‘সিজারিয়ান’ শব্দটার সঙ্গে এখন মোটামুটি সবাই পরিচিত। ‘স্বাভাবিক প্রসব’ সৃষ্টিকর্তার নিয়মে হয়; আর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে প্রসব আল্লাহর মানুষকে দেয়া বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি নিয়মে হয়।
কখন সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন হয়?
আজকাল প্রয়োজন ছাড়াও এ অপারেশন হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও রোগিনী এবং রোগিনীর আত্মীয়-স্বজনরাও সহজবোধ করে। তাহলে কি সিজারিয়ানের মাধ্যমে ডেলিভারি পদ্ধতিটাই উত্তম? তাকি হতে পারে? প্রকৃতির নিয়মের চেয়ে কি মানুষের তৈরি নিয়ম বেশি ভালো হতে পারে? কখন-ই না। যখন প্রাকৃতিক নিয়মে প্রসব বাচ্চা অথবা মা অথবা উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপুর্ণ হয় সেসব ক্ষেত্রে সিজারিয়ান অপারেশনের বিকল্প নেই। নয় মাস সাতদিন গর্ভে ধারণ করে একজন মা, সঙ্গে বাচ্চার বাবা এবং আত্মীয়-স্বজনরা সবাই একটা সুন্দর, সুস্হ শিশুর অপেক্ষায় থাকে। কেউ কেউ আবার যে কোনো মুল্যেই হোক স্বাভাবিক প্রসবের অপেক্ষায় থেকে মা/বাবা বা উভয়কেই হারায় বা একটা ক্ষতির স্বীকার হয়। কাজেই অকারণেই অপারেশন করা বা প্রয়োজনে না করা দুটোই ক্ষতিকর।
সিজারিয়ান অপারেশনের আগে কী করণীয়
অপারেশনের আগে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, রক্তের গ্রুপ, ডায়াবেটিস ও জন্ডিসের পরীক্ষা করে নিতে হবে। অপারেশনের আগেই যদি আপনার রক্তস্বল্পতা থাকে অথবা অপারেশনের সময় এবং পরে বেশি রক্তপাত হয় তবে আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে। যাদের গর্ভফুল নিচে তাদের অবশ্যই রক্ত সংগ্রহ করে অপারেশনে যেতে হবে।
অপারেশনের আগে সময় এবং সুযোগ থাকলে পরিষ্কার করে গোসল করে পরিষ্কার কাপড় পরবেন। মনে সাহস রাখবেন। সৃষ্টিকর্তার ওপর আস্হা রাখবেন। আর আপনার ডাক্তারকেও বিশ্বাস করবেন এবং আস্হা রাখবেন।
অপারেশনের ছয় ঘণ্টা আগে শক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ রাখবেন। চার ঘণ্টা আগ পর্যন্ত পানি ও তরল খাবার খেতে পারবেন। বাচ্চার এবং আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগেই গুছিয়ে নেবেন।
যাদের পর্যাপ্ত টাকা নেই তারা গর্ভের শুরু থেকেই অতিপ্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া অন্যান্য খরচ কমিয়ে প্রতিমাসে সঞ্চয় করুন, যেন বিপদে কারোর কাছে হাত পাততে না হয় এবং ডেলিভারি কোথায় করাবেন, সিজারিয়ান প্রয়োজন হলে কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন আগে থেকেই ঠিক করে রাখবেন।
অপারেশনের সময় আপনার কী করণীয়?
আপনি ঘাবড়াবেন না, সাহস রাখবেন। যে কোনো অসুবিধা ডাক্তারকে জানাবেন। আংশিক অবশের জন্য পিঠে একটা ইনজেকশন দিতে হয়। সে সময় ডাক্তারকে সহযোগিতা করবেন। ঘণ্টা দুই-তিন আপনার নিচের অংশ অবশ থাকবে সেটা নিয়ে অস্হির হবেন না। তবে কষ্টের কথা অবশ্যই জানাবেন।
অপারেশনের পর কী করবেন/কী করবেন না
— বাচ্চাকে দুধ দেবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুয়েই।
— শাপদুধ ফেলে দেবেন না। শুধু দুধের বোটা পরিষ্কার করে বাচ্চাকে দুধ দেবেন।
— পা ভাঁজ করবেন, এপাশ ওপাশ ঘুরবেন। তবে ১২ ঘণ্টা উঠবস বা হাঁটাচলা না করাই ভালো।
— পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। প্রতিদিন দুবার এবং প্রয়োজনে আরো তাড়াতাড়ি পোশাক পরিবর্তন করুন।
— কোনো ধরনের খাবার বেছে খাবেন না। সবধরনের খাবার খেলে আপনি এবং আপনার বাচ্চার পুষ্টি ঠিকমতো হবে। * আপনি সেরে উঠবেন তাড়াতাড়ি এবং আপনার বাচ্চাও বড় হবে স্বাভাবিক নিয়মে।
— অপারেশনের পাঁচ-ছয়দিন পরই ব্যান্ডেজ খুলে গোসল করা যায়।
— গোসলের সময় ক্ষতস্হানে হাল্কা করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। অনেকে ভয়ে সে জায়গাটা পরিষ্কার রাখেন না, ফলে পরে ইনফেকশনে ভোগেন।
— অপারেশনের পরের দিন থেকেই হাল্কা হাঁটাচলা করুন।
— বাচ্চাকে আপনার কাছে রাখুন। শুধু বুকের দুধই খাওয়াবেন।
— দেড়মাস মোটামুটি বিশ্রামেই কাটান। তারপর যে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতেন এবং তিন মাস পর থেকে আর দশজনের মতোই চলাফেরা কাজকর্ম করবেন।
— দেড়মাস পর থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করুন আপনার পছন্দ মতো।
— তিন বছর পর প্রয়োজনে আরেকটি সন্তানের কথা ভাবুন। তবে যারা সিজারিয়ানের পর সন্তান-হারিয়েছেন তারা ছয়মাস পরই আবার গর্ভবতী হতে পারেন।
— পেটে বেল্ট বা বাইন্ডার প্রয়োজন নেই।
— কোনো সমস্যা হলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
— দেড়মাস পর থেকে ব্যায়াম করুন শরীরকে আগের অবস্হায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য।
— গর্ভবর্তী অবস্হার চেয়েও দুগ্ধদানকারী মায়ের পুষ্টি বেশি প্রয়োজন। তাই পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিকর খাবার খান।
— আয়রন ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বাচ্চা হওয়ার পর আরো ৩ মাস খাবেন।
আরো কিছু জানতে হলে জেনে নিন আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে। প্রতিবেশী বা মা-খালাদের ভ্রান্ত ধারণার শিকার হয়ে ভুল করবেন না। আপনি সচেতন হন এবং সচেতন করে তুলুন আপনার আশপাশের মা-বোনদের।
———————–
ডা. লায়লা আফরোজ নীলা ২০০৮-০৫-২৭
লেখকঃ এফসিপিএস (গাইনি এন্ড অবস)
কনসালটেন্ট, সিটি হাসপাতাল লিমিটেড
১/৮, ব্লক-লালমাটিয়া, সাতমসজিদ রোড
ঢাকা-১২০৭
আমার দেশ, ২৭ মে ২০০৮
রোকসানা
আমার বয়স ২৩, আমি সিজারিয়ান করে সন্তান প্রসব করেছি, কিন্তু আমি ভীষন চিন্তিত যে, আমি সিজারের ৯ মাস পর আবার গর্ভবতী হয়েছি, ……………আমি টেনশন করছি, এমতবস্থায় এখন কি করতে পারি বললে উপকৃত হব আমি ।
Bangla Health
আপনার আগের মন্তব্যের ওখানে উত্তর দেয়া হয়েছে।
রোকসানা
প্রথম সিজারের সর্ব নিম্ন কত মাস পর বাচ্চা আবার নেওয়া যায় ???
বাপ্পি
রোকসানা আপু,
সিজারে বাচ্চা হওয়াতে তোমার স্বামী সেক্স করার সময় তোমার ঊপর রাগ করত কি, সেক্স করতে অসুবিধা হত কি ? তুমি আমাকে মেইলে জানাইও
Bangla Health
সিজারের ৩/৪ মাস পরে আর কোন সমস্যা হয় না।
Bangla Health
এখানে সিজারের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনিতে ২/৩ বছর অপেক্ষা করা উচিত পরবর্তী বাচ্চার জন্য।
zerin
gorboful nichey thakle ki normal delivary sombob?
Bangla Health
এক কথায়–সম্ভব, তবে সবার অবস্থা এক রকম থাকে না। একজনের সম্ভব হলেই যে আরেকজনও ব্যাপারটা নিতে পারবে এমন নয়। এসব ব্যাপারে নিয়মিত চেকআপ-এর ওপর থাকতে হয়, এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম।
sumi
সিজারের পর আমার বেবি মারা গেছে।ছ্য মাস পর আমি প্রেগন্যান্ট। সবাই ভয় দেখাচ্ছে।।আমার কি করা উচিত????
Bangla Health
ভয়ের কিছু নেই। চেষ্টা করবেন যাতে নরমাল ডেলিভারি হয়। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কিছু স্পেশাল ব্যায়াম আছে, নিয়মিত হাঁটাচলা করতে হয়। এছাড়া খাওয়া দাওয়া ভালো করতে হবে। এসব মেনে চললে বাচ্চা ভালো থাকবে, আর নরমাল ডেলিভারি হতে সমস্যা হবে না।
Md nizam uddin
আমাদের ১ম বাচ্ছার বয়স ৫মাস ১৭দিন ভুলে ২য় বাচ্ছা গর্ভে চলে আসছে আর আমার ১ম বাচ্ছা হয়েছে সিজারে এমতাবস্থায় আমাদের পরিবারে চিন্তায় সব বন্ধ আছে খাবার,ঘুম আমরা কি করব এখন।
Bangla Health
দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ডাক্তার দেখিয়ে এবোরশন করিয়ে ফেলতে পারেন যদি ২য় বাচ্চা না নিতে চান।
zerin
gorboful nichey thakle ki kono vhabe normal delivary somvob noy?janaley khvb I upokritoh hobo
Bangla Health
এক কথায়–সম্ভব, তবে সবার অবস্থা এক রকম থাকে না। একজনের সম্ভব হলেই যে আরেকজনও ব্যাপারটা নিতে পারবে এমন নয়। এসব ব্যাপারে নিয়মিত চেকআপ-এর ওপর থাকতে হয়, এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম।
Sozib
সিজার হয়েছে ২ মাসের মত কিন্তু পানি ধরলে বা গোসল করলেই ঘাড় ও মা ব্যাথা কর এমতাবস্তায় কি করণীয় …?