একটা সময় ছিল, যখন যৌথ পরিবারের বিরাট বাড়িতে রান্না করার জন্য থাকত বিরাট হেঁশেল। সে ছিল এক জমজমাট এলাহি ব্যাপার। কিন্তু এখনকার যুগে আধুনিক বাসগৃহ মানেই ছোট ফ্ল্যাট বাড়ি। আর সেখানে খুব ছোট পরিসরে হয়ে থাকে রান্নাঘরের অবস্থান। ছোট রান্নাঘর মানেই যে তা থাকবে নিপাট সাদাসিধে তা নয়। যথাসম্ভব পরিকল্পনায় অল্প পরিসরেই তা হয়ে উঠতে পারে রুচিশীল। আর রুচিশীল রান্নাঘর বাড়ির গৃহিণীর সুরুচির প্রকাশ ঘটায়।
রান্নাঘরের অন্তঃসাজ নির্ভর করে এর আয়তন এবং ব্যবহারিক প্রয়োজনের ওপর। রান্নাঘরে সাধারণত ফ্রিজ, চুলা, কিচেন কেবিনেট, সিংক, উডেন স্টোরেজ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলোকে এমনভাবে বসাতে হবে যাতে রান্নাঘরে কাজ করার সময় একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়। এ ক্ষেত্রে স্থাপত্যকলারীতি অনুযায়ী ফিকশ্চার স্থাপনের সময় ঘড়ির কাঁটার দিক বা উল্টো দিক যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিলে ছোট পরিসরের রান্নাঘরে কাজ করতে সুবিধা হয়।
রান্নাঘরে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদির মধ্যে চুলা প্রধান। আধুনিক রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রান্না করার ব্যবস্থা থাকে। সে ক্ষেত্রে চুলার অবস্থান এমন উচ্চতায় হতে হবে, যাতে ব্যবহারকারী খুব সহজেই রান্নার কাজ করতে পারে। চুলার তাপ ও ধোঁয়া দূর করার জন্য চুলার ওপর কিচেন হুড এবং এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে চুলার ওপরের দেয়ালে কালি পড়ে না এবং রান্নাঘর ধোঁয়াহীন থাকে। আধুনিক রান্নাঘরগুলোর বিভিন্ন ধরনের স্টিলের সিংক যেমন সিঙ্গেল বাউল সিঙ্গেল ট্রে, সিঙ্গেল বাউল ডবল ট্রে, ডবল বাউল ডবল ট্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সিংকের অবস্থান জানালার কাছে হলে ভালো হয়। আর ডিশ ওয়াশার ব্যবহার করলে তা সিংকের পাশে বসানোই ভালো। আরেকটি বিষয় হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রান্নার কাজে অনেক বড় আকৃতির পাত্র ব্যবহার করা হয়, যা সিংকে ধোয়া সম্ভব হয় না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সিংকের পাশে মেঝে থেকে ৩০ সে·মি· উচ্চতায় আলাদা পানির কল স্থাপন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, নির্গত পানি যাতে রান্নাঘরের মেঝে নষ্ট না করে। এখন বেশির ভাগ রান্নাঘরেই সম্পূর্ণ কিচেন কেবিনেট ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে কেবিনেটের পাল্লাগুলো একই মাপের হলে রান্নাঘরের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
রান্নাঘরের অন্দরসাজে দেয়ালের রং বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেহেতু আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়িতে অল্প জায়গা থাকে রান্নাঘরের জন্য, সে ক্ষেত্রে হালকা কোনো রং দেয়ালে ব্যবহার করতে হবে। এতে রান্নাঘর বড় দেখাবে। আর সংশ্লিষ্ট ফিকশ্চারের সঙ্গে মিল রেখে দেয়াল রং করলে তা রান্নাঘরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
অনেক ছোট ফ্ল্যাটেই আলাদা করে খাবার ঘর থাকে না। সে ক্ষেত্রে খুব ছোট পরিসরের রান্নাঘরেও আপনি করতে পারেন ডাইনিং কাউন্টার। এ ক্ষেত্রে আপনার কিচেন কেবিনেটের একটি অংশ ইংরেজি ‘জে’ শেফে বানিয়ে নিন। সোজা জায়গাটুকু আপনি প্রস্তুতি টেবিল এবং রাউন্ড শেফটুকু খাবার টেবিল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে টেবিল টপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন আর্টগ্লাস, হ্যান্ড কালার সিরামিক, মার্বেল পাথর ইত্যাদি। এসব উপকরণ ব্যবহারে প্রস্তুতি টেবিলের ওপরের স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর হয়। রান্নাঘরের জিনিসপত্র গুদামজাত করার জন্য যেকোনো একদিকের দেয়াল থেকে দুই-তিন ফিট প্রশস্ততায় বানাতে পারেন পেন্ট্রি রুম বা স্টোর রুম। এতে রান্নাঘর থাকবে পরিপাটি। এ ক্ষেত্রে স্টোর বা পেন্ট্রি রুমের দরজাটি হতে হবে রুচিশীল ও সুন্দর। যাতে রান্নাঘরে কেউ প্রবেশ করলে বুঝতে না পারে যে সেখানে স্টোর রুম রয়েছে। আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, রান্নাঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকে। সম্ভব হলে রান্নাঘরের ভেতর দিয়ে ছোট একটা বারান্দা রাখলে তা বাড়ির গৃহিণীকে দেবে এক ফুরফুরে মেজাজ।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৬, ২০০৯
Leave a Reply