“তখন বয়স আর কত হবে, ছয় কি সাত। মাছ ধরার প্রচণ্ড নেশা। দুই বন্ধু হাতে ছিপ নিয়ে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াই। ছিপ ফেলে বসে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা। সবচেয়ে ভালো মাছটা নিজেরাই রেঁধে ফেলতাম। নৌকার গলুইয়ের তলায় মাটির হাঁড়ি, ছোট শিশিতে তেল, কৌটায় লবণ সব সময়ই থাকত। তরকারিগুলো তুলে আনতাম নদীর চরের সবজিক্ষেত থেকে। খেলার ছলে এভাবে রাঁধতে রাঁধতে এখন দেখি একদম পাকা রাঁধুনি হয়ে গেছি।” বলছিলেন খুন্তি কড়াই- বইয়ের লেখক শওকত ওসমান।
৯ জানুয়ারি গুলশানের ওয়ার্ডস অ্যান্ড পেজেসে হয়ে গেল বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেদিন সন্ধ্যার আগেই জমে উঠেছিল ঘরোয়া পরিবেশে আড্ডা। উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে নিমা রহমান জানালেন, এই খুন্তি কড়াই বইটি একটু অন্য ধরনের রান্নার বই। এখানে রান্নার খুঁটিনাটিসহ খাবারগুলোর কোনটা কোথা থেকে এসেছে তারও বেশ খুঁটিনাটি বর্ণনা আছে এবং বইটা সম্পূর্ণ ইংরেজি ভাষায় লেখা। তাঁর কথার খেই ধরে আড্ডা তরতর করে এগিয়ে যেতে থাকে। এর মধ্যে নাজিয়া জানালেন, তিনি প্রায় ১০ বছর ইংল্যান্ডে আছেন এবং বাঙালি রান্নার দারুণ ভক্ত। কিন্তু রান্না একদমই জানেন না। খুন্তি কড়াই বইটা দিয়ে এখন তিনি নিজে রান্না শিখবেন।
তারিক আনাম জানালেন, বছর দশেক আগে টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম চুল-দাড়িওয়ালা এক ভদ্রলোক রান্না করছেন। বেশ সাধুসন্তুদের মতো চেহারা। একসময় তিনি রান্না শেষ করলেন। একদম সাদাসিধে রান্না। দেখে খুব ভালো লাগল। এবার তিনি একটা বই লিখেছেন। পুরোটাই বাঙালি খাবারের। ভাষাটা ইংরেজি হওয়ায় অন্য ভাষাভাষীরাও বইয়ের রান্নাগুলো চেখে দেখতে পারবে। আমরা সত্যিই আনন্দিত।
বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা। কেউ একজন রঙিন কাগজে মোড়া খুন্তি কড়াই বইটি তুলে দিলেন শওকত ওসমানের হাতে, লেখকের হাতেই মোড়ক উন্মোচিত হলো। হাতে হাতে ঘুরতে থাকল খুন্তি কড়াই।
সিদ্ধার্থ মজুমদার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৩, ২০০৮
Leave a Reply