মেয়েটির বয়স ২৬ বছর। ওরা দুই বোন, তিন ভাই। ও ভাই-বোনের মধ্যে কনিষ্ঠ। লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি করে। ওর বোনও চাকরি করে। ওদের এখনো বিয়ে হয়নি। বাবা অসুস্থ এবং বড় ভাইয়েরা কিছুই করে না, তাই সংসার চালানোর দায়ভারটা ওদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলো। বোনের বয়স ৩২ বছর। মা-বাবা খুব চিন্তিত।
এখনো মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না। কেন বিয়ে হচ্ছে না? ছোট বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসে আবার চলে যায়। কারণ, বড় ভাই মাদকাসক্ত। বাকি দুই ভাই বখাটে ছেলেদের সঙ্গে চলে। দুই বোন মিলে সংসার চালায়। এক বোনকে বললাম, কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছ? বলল, যার তিন ভাই বেকার, মাদকাসক্ত, বাবার টাকা নেই, তাদের সঙ্গে আত্মীয় করতে কারই বা ইচ্ছা করবে? মা তো সারা দিনই বকাবকি করে।
সারা দিন চাকরি করে বিকেলে দুইটা টিউশনি করে বাসায় এসে মায়ের বকাঝকা একটা নিত্যদিনের কাজকর্মের মতো চলছে। ‘তোদের দুই বোনেরই বিয়ে হয় না, দুনিয়ার সব মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই তোদের চরিত্রে দোষ আছে, নয়তো বিয়ে এসে কেন ভেঙে যায়।’ বড় ভাইও বলছে, ‘এভাবে রাত করে বাড়ি ফিরলে তোমার মেয়েদের কে বিয়ে করবে?’ অথচ মাসের শেষে বেতন থেকে বড় ভাই ৫০০ টাকা নিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে রাগ করে রাতে ভাত খাওয়া হয় না আমাদের দুই বোনেরই। দুজন এখন ক্লান্ত, খুবই ক্লান্ত। আমাদের জীবন কি এভাবেই কাটবে? আর কত দিন মায়ের বকা শুনতে হবে? মাঝেমধ্যে মায়ের ওপর রাগ করে বলেই ফেলি, ‘বিয়ে না করলে কী করব? আর আমাদের বিয়ে হলে তোমরা কী করবে?’
কখনো কখনো ইচ্ছে করে গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই। মাকে নাকি আমাদের জন্য মানুষের কাছে লজ্জায় পড়তে হয়। মানুষ মাকে বলে, ‘মেয়েদের বুড়ি করে রাখছেন কেন? বিয়ে দিয়ে দিন।’ মাও রাগে মাঝেমধ্যে বলে, ‘বিয়ে না হলে গলায় দড়ি দে। আমাকে তোরা মুক্তি দে।’
ইচ্ছে করে সত্যিই একদিন গলায় দড়ি দিই। কিন্তু আমরা আমাদের মা-বাবাকে খুব ভালোবাসি। মাকে কীভাবে বোঝাব এখানে আমাদের কী দোষ? এটা আমাদের দেশে একটা সাধারণ দৃশ্য। কবে বদলাবে আমাদের সমাজ?
ছোয়াই ভিয়া আফরিন
ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৭, ২০০৯
Leave a Reply