বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহে ঘাটতি ও দাম বাড়ার কারণে এই উপমহাদেশের চামড়াশিল্প এখন সমস্যার মুখে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী ভারত এবং পাকিস্তানের চামড়া খাতেও বর্তমানে সংকট চলছে। এই সংকট মোকাবিলা করে অদূর ভবিষ্যতে রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাদুকা উৎপাদনকারী দেশ ভারত। তবে আর্থিকভাবে অসামর্থ্যের কারণে আপাতত চামড়া খাতকে সহায়তা দিতে পারছে না পাকিস্তান।
ভারতঃ ২০০৭-০৮ অর্থবছরটি ভারতের চামড়াশিল্পের জন্য ছিল বেশ পয়মন্ত সাল। কারণ ওই বছরে দেশটি ৩৪৭ কোটি মার্কিন ডলারের সমমূল্যের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে। যা আগের বছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। কিন্তু অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি কাঁচামালের দাম ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সরবরাহেও ঘাটতি রয়েছে। এর ওপর রপ্তানি অর্থায়নের সুদহার বেড়ে যাওয়ার কারণেই ভারতীয় চামড়াশিল্প বড় ধরনের ধাক্কা খায়। দেশটিতে রপ্তানি-অর্থায়নে সুদের হার দুই বছর আগে যেখানে ৯ শতাংশ ছিল, সেখানে তা বেড়ে ১২ থেকে ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
চামড়াশিল্পে ভারত প্রাকৃতিকভাবেই একটি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশই হয় দেশটিতে। ভারতে গত বছরে মোট ২০০ কোটি বর্গফুট চামড়া উৎপাদিত হয়েছে। বিশ্বে পাদুকা উৎপাদনে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। শীর্ষস্থানটি রয়েছে চীনের দখলে।
আগামী ২০১০-১১ সাল নাগাদ চামড়া রপ্তানির মাধ্যমে ৭০০ কোটি ডলার আয় করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এই লক্ষ্য অর্জনে ২০০৭-১২ সাল মেয়াদি ১১তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যেটির নাম ভারতীয় চামড়া উন্নয়ন কর্মসূচি (আইএলডিপি)। সরকার এই কর্মসূচির আওতায় ৯১২ কোটি রুপির একটি তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু এই পদক্ষেপে আদৌ কোনো কাজ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন চামড়া রপ্তানি পর্ষদের (সিএলই) চেয়ারম্যান মুখতারুল আমিন। সিএলই চায়, বেসিক ক্রোমিয়াম সালফেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কহার বিদ্যমান ২৮ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক।
পাকিস্তানঃ পাকিস্তানে গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদে কোরবানির পশুর দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে সেই দেশের বড় ব্যবসায়ীরা গরু, ছাগল ও ভেড়া নির্বিশেষে চামড়ার দর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তাঁরা ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাকসহ চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার কথা বলেছেন।
বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, পাকিস্তানে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবারের ঈদে পশু কোরবানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন কোরবানির পশুর দাম বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ মূল্যস্কীতি ও বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে তাঁরা জানান।
পাকিস্তান লেদার গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফাওয়াদ এজাজ ডন পত্রিকাকে জানান, ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতাদের কাছ থেকে এবারে ব্যাপকহারে ফরমায়েশ কমেছে।
পাকিস্তান গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলার মূল্যের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে; যা আগের বছরের একই সময়ের ৩৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের রপ্তানির চেয়ে শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কম।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী আসিফ শাহও তাঁর দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারকদের সামনে কঠিন সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন।
এদিকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত করাচিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চামড়া খাতে কোনো রকম আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, খোদ সরকারই বর্তমানে চরম আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে।
এ টি এম ইসহাক
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৮
Leave a Reply