ঘিয়ে রং পাপড়ির সুগন্ধযুক্ত বাহারি ফুল ক্যানাঙ্গা। এর কোনো বাংলা নাম নেই। মালয় ভাষায় ক্যানাঙ্গা হলো ইয়াং ইয়াং। ক্যানাঙ্গা গ্রী্নমণ্ডলীয় ফুল। এগুলো দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জে খুব বেশি চোখে পড়ে। উদ্ভিদবিজ্ঞানে ক্যানাঙ্গার নাম Cananga Odorata.
১৯৯৮ সালে ফুলটি প্রথম দেখি। সেদিন সঙ্গে একজন তরুণ প্রকৃতিবিদ ছিলেন। ক্যানাঙ্গা দেখে তাঁর মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া বা উচ্ছ্বাস দেখা গেল না। বরং তিনি বললেন উল্টোটা, ‘এটা কোনো ফুল হলো!’ তবে আমি অভিভূত হয়েছি এর গন্ধে-বর্ণে। নিশ্চিত, আপনিও হবেন।
ক্যানাঙ্গার মিষ্টি ঘ্রাণে রয়েছে অসাধারণ এক টান। একদম অন্য রকম। ফুল যত পুরোনো হয়, তার সৌরভ ঠিক ততটাই যেন পাখা মেলে। ক্যানাঙ্গা ফুলের কাঁচা-পাকা একটা ব্যাপার রয়েছে। কাঁচা ফুলের গন্ধ এক রকম, ফুল পেকে হলুদ হলে আরেক রকম। পাকা ফুলের গন্ধ যেন এক রহস্য। মনে হবে, খুব পরিচিত, খুব চেনা চেনা। কিসের সঙ্গে যেন মিল রয়েছে। খুঁজতেই থাকবেন এবং শেষে বুঝতে পারবেন-পাকা ক্যানাঙ্গা লবঙ্গের সৌরভ ছড়ায়! বসন্তকালে বেশি ফুটলেও ক্যানাঙ্গা সারা বছরের ফুল। গাছের উজ্জ্বল সবুজ পাতা বর্শার ফলার মতো চোখা। ডালপালা ততটা শক্ত নয়। উচ্চতায়ও ক্যানাঙ্গা তেমন আহামরি নয়। সাত-আট ফুট উচ্চতার ক্যানাঙ্গা বাংলাদেশে মূলত বলধা বাগানে দেখা যায়। সিবিলি ও সাইকি-দুই ভাগেই অনেক গাছ রয়েছে। ফুলের সৌরভ হাসনাহেনার মতো দূর থেকে টানবে না। তবে কাছে গেলে আপ্লুত হবেন। সুগন্ধি শিল্পের জন্য হাওয়াইয়ে এর ব্যাপক চাষ হয়। তবে বাংলাদেশে ক্যানাঙ্গা দুষ্প্রাপ্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বহু চেষ্টা করেও ক্যানাঙ্গার বংশের গতিপথ রাজশাহীতে নিতে পারেননি। সে জন্যই হয়তো আমিও ক্যানাঙ্গা বলধা ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাইনি।
ফারুখ আহমেদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৬, ২০০৮
Leave a Reply