৪২ বছর পর নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা ইউনিয়ন এবং এর আশপাশের কয়েক গ্রামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ হাজার নারী। গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। জানা যায়, ষাটের দশকের দিকে ভারতের প্রখ্যাত জৈনপুরের প্রয়াত পীর হজরত মাওলানা হাসান মাহমুদ ফরিদগঞ্জের ১৬ নম্বর রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে বসবাস করতেন। ইসলাম ধর্মের প্রচারকালে পীরের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দেখে হাজার হাজার লোক তাঁর মুরিদ হয়। শোনা যায়, সেই সময়ে এক স্থানীয় নির্বাচনের আগে তিনি এক মাহফিলে নারীদের পর্দানশিন থাকার জন্য অনুরোধ করলে ফরিদগঞ্জের ওই ইউনিয়নসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন পীরের অনুরোধকে আদেশ হিসেবে মেনে নিয়ে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে প্রায় ৪২ বছর ধরে ওই ইউনিয়নসহ আশপাশের গ্রামের মুসলমানদের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ হাজার মহিলা ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকেন। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত পল্লী সমাজের কর্মকর্তারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও নারীদের নিয়ে ভোটের গুরুত্ব, পীরের প্রকৃত মতামত এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝিয়ে বলেন। ফলে ওই ইউনিয়নের চারটি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে দীর্ঘ ৪২ বছরের প্রথা ভেঙে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন নারীরা। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসা কয়েকজন নারী জানান, প্রকৃতপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পীরের কোনো নির্দেশ ছিল না। স্থানীয় কিছু লোক ইচ্ছে করেই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ না করার জন্য বিরত রাখে এবং এবারের প্রার্থী আমাদের এলাকার ছেলে, তাই তাঁকে ভোট দিতে এত দিনের প্রথা ভেঙেছেন। উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ আসনে জয়ী মো· হারুনুর রশীদের বাড়ি এই ইউনিয়নে। এ ছাড়া মো· হারুনুর রশীদের স্ত্রী সৈয়দা নাজমুন নাহার নাজমা মহিলাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে উৎসাহিত করেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিটি কেন্দ্রে মহিলাদের জন্য আলাদা বুথের পাশাপাশি রাখা হয় মহিলা এজেন্ট এবং এ ব্যাপারে মাইকিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়। ফলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ৪২ বছর পর এক অসাধ্য সাধন হলো আর নিজের ভোটের অধিকার নিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন নারীরা।
নুরুন্নবী হাছিব
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৪, ২০০৮
Leave a Reply