মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা একটি সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে। অভিনব সব পন্থায় উত্ত্যক্ত করা হয় মেয়েদের। মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করা এ রকমই একটি পন্থা। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সভ্যতা বিকশিত হওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মোবাইল ফোন এখন একটি জরুরি জিনিস হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ, পেশা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। অথচ এই মোবাইল ফোন ব্যবহার মেয়েদের জন্য একটি বাড়তি বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানারকম উপায়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার কাজে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে মেয়েদের দৈনন্দিন জীবন। কোনোভাবে মেয়েদের ফোন নম্বর অন্য হাতে গেলেই হয়। ব্যস, শুরু হয়ে যায় অত্যাচার। যথাযথ ব্যবস্থা বলে যে প্রচলিত নিয়মগুলো আছে, তা এতটাই জটিল যে সে পথে গেলে বিড়ম্বনা আরও বাড়ে। ফলে ঘন ঘন সিমকার্ড বদলাতে হয় মেয়েদের। আমার বান্ধবীকে এ পর্যন্ত ছয়বার মোবাইল ফোনের সিমকার্ড বদলাতে হয়েছে। সে জানে না আর কতবার তাকে এটা বদলাতে হবে।
ঘটনার শুরু
হঠাৎ একদিন মেয়েটির ফোনে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। সে ‘রং নাম্বার’ বলে কেটে দেয়। অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি যখনই দেখেছে এটি একটি মেয়ের নম্বর, তখন থেকেই শুরু হয় উত্ত্যক্ত করা। ঘন ঘন আসতে থাকে কল ও অশালীন সব এসএমএস। যতবারই সে বোঝাতে চায় যে তার কোনো আগ্রহ নেই, ততবারই দ্বিগুণ উৎসাহে কল আসতে থাকে। ফলে পরিবারের সবার সামনে, কলেজে ক্লাস চলার সময় অথবা কোনো সামাজিক আসরে মেয়েটিকে পড়তে হয় অপ্রস্তুত অবস্থায়। পড়াশোনা ব্যাহত হয়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। একদিন তার কলেজে ক্লাস চলার সময় মোবাইল ফোনসেট বন্ধ করতে ভুলে যায়। আর তখনই রিং বেজে ওঠে। সেই ব্যক্তি। ব্যাগ থেকে সেট বের করে বন্ধ করতে করতে দেরি হয়ে যায়। ফলে টিচার বিরক্ত হয়ে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়। তার বড় ভাই কয়েকবার ওই নম্বরে রিং করে ধমক দেয়, কোনো লাভ হয় না। অবশেষে ফোন কোম্পানির দ্বারস্থ হয়। তারা জানায়, থানায় অভিযোগ করতে হবে। বড় ভাই থানায় অভিযোগ করে। পুলিশ পাত্তা দেয় না। বরং নানা রকম উপদেশ দিয়ে ছেড়ে দেয়। অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েটি মোবাইল ফোনের সিমকার্ড বদলায়।
ঘটনা থামে না
সিমকার্ড পাল্টে কোনো লাভ হয় না। শুরু হয় নতুন বিড়ম্বনা। এবার বিড়ম্বনার সূত্র ফ্লেক্সি লোডের দোকান থেকে। কোনো এক দোকানে ফ্লেক্সি লোড করার সময় পাশ থেকে কেউ নম্বরটা শুনে তক্ষণাৎ নিজের সেটে নম্বরটি রেখে দেয়। সেই ব্যক্তি জানায়, সে মেয়েটিকে ফ্লেক্সি লোডের দোকানে দেখেছে এবং নম্বরটি সেখান থেকেই পেয়েছে। তারপর থেকে শুরু করে ফোন করা। ফোনে সেই ব্যক্তি তার শরীরের অশালীন উপমা দেয় এবং প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আর চলতে থাকে একই ধরনের উৎপাত। সময়-অসময় চলতে থাকে কল, মিসকল আর মেসেজ। আবারও ফোন কোম্পানির শরণাপন্ন হয় মেয়েটি এবং একই রকম অভিজ্ঞতা। অবশেষে এই সিমকার্ডটিও পরিবর্তন করে কেনে আরেকটি নতুন সিমকার্ড।
ঘটনা চলছে
এবারের উত্ত্যক্তকারী বীরপুরুষটি তার জীবনবৃত্তান্ত থেকে নম্বরটি সংগ্রহ করে। চাকরির প্রয়োজনে কোনো এক কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান থেকে তার জীবনবৃত্তান্ত কম্পোজ করায়। সেই কম্পিউটারে থেকে যায় সফট কপি। আর সেখান থেকে নম্বর নিয়ে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে সেই ব্যক্তি। অভিযোগ করে, নম্বর বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েও লাভ হয় না। সেই ব্যক্তি জানায়, তার অনেক নম্বর আছে। কয়টা বন্ধ করবে? মেয়েটির বড় ভাই একদিন সেই কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অভিযোগ করে। সেই ব্যক্তি অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, এই নম্বর তার না। তার প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারীরও নয়। তাদের প্রতিষ্ঠানে এমন কেউ নেই যে এ রকম করতে পারে। অগত্যা ফিরে আসে ভাই। কিন্তু বেড়ে যায় অত্যাচার। ফোন কোম্পানিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এই নম্বরে রেজিস্ট্রেশন দেখানো হয়েছে যে ব্যক্তির, তার বাড়ি সাতক্ষীরা। তার নামের সঙ্গে অভিযুক্তের নাম-ঠিকানার কোনো মিল নেই। অবশেষে আবারও সিমকার্ড বদলায় মেয়েটি। আর এ পর্যন্ত তাকে ছয়বার তা বদলাতে হয়েছে।
আতিকা রহমান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৭, ২০০৯
Leave a Reply