সময়টা শীতকাল। মাথায় আছে নিশ্চয়ই। অবশ্য না থেকে উপায়ই বা কী? রুক্ষ চুল, শুষ্ক ত্বক আর ফেটে যাওয়া ঠোঁটের দিকে তাকালে কি আর শীতকালটাকে ভুলে থাকার উপায় আছে? যদিও সারা দিনে আবহাওয়া কোনো লুকোচুরি খেলে না, তার পরও শীতের শুষ্কতা আর ধুলোবালির উপদ্রবে ত্বকের দফারফা। দরকার তাই বাড়তি খেয়াল আর আলাদা ভালোবাসা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত যত্নের বিস্তারিত জানিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল।
ফারজানা শাকিলের মতে, এ সময়ে সারা দিনের কিছুটা সময় আলাদা করে রাখা উচিত নিজের জন্য। সেটুকু সময়ের পুরোটা জুড়ে থাকবে ত্বকের যত্ন। যত্নের বেলায় খেয়াল রাখতে হবে, মাথার ত্বক, চুল, হাত-পায়ের ত্বক আমাদের শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গ। নিজেদের প্রতি আমরা সব সময় যত্নবান না হওয়ার ফলে এগুলোর দিকেও বিশেষ খেয়াল করা হয় না, যা একদম ঠিক নয়।
চুল তার কবেকার···
কার না ইচ্ছা হয় পিঠজোড়া দীঘল চুলের। অনেকের তা আছে, অনেকের নেই। যাঁদের আছে তাঁরা ভাগ্যবান বটে। তবে নেই যাঁদের, তাঁরাও পারেন যত্নে যত্নে চুলকে সুন্দর করে তুলতে।
শীতকালে যত্ন বেশি দরকার-এ কথা বুঝে নিলে চাপটা আপনাতেই কমে আসে। শীত বলে অনেকেই প্রতিদিন গোসলটা এড়িয়ে চলেন। এটা ঠিক নয়; বরং বৈরী আবহাওয়ায় এ সময় প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা চায় ত্বক। প্রতিদিন গোসল না করার ফলে চুল হয়ে পড়ে অনুজ্জ্বল ও ময়লা। তাই নিতান্তই অসুবিধা না হলে প্রতিদিন চুল পরিষ্কার করা একান্ত জরুরি।
চুলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তেল লাগাতে হবে। মাথার ত্বকে ঘষে ঘষে তেল লাগানো ভালো। তেল মূলত চুলের গোড়ার ময়লা নরম করে তুলে নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের রক্ত চলাচল তেল লাগানোর ফলে স্বাভাবিক থাকে। তেল লাগানোর আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পর আগে চুল একবার ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিয়ে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগাতে হবে।
তৈলাক্ত চুলে তেলহীন শ্যাম্পু ও শুষ্ক চুলে প্রোটিনযুক্ত শ্যাম্পু লাগাতে হবে। কন্ডিশনার লাগাতে হবে চুলের উপরিভাগে। গোড়ায় লাগানো ঠিক নয়। এতে খুশকির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চুল ধোয়ার সময় প্রচুর পানি ব্যবহার করা উচিত।
চুলের যত্নে বাড়িতে লাগানো যেতে পারে হাতে তৈরি প্যাক। পাকা কলার সঙ্গে টকদই, মধু, আমলা গুঁড়ো, শিকাকাই গুঁড়ো, মেথি গুঁড়ো, খানিকটা মেহেদি গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে মাথার পুরো চুলে লাগাতে হবে। এখানে মনে রাখা জরুরি, গোড়ায় প্যাক লাগানো ঠিক নয়। পুরো মাথায় প্যাক লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য···
মুখে নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে এমনিতেই মুখের ত্বকের আলাদা যত্ন প্রাপ্য। তবু শীতে মুখের সঙ্গে সঙ্গে হাত ও পায়ের ত্বকের প্রতিও বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।
শীতে ত্বকের উপরি ভাগে খড়খড়ে একটা ভাব চলে আসে। কারও বা ছোপ ছোপ কালো দাগ পড়ে। সাদা ফুসকুড়িও দেখা যায় এ সময়। নিয়মিত তাই ত্বক পরিষ্কার রাখতে হয়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। যতবার পারা যায়, পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। যাঁদের মুখের ত্বক স্বাভাবিক তাঁরা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। তবে যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, তারা বেসন বা মসুর ডাল বাটা দিয়ে ধুয়ে নেবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে এবং অবশ্যই টোনার লাগাতে হবে।
বাইরে বেরোনোর আধঘণ্টা আগে সানগার্ড বা সানস্ক্রিন মেখে নিতে হবে।
এ সময় মুখে শুকনো মেকআপসামগ্রীর বদলে তরল সামগ্রী ব্যবহার করা ভালো। মেকআপের আগে ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত।
শীতকালে প্রচুর ফল পাওয়া যায়। যখন যেটা হাতের কাছে থাকে, তা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা ত্বকে দিলে ত্বক আলাদা যত্ন পায়। পাকা পেঁপে চটকে বা আপেল-কমলার রস খানিকটা ত্বকে মাখা যায়।
মসুর ডাল বাটার সঙ্গে কমলার খোসা বাটা, আমন্ড বাটা, একটু কাঁচা হলুদ বাটা এবং মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে। ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
হাত ও পায়ের ত্বকের যত্নে ম্যানিকিওর এবং প্যাডিকিওর সুরক্ষার কাজ করে। হাতের ত্বকে ব্যবহৃত হয় ম্যানিকিওর পদ্ধতি। বাড়িতে বসে ম্যানিকিওর করতে চাইলে প্রথমে নখে নেইলপলিশ থাকলে তুলে নিতে হবে। এরপর নেইলকাটার দিয়ে নখ কেটে ফাইলার দিয়ে ইচ্ছেমতো নখের আকৃতি করে নিন। একটি বড় বাটিতে কুসুম গরম পানিতে হালকা শ্যাম্পু গুলে হাত ভিজিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। হাত তুলে নখের ওপর জাসলিন বা গ্লিসারিন দিয়ে চেঁছে ময়লা তুলে নখকে উজ্জ্বল করে তুলুন। এরপর হাত পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। পায়ের ত্বকের যত্নে একই পদ্ধতি কার্যকর। তবে পায়ের গোড়ালি ঝামা দিয়ে ঘষে মরা কোষ তুলে নিতে হবে। প্রতিদিন ঘুমানোর সময় দুই ভাগ গ্লিসারিনের সঙ্গে এক ভাগ গোলাপ জল মিলিয়ে পুরো ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। সম্ভব হলে পায়ে মোজা পরা ভালো।
পিঠের ত্বকে অ্যাপ্রিকট সাল (বাজারে কিনতে পাওয়া যায়), যা কিনা দানাদার, গুঁড়ো করে ময়দা, তেল ও বেসনের সঙ্গে পেস্ট করে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঘষে তুলে ধুয়ে নিতে হবে।
এ ছাড়া পুরো শরীরের ত্বকে লাগাতে হলে চিনি, লবণ ও ময়দার মিশ্রণ লেবুর রসে পেস্ট করে লাগালে একই রকমভাবে স্ক্রাবিংয়ের কাজ করবে।
ঠোঁটের ব্যাপারে হতে হবে বেশি যত্নশীল। পেট্রোলিয়াম জেলি (ভ্যাসলিন) বা গ্লিসারিন লাগিয়ে ঘুমুতে যাওয়া ভালো। শুষ্ক লিপস্টিক এড়িয়ে চলা উচিত।
জিনাত রিপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৩, ২০০৮
Leave a Reply