এবারই প্রথম ‘না’ ভোট যুক্ত হলো ব্যালটে। বিষয়টি অনেকের কাছেই একেবারে নতুন। এ নিয়ে রয়েছে জনমনে নানা ভাবনা ও কৌতূহল। আক্ষরিক অর্থেই এবারের ব্যালটটি প্রকৃত জনমত যাচাইয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। অথচ ‘না’ ভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এ বিষয়ে নগরবাসীর নানা ভাবনার কথা লিখেছেন কাওছার শাকিল
“ভাই কিতা কন বুঝি না। ‘না’ ভোট কইত্থুন আইলো কন দেহি? ‘হ্যাঁ’ ভোট ‘না’ ভোট তো দেইখছিলাম একবার এরশাদ প্রেসিডিন আছিলো যহন হেইকালে। হেইতার কথা নি কন?” না ভোটের কথা শুনে এ কথাই বললেন রিকশাচালক আলমগীর। এবারের নির্বাচনের ব্যালটে যে ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ আছে সে কথাটা তিনি জানতেন না। বিষয়টি কী সে সম্বন্ধে তেমন কোনো ধারণাও নেই তাঁর। আরেক রিকশাচালক আনারুল বললেন, ‘না ভোডের কথা আগের নির্বাচনেও হুনি নাই। মনে লয় এইবার পয়লা আইছে। হেইডার মার্কাডা দ্যাকতে কিরুম কইতে পারেন নি?’
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বাবুলও বললেন প্রায় একই রকম কথা, “সংসদে ‘হ্যা-না’ ভোট হইছিল নব্বই সনের দিকে, সেইডা খেয়াল আছে। নতুন এইডার নাম আপনের কাছেই হুনলাম।”
খুঁজলে হয়তো আরও অনেককে পাওয়া যেত, যারা প্রথম শুনছেন ‘না’ ভোটের কথা। এবার সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংযোজিত হয়েছে ‘কাউকেই নয়’ এই প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ। অর্থাৎ কোনো ভোটারের যদি কোনো প্রার্থীকেই যোগ্য মনে না হয়, তবে সে ক্ষেত্রে তিনি ‘কাউকেই নয়’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে নিজের মত প্রকাশ করতে পারবেন। কোনো নির্বাচনী আসনে ভোটের শতকরা ৫০ শতাংশ যদি ‘না’ ভোট পড়ে, তবে ওই আসনে পুনর্নির্বাচন হবে। একজন ভোটারের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য এটিই সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যালট বলে মনে করছেন অনেকে। যেমন ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মী আহসান হাবিব টিটু মন্তব্য করলেন, “না ভোটটা বাংলাদেশের জন্য খুবই কার্যকর হবে। সচেতনতা বাড়াতে পারলে ‘না’ ভোট দেশের সাধারণ মানুষের সত্যিকারের মতামতটা তুলে ধরতে পারবে। অযোগ্য লোকেরা নিজেদের হাতে দেশের শাসনভার নিতে পারবে না। প্রার্থী যাচাই-বাছাই করার পরিপূর্ণ সুযোগ পাবে সাধারণ মানুষ। তাই বিষয়টা আরও একটু ভালোভাবে প্রচার করা দরকার।”
৭০ বছরের বৃদ্ধ সানাহ উল্লাহ বলেন, আগে ভালোমন্দ বিচারের কোনো সুযোগ ছিল না। অনেক সময় মন না চাইলেও অযোগ্য বা তুলনামূলকভাবে কম যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে একরকম বাধ্য হতো সাধারণ মানুষ। এখন অন্তত সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কারণ, আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে নয়; আমার যাকে যোগ্য মনে হবে তাকে দেব এবং আমার যদি কাউকেই যোগ্য মনে না হয়, তাহলে আমি আমার অনাস্থা জ্ঞাপন করতে পারব। সত্যি সত্যিই স্বাধীন মত প্রকাশের পথ খুলে দিল ‘না’ ভোট।
অনেকেই আবার আগেভাগে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ‘না’ ভোট দেওয়ার ব্যাপারে। ‘না’ ভোট নিয়ে তাই ‘গৃহবধূ তাহমিনা শারমিন দীনা বললেন, “আমি তো সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলছি ‘না’ ভোট দেব। আমার কোনো প্রার্থীকেই পছন্দ হয় নাই।” রংমিস্ত্রি জাফর মোল্লা বললেন, “কেন্ডিডেট পছন্দ হইবে না, কোনো কথাবার্তা নাই, দিমু ‘না’ বাক্সে সিল মাইরা।” অতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ না হলেও খানিকটা ঝুঁকে আছেন হাফিজা, “আমার মনে হয় না আমাদের দেশের পলিটিক্যাল নেতাদের ওপর খুব একটা নির্ভর করা যায়। আর জেনেশুনে কোনো অসৎ মানুষকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসাটা বোকামি। এ ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকাতে আসলেই অনেক ভালো হইছে। উম্…এখনো কিছু ঠিক করি নাই, দেখা যাক কী করি…।”
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৪, ২০০৮
Arif
na vot dile 1 jon kharap manus chance pea jete pare