প্রাত্যহিক জীবনের দুটো অপরিহার্য সেবার নাম বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ। ঐতিহ্যগতভাবে এ দুটি সেবা সরকারি ব্যবস্থায় পরিচালিত। সরকারি খাতের অরাজকতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থার সঙ্গে বিটিটিবি বা টিঅ্যান্ডটির নাম সংযুক্ত। বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ খাতে দেশের মানুষের ভোগান্তি সর্বজনবিদিত। এ ভোগান্তি অবসানে এ প্রতিষ্ঠান দুটির কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে বহুদিন। যেমন বিদ্যুৎ খাত পিডিবির অব্যবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য রাজধানী ঢাকাকে উপহার দেওয়া হয় ডেসা/ডেসকো।অবশ্য টেলিযোগাযোগের মধ্যমণি টিঅ্যান্ডটি রূপান্তরের প্রক্রিয়া বহুদিন থমকে থাকার পর অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিফোন কোম্পানি নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে।
সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির গবেষণা বিভাগের উদ্যোগে ডেসা/ডেসকো ও বিটিটিবির সেবার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গ্রাহকদের মতামত সংগ্রহ করার জন্য দুটি পৃথক জরিপ গবেষণা পরিচালিত হয়। জরিপ গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অংশগুলো উপস্থাপিত হলোঃ
জরিপে অংশগ্রহণকারী ছিলেন শিক্ষিত শহরবাসী। পারপাসিভ চয়নের মাধ্যমে বিটিটিবির ৩৩০ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ চাকরিজীবী, ২৩ শতাংশ ব্যবসায়ী, ৫ শতাংশ গৃহিণী ও ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ অন্যান্য শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন। উত্তরদাতাদের ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ স্মাতক ডিগ্রির অধিকারী, ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ স্মাতকোত্তর, ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ স্মাতক পূর্ব ও ১০ শতাংশ অন্যান্য যোগ্যতার প্রতিনিধিত্ব করেন ও বিটিটিবির কাছ থেকে গড়ে ১২ বছর সেবা গ্রহণ করেছেন। ডেসা/ডেসকোর জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৯৬ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ চাকরিজীবী, ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যবসায়ী, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ গৃহিণী ও ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ অন্যান্য শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী ও ৬০ শতাংশ পুরুষ। উত্তরদাতাদের ৩৮ শতাংশ ২১ থেকে ৩০ বছর, ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ৩১ থেকে ৪০ বছর ও ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সসীমার মধ্যে পড়েন।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী পূর্বতন বিটিটিবির গ্রাহক উত্তরদাতাদের সর্বাধিক সংখ্যক (৩৬ দশমিক ১ শতাংশ) লাইনে সমস্যাজনিত সমস্যার সম্মুখীন হন। এ ছাড়া ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ অতিরিক্ত বিল, ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ অচল লাইন, ১২ দশমিক ২ শতাংশ অনিয়মিত বিল প্রভৃতি সমস্যার সম্মুখীন হন। ডেসা/ডেসকোর গ্রাহকেরা লোডশেডিং (৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ), লো-ভোল্টেজ (২১ দশমিক ৯ শতাংশ), অতিরিক্ত বিল (৯ দশমিক ৪ শতাংশ) প্রভৃতি সমস্যার মধ্যে থাকেন।
উভয় প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকেরাই সাধারণত স্থানীয় ক্যাম্প (বিটিটিবি ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ, ডেসা/ডেসকো ৭৩ শতাংশ) উচ্চতর কর্তৃপক্ষ (বিটিটিবি ১৭ দশমিক ২ শতাংশ, ডেসকো ১৩ দশমিক ২ শতাংশ), মাঝেমধ্যে প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজন (১০ দশমিক ২ শতাংশ বিটিটিবি, ১০ দশমিক ১ শতাংশ ডেসা/ডেসকো) ও সংবাদ মাধ্যমে (বিটিটিবি ১ দশমিক ৭ শতাংশ, ডেসা/ডেসকো ৩ দশমিক ৩ শতাংশ) অভিযোগ করে থাকেন।
গ্রাহকেরা সাধারণত একই মাধ্যমে অভিযোগ করে থাকেন। অভিযোগ কেন্দ্রে সরাসরি উপস্থিত হয়ে (বিটিটিবি ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ, ডেসা/ডেসকো ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ), ফোনের মাধ্যমে (বিটিটিবি ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ, ডেসা ৩২ দশমিক ১ শতাংশ), অভিযোগ কেন্দ্রে অন্য কাউকে পাঠিয়ে (বিটিটিবি ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ডেসা/ডেসকো ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ) সংবাদমাধ্যমের চিঠিপত্র কলামে (বিটিটিবি ১ দশমিক ৫ শতাংশ, ডেসা/ডেসকো ২ দশমিক ৪ শতাংশ) ও অন্যান্য (বিটিটিবি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ডেসা/ডেসকো ৫ দশমিক ৩ শতাংশ) কেন্দ্রে অভিযোগ পেশ করেন।
গ্রাহকেরা অভিযোগ করেছেন (বিটিটিবি ৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ডেসা/ডেসকো ৮৪ দশমিক ৪ শতাংশ) প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা আর্থিক সুবিধা দাবি করেছেন । বিল পাওয়া ও পরিশোধের ক্ষেত্রে উভয় প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকেরা একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। ৩১ দশমিক ২ শতাংশ বিটিটিবির গ্রাহক ও ৩০ দশমিক ২ শতাংশ ডেসা/ডেসকোর গ্রাহকেরা সঠিক সময়ে বিল পেয়ে থাকেন। বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে মাত্র ৩০ শতাংশ বিটিটিবি গ্রাহকেরা ও ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ ডেসা/ডেসকোর গ্রাহকেরা বিল পরিশোধে ভোগান্তির সম্মুখীন হন না।
সরকারি কর্মকর্তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকাংশেই প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি দপ্তরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না, এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা বিটিটিবির এবং ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা ডেসা/ডেসকোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে খুঁজে পাননি। সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা বিষয়েও প্রশ্নের অবকাশ আছে।
[জরিপ পরিচালন ও বিশ্লেষণঃ সৈয়দ সাদরুল হুদা-সহকারী অধ্যাপক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। সেগুফতা দিলশাদ-রিসার্চ ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি এবং ড• সৈয়দ সাদ আনদালীব-অধ্যাপক, পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।]
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৭, ২০০৮
Leave a Reply