সুন্দর গুণাবলিকে আরও বিকশিত করা যায় কি না। এই কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তুমি যদি নেশা করো তাহলে তোমার আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মানবোধের ওপর এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তুমি নিশ্চয়ই এ ধরনের ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেবে না।
সমস্যাঃ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। সবার অবাধ্য হয়ে। তার পরও নিজেদের চেষ্টায় সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। কিন্তু পরিবার-পরিজনদের বিভিন্ন কটু কথায় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দুজনের দূরত্ব। আমার স্বামী আমায় ভীষণ ভালোবাসেন কিন্তু রেগে গেলে যা খুশি বলেন এমনকি মারধরও করেন। এগুলো নিয়ে পারিবারিকভাবে বহুবার সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু আমার স্বামীর কারণে তারা কেউ এখন আমাদের ব্যাপারে কোনো মতামত দিতে আগ্রহী নয়। আগে আমার স্বামীর ব্যবসা যখন ছোট ছিল তখন আমাকে আমার ছোট্ট এগার মাসের মেয়েটাকে অনেক সময় দিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসার প্রসারের কারণে আজ আর সেই দিন নেই। এখন তিনি রাত করে বাড়ি ফেরেন। কখনো ইচ্ছা হলে কথা বলেন, কখনো এসে খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। অথচ কাজের ফাঁকে তিনি তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ঠিকই সময় ব্যয় করেন। আমি সময় চাইলে ব্যস্ততার অজুহাত দেখান। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হচ্ছে। স্বামীর অভিযোগ আমি তাঁর কাছে চাইতে জানি না। তাঁকে হুকুম করি। বাস্তবতা তা নয়। কিন্তু তাঁরও তো আমার ওপর অধিকার আছে। তাঁর একটাই কথা, তোমার কাছে আমার চাওয়ার কিছু নেই। আমি কিছুটা সন্দেহপ্রবণ কারণ আমার স্বামী তাঁর বাইরের জগৎ নিয়ে আমাকে কিছুই বলেন না। আমাদের বিবাহবিচ্ছেদের কথা চলছে।
আনিলা
পরামর্শঃ ভালোবাসার সঙ্গে শ্রদ্ধা না থাকলে সেটিকে সত্যিকারের ভালোবাসা বলা যায় কি? আর কাউকে শ্রদ্ধা করলে কিন্তু তার গায়ে হাত তোলা বা তাকে অকথ্য ভাষায় কিছু বলার কথা নয়। তোমাদের এই দূরত্বের কারণ কি শুধুই পরিবার-পরিজনের কটু কথা, নাকি আসলেও প্রথম থেকে দুজনের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ছিল? একটু ভেবে দেখবে? পারিবারিক বিষয়ে তোমার স্বামীর উদাসীনতা ও বহিমুêখিতা প্রমাণ করে বাড়ির পরিবেশটি তার ভালো লাগছে না। তোমাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কি দুজনের সিদ্ধান্ত, নাকি পরিবার থেকে ঠিক করা হচ্ছে তা লেখনি। সম্পর্কের দূরত্বের কারণে তোমাদের কথোপকথনও এখন ঠিকভাবে হচ্ছে না। যদি একেবারেই দুজনে একসঙ্গে থাকা সম্ভব না হয় তাহলে বিবাহবিচ্ছেদই শেষ উপায়। এই বিচ্ছেদের ফলে সবচেয়ে ভুক্তভোগী হয় ওই দম্পতির সন্তানেরা। তাই স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে আলোচনা করে অথবা কোনো সাইকোথেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয় কি না দেখা যেতে পারে।
সূত্রঃ প্রথম আলো, জুন ২৭, ২০০৯
Leave a Reply