নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে, যা আমেরিকার ইতিহাসে ১৯৭৪ সাল-পরবর্তী ৩৪ বছরের মধ্যে এক মাসে সর্বোচ্চ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা। সেই দেশের শ্রম দপ্তর গত শুক্রবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দা নাটকীয়ভাবে আরও খারাপের দিকে যাওয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলছে। দেশটিতে বেকারত্বের হার অক্টোবরের সাড়ে ছয় থেকে বেড়ে নভেম্বরে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে উঠেছে।
এ নিয়ে আমেরিকায় টানা ১১ মাস কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তরের তথ্যের চেয়ে নভেম্বরে কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ এ তথ্য সংকলনের পর আরও কিছু প্রতিষ্ঠান জনবল ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের আলোকে মনে করা হচ্ছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা আরও ঘনীভূত হয়ে দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক সংকট মন্দায় রূপ নিয়েছে-সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এমন ঘোষণা দেওয়ার চার দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও তা স্বীকার করেছেন। হোয়াইট হাউসে তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে এখন মন্দা চলছে। আমাদের আবাসন খাত এবং ঋণ ও আর্থিক বাজারে সংকটের কারণে এ মন্দা ত্বরান্বিত হয়েছে।’
নিউইয়র্কে গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস শুক্রবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে প্রতি ব্যারেল (১১ দশমিক ৩৫ লিটার) ৪১ দশমিক ৭৪ ডলারে নেমে আসে। এটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে গত চার বছরে জ্বালানি তেলের সর্বনি্ন দাম। কয়েক মাস ধরে জ্বালানি তেলের দাম কমাটা প্রত্যাশিত হলেও তা এতটা নিচে নেমে আসাতে আবার নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ তেলের দাম এত নিচে নেমে আসার বিষয়টিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার লক্ষণ বলে মনে করা হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নভেম্বর মাসে ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত ও সহজ কোনো পথ নেই। ঘুরে দাঁড়ানোর আগে এ সংকট বছরের পর বছর ধরেও চলতে পারে।’
অন্যদিকে বিশ্লেষকেরা কর্মী ছাঁটাইকে দেখছেন মার্কিন অর্থনীতির ক্রমাগত খারাপের দিকে চলে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক পিটার মরিসি বলেন, ‘মার্কিন অর্থনীতি আমাদের আশঙ্কার চেয়েও অনেক বেশি খারাপ হচ্ছে। ব্যাপক মন্দাই এখন মার্কিন অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতা।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকট থেকে মন্দা দেখা দেওয়ার কথা ইদানীং বলাবলি হলেও এটি আসলে বছরখানেক আগেই শুরু হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো গত সপ্তাহে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরেই আর্থিক মন্দা শুরু হয়েছে।
এ টি এম ইসহাক
সূত্রঃ বিবিসি।
Leave a Reply