পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পূর্ব ফটকের আশপাশ এলাকায় ৩৫ বছর ধরে চটপটি বিক্রি করছেন আরব আলী (৭৩)। মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর আরব আলী পেটের দায়ে স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আসেন ঢাকায়। কী করবেন ভেবে পান না। পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে গ্রাম থেকে আনা অল্প কিছু টাকা দিয়ে একটি গাড়ি ও চটপটি তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে বসে পড়েন বাহাদুর শাহ পার্কের এ ফটকে, শুরু করেন চটপটির ব্যবসা। প্রথমে শ্যামবাজারের আড়তদারদের কাছ থেকে অল্প দামে কিনে আনতেন পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা। এগুলো এখন তাঁকে চড়া দামে কিনতে হয়। তাই বর্তমানে তাঁর লাভ হয় কম। আরব আলী বলেন, ‘এক আনা করি চটপটি বিক্রি কইরতাম। এহন হেই পেলেট ১০ ট্যাকা করি বিক্রি করতি হয়। আগে এক আনায় ফুসকা দিতাম ১২-১৪টা, এহন ১০ ট্যাকায় ফুসকা দিই পাঁচ-ছয়টা। আগে লাভ হইত অনেক, এহন হেই পরিমাণ লাভ করতি হারি না।’
ধীরে ধীরে আরব আলীর সংসার বড় হয়। পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের সংসার। সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস তাঁর এ চটপটির ব্যবসা। অভাবের কারণে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাতে পারেননি আরব আলী। তিনি বলেন, ‘ক্যামনে পড়ামু কন, এই চটপটি বেচাকিনা করি যে কামাই হয়, তা দিয়া এত বড় সংসার চালাইতে হিমশিম খাইতে হয়। সারা জীবন এক রুমের বাসা নিয়ে থাকতাছি। প্যাট চালাইতে কষ্ট হইত, পড়ামু ক্যামনে কন।’
চটপটির ব্যবসা করে আরব আলী তাঁর চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলেকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে বুটের ব্যবসা করার জন্য একটি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। সেই গাড়ি বিক্রি করে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে গত বছর ছেলেকে আবুধাবি পাঠিয়েছেন তিনি। ছোট মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি। আর ছোট ছেলেটা বর্তমানে তাঁর চটপটি ব্যবসার কাজে সাহায্য করে।
বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া আরব আলীর চটপটির প্রধান খরিদ্দার হলো আশপাশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও সান্ধ্যভ্রমণে আসা পার্কের লোকজন। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে শুরু হয় তাঁর ব্যবসা, চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। আরব আলী বলেন, ‘এহন যে সময় হইছে, এ ব্যবসা কইরা পেট চালানো দায় হইয়া যাইব। তাই পোলারে আর এ ব্যবসা করতে দিমু না। হেরা হেগো যা ভালো লাগে তা-ই করব। যত দিন বাঁইচা আছি, তত দিন এ ব্যবসা করমু। আর তো কিছু করার নাই।’
আলমগীর হোসেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৪, ২০০৮
Leave a Reply