তুখোড় সাংবাদিকদের মতোই যখন মুক্ত খবর পাঠ করছিল দুই কিশোরী ইতি ও স্মৃতি, তখন উপস্থিত সবার চোখেই বি্নয়। দর্শকসারিতে বসে থাকা কিশোর-কিশোরী ও তাদের অভিভাবকদের মতামত নিয়ে এই খুদে সাংবাদিকেরা মুক্ত খবরের মধ্য দিয়ে তুলে এনেছে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মিরপুরের বাউনিয়া বাঁধ বাজার মাঠে রাড্ডা এআরএইচ প্রকল্প আয়োজিত বার্ষিক কর্মশালা পরিণত হয়েছিল কিশোর-কিশোরী ও অভিভাবকদের মিলনমেলায়। নাটক, রচনা প্রতিযোগিতা, দলীয় সংগীতসহ নানা আয়োজনে অর্ধদিবসের এ অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে সত্যিই উপভোগ্য। অনুষ্ঠানটির আয়োজনে সহযোগিতা করে প্লান বাংলাদেশ এবং বাউনিয়া বাঁধ ও উত্তর কালসী এলাকা উন্নয়ন কমিটি। এতে অর্থায়ন করে কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সিডা)। একঝাঁক শান্তির কপোত ও একগুচ্ছ রঙিন বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধনী বক্তব্যে রাড্ডা এআরএইচ প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ড· এস এম কামাল কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, তাদের স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে, তবে ভবিষ্যতে তারা সুন্দর একটি প্রজন্ম উপহার দিতে পারবে। ঢাকা নর্থ প্লান ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, এই বয়সে কিশোর-কিশোরীরা তাদের মনের কথা বাবা-মাকে বলতে পারে না, আর এ জন্যই এআরএইচ প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে। প্লান বাংলাদেশের এআরএইচ প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো· হাসান আলী বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা সঠিক তথ্যসেবা পাবে ও উপকৃত হবে।’ প্রকল্পের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর সেলিনা নেওয়াজ খান প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম, কর্মসূচি ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন এবং সহযোগিতার জন্য এলাকার সবাইকে ধন্যবাদ জানান। প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে উত্তর কালসীর বাসনা সরকার বলেন, ‘আগে বাবা-মায়েরাও সচেতন ছিল না, কিশোর-কিশোরীরা লজ্জায় কোনো কিছু প্রকাশ করত না। এই প্রকল্প বাবা-মায়েদেরও সচেতন করেছে, কিশোর-কিশোরীদেরও সচেতন করেছে।’ অনুষ্ঠানে এক দল কিশোর-কিশোরী গেয়ে শোনান দুটি দেশাত্মবোধক দলীয় সংগীত। এরপর তারা পরিবেশন করে মিঠু নেশার কবল থেকে বাঁচতে চায় ও কবির এ সমাজের একজন শিরোনামের দুটি উন্নয়ন নাটিকা। একটি নেশার ভয়াবহতাকে কেন্দ্র করে, অন্যটি এইডস সচেতনতা নিয়ে। শুধু গান আর নাটকই নয়, এতে ছিল পুরস্কার বিতরণীও। গত বছরের ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর মিরপুরের সাতটি এলাকায় আয়োজন করা হয়েছিল এক রচনা প্রতিযোগিতার। বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের বর্তমান অবস্থা’। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন এলাকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে যেসব কিশোর-কিশোরী, অনুষ্ঠানের দিন তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্লান বাংলাদেশ এবং এলাকা উন্নয়ন কমিটি ও রাড্ডা এআরএইচ প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
আরাফাত শাহরিয়ার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৪, ২০০৮
Leave a Reply