## আমার বিবাহিত জীবন ১০ বছরের; আমাদের একটি মেয়েও আছে।তার বয়স সাড়ে তিন বছর। যখন বিয়ে হয় তখন আমি নবম শ্রেণীতে পড়তাম। মায়ের একান্ত ইচ্ছা ও আমার আগ্রহে আজ আমি স্মাতক ডিগ্রি অর্জন করেছি। আমার স্বামী শিক্ষিত একজন মানুষ। সে কর্মজীবনে ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বিয়ের তিন-চার বছর পর থেকেই সে আমার ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। তার যে সংসার, স্ত্রী ও একটি মেয়ে আছে, সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। অত্যন্ত নিরুপায় হয়ে বা বলা চলে সমাজের দায়বদ্ধতার কারণে যেন তার এই সংসার করা। এমন এক পর্যায়ে রয়েছে সে, যে কারণে আমাকে তালাক দিতেও পারছে না। সমাজের মানুষগুলোর কাছে তাহলে তার আসল রূপ ধরা পড়ে যাবে। যে রূপ নিজের চোখে আমি দেখতে পেয়েছি, আমার বাসার কাজের মেয়ের সঙ্গে, কিন্তু লজ্জা ও দুঃখে পারিনি এসব কথা কারও সঙ্গে ভাগ করতে, নিজের কষ্টগুলো নিজের ভেতর চেপে রেখেছি। এখন অবশ্য কিছু কিছু ঘটনা আমার বাবা-মাকে বলি। তাঁদের ওই একই কথা, এসব কথা যেন কেউ না জানে। আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য ১৫ বছর। আমরা একই ঘরে থাকলেও তার সঙ্গে আমার কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই। তার কার্যকলাপে আমি ইচ্ছে করেই দূরে আছি। আমি এখন একটি চাকরি খুঁজছি। কিন্তু সে স্পষ্ট বলেছে, আমি যাতে কোনো চাকরি না করি। শারীরিকভাবে নির্যাতিত না হলেও, আমি এখন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা।
— আপনার অবস্থাটা সত্যিই দুর্বিষহ। তবে এ রকম ঘটনা আমাদের সমাজে খুবই স্বাভাবিক। একটা যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার মধ্যে বসবাস করতে হবে সমাজ এবং সংসারের কারণে। বিশেষ করে মেয়েদের বেলায় দেখা যায় ব্যাপারটা বেশি প্রযোজ্য। কোনো মনোরোগ বিজ্ঞানীর সঙ্গে পরামর্শ করলে তিনি আপনাকে পথ বলে দেবেন, যে পথে গেলে আপনি এই দুর্বিষহ জীবনের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
সব সমস্যা একটি চিঠির উত্তরে সমাধান হয় না, চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হয়। এ কারণেই মনোরোগ বিজ্ঞানীর দ্বারস্থ হতে আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি।
## আমরা পাঁচ ভাই, কোনো বোন নেই। আমি সবার ছোট। তিন ভাই বিবাহিত। আমি ছোটবেলা থেকেই বোনের স্মেহ পাইনি। আমাদের বাড়িতে একটি মেয়ে বিবাহিত হয়ে এসেছেন। তিনি আমাকে ভাই বলে ডেকেছেন। আমিও তাঁকে বোন বলে জানি। তাঁকে আপন বোনের মতো ভালোবাসি। আমার বোন যাঁকে বিয়ে করেছেন, তাঁর বয়স ৯৫ বছর। আমার বোনের বয়স ৩৫ বছর। তাঁর স্বামী এখন খুবই অসুস্থ। এই বৃদ্ধ লোকটি মারা গেলে বোন তাঁর বাবার বাড়ি চলে যাবেন। আমি বোনের কাছে শুনেছি, তাঁর আগে একটি বিয়ে হয়েছিল এবং ছয় বছরের একটি সন্তান আছে। আগের বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার পর তিনি এ বিয়ে করেছিলেন। এখন তাঁর বৃদ্ধ স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি যদি আবার বাবার বাড়ি চলে যান, তাহলে আমি আবার বোনহারা হয়ে যাব। এই বোনকে পেয়ে আমি লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছিলাম। আমি আমার বোনের মায়া-ভালোবাসা চিরদিনের জন্য কীভাবে পাব?
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
— আপনি যাকে বোন বলে ডেকেছেন, সে কীভাবে পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হলো, তা বোঝা যাচ্ছে না। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কোনো আত্মীয়তা নেই। এই সম্পর্ক চিরদিনের জন্য হওয়ার নয়। তবে এটা আমার অনুমান। সম্পর্কটার ব্যাপারে আরও স্পষ্ট জানলে সুপরামর্শ দেওয়া যেত।
## আমার বয়স ২৭ বছর। জানুয়ারি মাসে খুলনার একটি বিদ্যালয়ে আমার ভাগ্নির জন্য ভর্তির ফরম কিনতে গিয়ে এক বউদির সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি তাঁর মেয়ের জন্য ফরম নিতে এসেছিলেন। প্রথম দেখাতেই তাঁকে আমার ভালো লাগে। এর কয়েক ঘণ্টা পর আরেকটি বিদ্যালয়ে ফরম কিনতে গিয়ে সেখানেও তাঁর সঙ্গে আবার দেখা ও কথা হয়।
এরপর ভর্তি পরীক্ষার দিন আবার দেখা হলে বাচ্চাদের হলে ঢুকিয়ে দিয়ে আমরা ঘণ্টা দুয়েক একসঙ্গে কাটাই এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি। একপর্যায়ে তিনি তাঁর মোবাইল ফোন নম্বর আমাকে দিয়ে মেয়ের ফলাফল জানাতে বলেন। পরের দিন আমি বাইরে থেকে মোবাইল ফোনে তাঁর মেয়ের ফলাফল জানাই। তখন তিনি বলেন পরে ফোন করতে। সামর্থ্য থাকলেও আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতাম না। কিন্তু তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এবং তাঁর সমর্থন পেয়ে আমি পরের সপ্তাহে গ্রামের বাড়ি থেকে একটি মোবাইল ফোন সেট নিয়ে আসি। তাঁকে প্রথম ফোন করলে বলেন, ‘এত দিন পর মনে পড়ল!’ এরপর আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। এখন আমি তাঁকে এতটা ভালোবেসেছি যে প্রতিদিন দেখা বা কথা না হলে আমার ঘুম হয় না। ঘুমের ওষুধেও কাজ হয় না। তিনিও আমাকে ভালোবাসেন। এখন আমি কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
— অনেক সময় এ রকম সম্পর্ক হয়ে যায়। কিন্তু এ ধরনের সম্পর্ক একটি পরিণতিতে পৌঁছায় না সামাজিক বাধার কারণে। তাই প্রথম থেকে এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া ভালো। মনকে শক্ত করুন। বুঝে দেখুন যে মহিলার একটি সন্তান আছে, সংসার আছে, তাঁর সঙ্গে কি আপনার সম্পর্ক বেশি দূর গড়াবে?
## আমার বয়স ১৫ বছর। আমার চাচাতো দুলাভাই আমাকে খুব আদর করতেন। আদরটা একপর্যায়ে অন্যদিকে মোড় নেয়। তাঁর অতিরিক্ত আদর প্রথমে বিরক্তিকর মনে হলেও একসময় ভালো লেগে যায়। চাচাতো বোন ও আমার পরিবারের চোখকে ফাঁকি দিয়ে প্রায় দুই বছর হলো তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চলছে। আমি ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। দুলাভাই বিমানবাহিনীতে চাকরি করেন। দেখতে খুব সুন্দর এবং বয়স ২০-২২ বছর। তাঁকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। দুলাভাই বলেছেন, ‘তুমি যদি বলো, তবে তোমাকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমি তোমাকে সব সময় পেতে চাই-বিয়ে হোক বা না হোক।’ এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না। দুলাভাইকেই বিয়ে করব, নাকি অন্য কিছু করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
— তোমার কী মনে হয়? দুলাভাইকে কি বিয়ে করা সম্ভব? একটা অঘটন ঘটে গেছে। তোমরা শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছ। দুই বছর ধরে সেই সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছ। খেয়াল করে দেখো, তোমার দুলাভাই বলছে সে যেকোনোভাবে তোমাকে পেতে চায়-বিয়ে হোক বা না হোক।
একদিন এই শারীরিক টান আর থাকবে না। আর তার চেয়ে বড় কথা, তোমার বয়স খুবই কম। মাত্র এসএসসি দিয়েছ। সময় থাকতে তুমি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসো।
## আমার বয়স ৩০ বছর। স্মাতকোত্তর শেষ করে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছি। ২০০৬ সালের শেষের দিকে চাকরি হয় এবং বাবার অনুরোধে মোটামুটি চেনা জানা সুশ্রী ও রুচিশীল এক মেয়েকে ২০০৭ সালের ১১ মে বিয়ে করি। সে তখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আমাদের দাম্পত্যজীবন ভালোই কাটছিল। পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার কোনো ঘাটতি ছিল না। যেহেতু চাকরির শুরুতে বিয়ে, এ জন্য আমার কিছুটা আর্থিক টানপোড়েন ছিল। কিন্তু সেটা তেমন উল্লেখ করার মতো নয়। ২০০৭ সালের ১৫ আগস্ট তার মা-বাবার মতানুসারে তাকে আমার কর্মস্থলে নিয়ে আসি (যদিও আমার নিজ বাড়িতে তাকে নেওয়া হয়নি)। কিন্তু ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় আরেক সিডর নেমে আসে আমার জীবনে। ১৫ নভেম্বরের ভয়াবহ কঠিন সিডরের রাতেও আমরা একসঙ্গে ছিলাম এবং সিডরের দুই দিন পরে তার বাড়িতে তাকে রেখে আমি আমার বাড়িতে যাই। কিন্তু এরপর সে আমার সঙ্গে আসার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে। ঘটনার আক্নিকতায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। কিছুদিন পর তার পক্ষ থেকে লোকজন আমার কর্মস্থলে এসে আমাকে অপদস্থ করে এবং তারা কিছু জিনিসপত্র দিয়েছিল, তা নিয়ে যায়। ৩১ ডিসেম্বর আমার ঠিকানায় একটি তালাকনামা পাঠায়। এরপর সে বা তার পরিবারের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। এ ঘটনাকে আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি এবং এখনো তার পথ চেয়ে আছি। এমনকি তাকে আমি একটি সেকেন্ডের জন্য ভুলে থাকতে পারছি না। ইদানীং আমার শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা আরও বেড়ে চলছে। এ ঘটনার পর থেকেই আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা আবার নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য তাগিদ দিচ্ছে, যা আমার কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগছে। কেন তাকে এখনো এক মুহূর্তের জন্য ভুলে থাকতে পারছি না? আমার পরবর্তী করণীয় কী?
সিডর আহম্মেদ (ছদ্মনাম), বরিশাল।
— যেকোনো কারণেই হোক, মেয়েটির মন উঠে গেছে। বোঝা যাচ্ছে না কেন। তাই পরামর্শ হবে, আপনি মেয়েটিকে এবং এই পর্ব মন থেকে মুছে ফেলুন। অনেক সময় কষ্ট হলেও জীবন থেকে কিছু ঘটনা উপড়ে ফেলতে হয়। মেয়েটিকে নিয়ে ভাবনা, ভালোবাসার কথা মন থেকে একেবারে বাদ দিতে হবে। যে আপনার চোখের আড়ালে, তাকে বেশি দিন মনে রাখবেন না। অতি প্রিয়জনের মৃত্যুও তো আমরা মেনে নিই, তাই না? কালে সব ক্ষত মিলিয়ে যায়। শুধু চিহ্ন থেকে যায়।
## আমি দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখায় পড়ছি। আমি ১০ বছর ধরে আবাসিক হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছি। আমি এই ১০ বছরে অনেক বন্ধু কাছে পেয়েছি, কিন্তু একজনের মতো কাউকে এতটা পছন্দ করিনি। আমি যেদিন থেকে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করি, সেদিন থেকে আমি ওর কিছু আশা, কিছু আকাঙ্ক্ষা, কিছু কষ্ট, কিছু আনন্দ নিজের করে নিতে শুরু করি। সব সময় চেষ্টা করতাম তাকে আনন্দ দিতে। তবে বন্ধু হিসেবে তাকে যতটা কাছে পেতে চেয়েছি, বুঝতে চেয়েছি, তা আমি তার মধ্যে কোনো দিনই দেখিনি। তাকে অনেক বার বোঝাতে চেয়েছি বন্ধুত্ব কী? কিন্তু সে সব সময় নিজের বিশ্বাসে অটুট থেকেছে। তার বিশ্বাসটা আমার মতো এতটা গভীর নয়। এমন এক সময় আসে, যে সময়টিতে আমরা দুজন খুব কাছাকাছি চলে আসি, আবার দুজনই নিজেদের মধ্যে দূরত্বটাকে বৃদ্ধি করি। কিন্তু আমি দূরত্ব রেখে বেশি দিন থাকতে পারিনি। তবুও সে আমাকে বুঝতে চেষ্টা করেনি। আমি তার কাছ থেকে কোনো উপহার কিংবা কোনো বস্তু পাওয়ার আশা করি না। কারণ, আমি চাই সে যেন আমাকে বুঝতে চেষ্টা করে। আসলে আমি অনেক শুনেছি যে ‘বন্ধুত্ব’ বলতে দুই দেহের অভিন্ন এক হৃদয় বোঝায়। কিন্তু আমার ও তার মাঝে এ রকম কোনো কিছু গড়ে ওঠেনি। এ মুহূর্তে আমার কী করা উচিত?
ইমু, টাঙ্গাইল
— এই সম্পর্কটা খুব মসৃণ পথ ধরে চলছে না। সব সময় একটা খিটমিট। তুমি খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছ। অনেক সময় দূরে সরে থাকলে অপরজন বন্ধুত্বের মূল্য বোঝে। নিজেকে কিছুদিন দূরে সরিয়ে রাখো। হয়তো তোমার অভাবেই তোমার বন্ধু এই বন্ধুত্বের মূল্য বুঝতে পারবে।
এমন অনেক সমস্যা আছে যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের।
১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানাঃ
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৯, ২০০৯
Leave a Reply