কণ্ঠস্বর মানুষের এক অমূল্য সম্পদ। সুন্দর কণ্ঠস্বর সকলেরই কাম্য। বিশেষ করে যারা কণ্ঠস্বরনির্ভর পেশা, যেমন শিক্ষকতা, রাজনীতি, অভিনয়, আবৃত্তি, সংবাদ পরিবেশন, সংগীত ইত্যাদিতে জড়িত তাদের কাছে সুন্দর কণ্ঠস্বর কতটা প্রয়োজন তা বলাই বাহুল্য। কণ্ঠস্বর বিকৃতি কিংবা কণ্ঠস্বর নষ্ট হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। মূলত স্বরধ্বনি শ্বাসযন্ত্রের যে অংশ থেকে তৈরি হয় সেখানকার বিভিন্ন অসুখের সূচনাতেই স্বরভঙ্গ ঘটে কিংবা কণ্ঠস্বর ভেঙে যায়। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে এই সব সমস্যার অধিকাংশই সেরে ওঠে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, সময়োচিত উপদেশ তথা যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে। এই বাস্তবতায় ১৩ মে ২০০৮ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি (ইএনটি) বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ১ম জাতীয় মাইক্রোল্যারিঞ্জিয়াল সার্জারি (ফোনোসার্জারি বা কণ্ঠস্বরসম্পর্কিত শৈল্য চিকিৎসা) বিষয়ক কর্মশালা। মাইক্রোল্যারিঞ্জায়াল সার্জারির এই কর্মশালায় মূল আকর্ষণ ছিল লেজার সার্জারি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো দেশের কোন জাতীয় কর্মশালায় কণ্ঠনালীর ওপর লেজার রশ্মি প্রয়োগে অপারেশন করলেন দেশের প্রখ্যাত নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.
মোঃ জিল্লুর রহমান। লেজার নির্ভর কণ্ঠনালীর লাইভ সার্জারি প্রদর্শনসহ বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ উপস্থাপন করতে যেয়ে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বলেন, কণ্ঠনালীর সূক্ষ্ন অপারেশনসহ নাক কান গলার অনেক অপারেশনই অত্যন্ত সফলভাবে লেজারের মাধ্যমে করা যায়। গত কয়েকমাস ধরে নাক কান গলায় বিভিন্ন ধরনের লেজার সার্জারি করছেন তিনি। লেজার হচ্ছে বিশেষ ধরণের আলোক রশ্মি। এই রশ্মিকে ব্যবহার করা হয় অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত ব্লেডের বিকল্প হিসেবে কিংবা বৈদ্যুতিক প্রবাহ দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার উন্নত বিকল্প প্রযুক্তি হিসেবে। লেজারের সুবিধা হচ্ছে অত্যন্ত সরু ও সূক্ষ্ন রেখার মতো এটি যেমন কাটতে পারে তেমনি কাটা অংশটুকু কতটুকু গভীর হবে তাও আগে থেকে নির্দিষ্ট করে দেয়া যায়। লেজার রশ্মি একই সঙ্গে কাটে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারে। কোনো কোনো সময়ে কোষ-কলাকে বাষ্পীভূত করে দেয়া যায়। এই সব কাজের সময় আশপাশের কোষ-কলা ততটা প্রভাব পড়ে না। তাই অপারেশনজনিত ইনজুরি খুবই কম হয় বলে জানালেন অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান। তবে এই অপারেশনের জন্য সার্জনকে অবশ্যই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত হতে হবে। একইভাবে অজ্ঞানের কাজে নিয়োজিত চিকিৎসককে হতে হবে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। তবে নাকের অপারেশনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী অজ্ঞান করে অবশ করেই কাজটি করা যাচ্ছে।
নাক কান গলা বিষয়ে যে সব অপারেশন লেজার রশ্মি প্রয়োগে করা যায় সেগুলো হচ্ছে-
নাকের টারবিনোপ্লাস্টি বা এলার্জিজনিত কারণে নাসারন্ধে ্র বেড়ে যাওয়া মাংসপিন্ডকে কার্যকরভাবে সঙ্কুুচিত করে দেয়া।
নাকের পলিপ কেটে ফেলা।
কানের পলিপ কেটে ফেলা।
জিহবার কিংবা গালের ভিতরের দিকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা মাংসপিন্ড কিংবা টিউমার/ ক্যান্সারের অপারেশন।
নাকডাকা কিংবা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের জন্য প্রযোজ্য অপারেশন।
টনসিলের অপারেশন, কণ্ঠনালীর ভোকাল কর্ডে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের পিন্ড কেটে ফেলা।
নাকের ভিতর দিয়ে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়া দূর করার জন্য প্রযোজ্য অপারেশন ইত্যাদি।
লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সব অপারেশনের বাড়তি সুবিধা হলো-
অপারেশন সুনির্দিষ্টভাবে দরকারী স্থানে করা যায় বলে কাটাছেঁড়া অনেক কম লাগে ফলে অপারেশনজনিত আঘাত কম হয়।
রোগী তুলনামূলকভাবে অপারেশনের পর অনেক কম ব্যথা অনুভব করে।
খুব কম সময় হাসপাতালে থাকতে হয়।
লেজার দিয়ে কাটাছেঁড়া করা হয় বলে রক্তক্ষরণ হয় না বললেই চলে।
রোগী দ্রুত সেরে ওঠে।
কর্মশালায় দেশের প্রায় ২ শতাধিক নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ গভীর আগ্রহ নিয়ে বড় পর্দায় কণ্ঠনালীতে লাইভ লেজার সার্জারি অবলোকন করেন। লেজার সার্জারির দেশে একটি নতুন বিষয় হওয়ায় এর প্রতি যেমন চিকিৎসকদেরও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তেমনি আগ্রহ রয়েছে রোগীদেরও। তবে এর সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। ইএনটি সাধারণত ডায়ো ও কার্বন ডাই অক্সাইড লেজার ব্যবহার করা হচ্ছে।
———————-
ডা. শারমিন সুলতানা
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৫ মে ২০০৮
জাকির বেপারী
যারা ”তোতলা” তাদের জন্য এই প্রযুক্তি কি কোনো উপকারে আসবে ?
বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।