মুখের সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ একজোড়া ঠোঁট। শুধু ঠোঁট নয়, সুন্দর আকর্ষণীয় ঠোঁট। ঠোঁট খুব সেনসেটিভ, গরমে এবং শীতে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। ঠোঁটের সৌন্দর্য বজায় রাখতে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। ঠোঁট সুন্দর, আকর্ষণীয় করতে হলে নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে। ঠোঁটের সৌন্দর্যে করণীয়-
ঠোঁটের মেক-আপ
লিপস্টিক : মুখমন্ডলের প্রয়োজনীয় মেক-আপের শেষ পর্যায়ে লিপস্টিক লাগাতে হবে। পোশাক ও মেক-আপের সাথে সাথে মানিয়ে লিপস্টিকের রঙ বেছে নিবেন। যে-রঙই ব্যবহার করুন না কেন ঠিকমত লাগাতে না পারলে মুখমন্ডলের সৌন্দর্য ঠিকমত ফোটানো যাবে না। রঙ বেছে নেবার পর ঠোঁটের আকার ঠিক করুন। মুখের গড়নের সাথে মিলিয়ে দরকার মতো ঠোঁটের আকার ছোট বড় করুন। যারা ঠোঁটের আকার বাড়াতে বা কমাতে চান তারা আসল সীমারেখার কিছুটা বাইরে বা ভেতর দিয়ে ঠোঁটের মানানসই আউট লাইন এঁকে নেবেন। আউট লাইন আঁকতে হবে লিপ ব্রাশ দিয়ে। যে লিপস্টিক ব্যবহার করবেন তার থেকে এক শেড গাঢ় বা হালকা লিপস্টিক দিয়ে আউট লাইন করতে হবে। আউট লাইন আঁকা শেষ হলে মূল রঙের লিপস্টিক বুলিয়ে বুলিয়ে বা ব্রাশ দিয়ে লিপস্টিক লাগিয়ে প্রথমে উপরের ঠোঁটে ও পরে নিচের ঠোঁটে ভরাট করুন। এমনভাবে ভরাট করবেন যাতে মূল রঙ আউট লাইনের সাথে মসৃণভাবে মিশে যায়। লক্ষ্য রাখবেন লিপস্টিকের রঙ যাতে আউট লাইনের বাইরে না লেগে যায়।
লিপগ্লস : আগের মতো লিপলাইনারের সাথে লিপগ্লসের ব্যবহার এখন নেই। লিপগ্লস হালকা ন্যাচারাল কালারের হয়ে থাকে কিংবা অন্যান্য সব কালারের আছে কিন্তু লিপস্টিকের মত গাঢ় না। এখন লিপগ্লাসের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। গরমের দিনে দিনের বেলা হালকা লিপগ্লসের আবেদন বেশি। গাঢ় রঙের লিপগ্লস রাতে ব্যবহার করা ভাল। লিপগ্লসের রঙ বেছে নেবেন মূল লিপস্টিকের রঙের কাছাকাছি শেডে। বর্ণহীন লিপগ্লস সব রঙের লিপস্টিকের ওপর লাগানো যায়। লিপগ্লস দুই রকমের পাওয়া যায়। স্টিক লিপগ্লস ও লিক্যুইড লিপগ্লস। স্টিক লিপগ্লস সরাসরি লিপস্টিক লাগানো ঠোঁটে লাগানো যায়। আর তুলির সাহায্যে লিক্যুইড লিপগ্লস ঠোঁটে লাগাতে হয়।
ঠোঁটের আকার পরিবর্তন করা : সকল ঠোঁটের আকার মানানসই হয় না। ঠোঁটের আকার মানানসই না হলে লিপস্টিক ব্যবহার করলেও দেখতে ভাল লাগে না। তখন প্রয়োজন হয় গাঢ়, মাঝারি বা হালকা রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে ঠোঁটের আকার মানানসই করে নেয়া। ঠোঁটের আকার পরিবর্তন করতে চাইলে প্রথমেই যে রঙের ফাউন্ডেশন বেছে নেবেন সে ফাউন্ডেশন আঙুলে নিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। এভাবে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিলে ঠোঁটের আউট লাইন বাড়িয়ে বা কমিয়ে লিপস্টিক লাগালে লিপস্টিকের রঙ ফেঁটে যাবে না। ১০ মিনিট পর লিপ ব্রাশে লিপস্টিক লাগিয়ে সে ব্রাশ খুব সরু করে প্রয়োজনমত সীমারেখা বাড়িয়ে বা কমিয়ে মানানসই আউট লাইন এঁকে নিন। খুব সতর্ক হয়ে আউট লাইন আঁকবেন যাতে এ আউটলাইন ঠোঁটের মূল সীমারেখা থেকে খুব বেশি ভেতরের বা বাইরে না যায়।
পাতলা ঠোঁট: পাতলা ঠোঁট ভরাট দেখানোর জন্য ঠোঁটের প্রকৃত সীমারেখার ঠিক বাইরে আউট লাইন এঁকে নিন হালকা রঙের লিপস্টিক দিয়ে লিপ ব্রাশের সাহায্যে। এখন গাঢ় রঙের লিপস্টিক আউটলাইন বরাবর সারা ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট অনেক ভরাট দেখাবে।
পাতলা ছোট ঠোঁট : আউট লাইন এঁকে নিন হালকা রঙের লিপস্টিক দিয়ে লিপ-ব্রাশের সাহায্যে। এখন গাঢ় হালকা রঙের লিপস্টিক লিপ ব্রাশে নিয়ে আউট লাইন এঁকে নিন। এবার গাঢ় বা হালকা রঙের লিপস্টিকে ঠোঁট ভরাট করে নিন। সবশেষে লিপগ্লস লাগিয়ে ঠোঁট চকচকে উজ্জ্বল করে নিলে ঠোঁট মানানসই দেখাবে।
দুইকোণা চাপা ভরাট ঠোঁট : যাদের ঠোঁট এরকম তারা সব-সময় হালকা রঙের লিপস্টিক লাগাবেন। এছাড়া যে রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে চান সেই লিপস্টিক লিপব্রাশে দুইকোণ বাড়িয়ে মানানসই আউট লাইন আঁকুন। এবার মাঝারি বা হালকা রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করে ঠোঁট ভরাট করুন। এভাবে করলে উজ্জ্বল গাঢ় রঙের লিপস্টিক ও লিপগ্লস লাগাবেন।
ফোলা ঠোঁট : যাদের ঠোঁট ফোলা ধরনের তারা ঠোঁট মানানসই করার জন্যে ঠোঁটের প্রকৃত সীমারেখা বরাবর বা সামান্য কমিয়ে আউট লাইন আঁকুন। ঠোঁটের দু’কোণায় আউট লাইন মেলাবে না, সামান্য ফাঁক রাখবেন। এবার গাঢ় বা মাঝারি রঙের লিপস্টিকে ঠোঁট ভরাট করুন। ভরাট ঠোঁটে কখনো লিপগ্লস ব্যবহার করবেন না।
প্রসারিত ঠোঁট : প্রসারিত ঠোঁটের জন্য আউট লাইন আঁকুন হালকা রঙের লিপস্টিক লিপ ব্রাশ দিয়ে। দুই কোণায় সামান্য ফাঁক রাখবেন। যে রঙের লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট ভরাট করুন না কেন, তা ঠোঁটের মাঝের অংশে লাগান গভীর করে ও দুই পাশে লাগান অপেক্ষাকৃত হালকা করে।
ঠোঁটের যত্নে করণীয়
০ বিভিন্ন ঋতুতে আবহাওয়ার অত্যাচার থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করতে হলে সবুজ শাক-সবজি, ফল প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। প্রচুর পানি খেতে হবে।
০ ঠোঁট শুষ্ক হলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করবেন। এতে ঠোঁট নরম এবং সজীব হবে। লিপ বাম, লিপ গ্লস ব্যবহার করবেন যা শুষ্কতা থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করবে এবং ঠোঁটে এনে দিবে আলাদা সৌন্দর্য।
০ সানস্ক্রিন লিপ গ্লস ব্যবহার করবেন সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করতে।
০ ধূমপানমুক্ত থাকুন। ধূমপান করলে ঠোঁট শুষ্ক এবং মলিন হয়ে যায়। ঠোঁটের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মরে যায়। ঠোঁট কালো হয়ে যায়। ধূমপান করার ফলে রক্ত কালো হয়ে যায়। যার প্রভাব ঠোঁটের উপর পড়ে।
০ ঠোঁটের যত্নে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন। দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে ঠোঁটের সব সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যাবে। দাঁতে খাদ্য কণা লেগে থাকলে অসংখ্য জীবাণুর জন্ম হয় যা ঠোঁটের জন্যও ক্ষতিকর। তাই নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন এবং ব্রেথ স্প্রে অথবা মাউথ ওয়াস ব্যবহার করুন।
০ কাজী সানজিদা আফরিন
মডেল নাফিসা ও দীপা
ছবি সাফাওয়াত খান সাফু
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ১৬, ২০০৯
Leave a Reply