ইন্টারনেটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতি কেমন-এ প্রশ্ন এই একুশ শতকে এসে যে কারও মনে আসতে পারে। তবে প্রশ্নের উত্তর খুশি হওয়ার মতো নয়, এটাও ধরে নেওয়া যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে যতটুকু উপস্থিতি রাজনৈতিক দলগুলোর তা মূলত জাতীয় নির্বাচনের সময়। আর রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়েবসাইট দেখে প্রথম যে প্রশ্নটি মনে আসে-কাদের জন্য এ ওয়েবসাইট? বাংলাদেশিদের জন্য, নাকি বিদেশিদের জন্য?
বাংলাদেশের মানুষ ও ভোটাররা আশা করতে পারে, বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়েবসাইটের মূল ভাষা হবে বাংলা। তারপর সেই সাইটের একটি ইংরেজি সংস্করণ থাকলেও থাকতে পারে, এই যুক্তিতে যে, আন্তর্জাতিক ভাষায় সবকিছুই থাকা ভালো। কিন্তু বাংলা বাদ দিয়ে ইংরেজি নিশ্চয়ই নয়। যা হোক, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এ বিষয়ে উদাসীনতা লক্ষণীয়। এমনিতেই দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের ওয়েবসাইট নেই। দ্বিতীয়ত, যাদের ওয়েবসাইট আছে, তাদের বেশির ভাগের বাংলা সংস্করণ নেই। আর দেশের বৃহত্তম দুটি দলের একটি বিএনপির ওয়েবসাইট (www.bnpbd.com) এখনো নির্মাণাধীন। প্রথম পাতায় লেখা আছে, ‘দিজ সাইট ইজ আন্ডার কনস্ট্রাকশন, কামিং সুন উইথ নিউ ফিচারস।’ এক মাস ধরে এ বার্তা দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচন সামনে রেখে কোন কোন রাজনৈতিক দলের ওয়েবসাইট নিয়ে এ প্রতিবেদন লেখা হবে, তা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট www.ecs.gov.bd/Bangla থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা নেওয়া হয়েছে। তালিকায় থাকা দলগুলো হলো-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল-এমএল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট ইত্যাদি।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের তথ্য হিসেবে দেওয়া আছে দলের নাম, প্রতীক, নিবন্ধন নম্বর, নিবন্ধনের তারিখ, প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিবের নাম; ঠিকানার মধ্যে আছে ডাক ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা। এর মধ্যে সবার ফোন নম্বর থাকলেও ফ্যাক্স ও ই-মেইল ঠিকানা অনেকেরই নেই। ই-মেইল ঠিকানা আছে ১৯টি রাজনৈতিক দলের। তবে বিএনপির কোনো ই-মেইল ঠিকানাও দেওয়া নেই। ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া আছে জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির।
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল দিয়ে খোঁজ করলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মাত্র ছয়টি রাজনৈতিক দলের ওয়েব ঠিকানা পাওয়া গেছে। দলগুলো হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (www.cpbdhaka.org), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (www.albd.org), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) (www.bnpbd.com), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (www.jamaat-e-islami.org), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (www.bkp-bd.org) এবং বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (www.bikolpodhara.com)। এর মধ্যে বিএনপির ওয়েবসাইট নির্মাণাধীন সে কথা আগেই বলেছি। তা ছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ওয়েবসাইট বর্তমানে কার্যকর নয়। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের একটি ওয়েব ঠিকানা থাকলেও সেটি সক্রিয় নয়। তবে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহী বি চৌধুরীর ব্যক্তিগত পৃষ্ঠা আছে। ফেসবুকে আরও আছে বিকল্প ধারার নির্বাচনী জোট যুক্তফ্রন্টের স্বেচ্ছাসেবক ইউনিট আলোর মিছিলের একটি অনলাইন গ্রুপ। এতে লেখা আছে আলোর মিছিলের সদস্যরা ২০০৮-এর নির্বাচনে পরিবর্তন আনতে চান। আরেকটি নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ওয়েবসাইট না থাকলেও ব্লগস্পটে তাদের একটি ব্লগ আছে। ঠিকানাঃ http://bangladeshkhelafatandolan.blogspot.com। এ বছর অক্টোবরের ৯ তারিখে সর্বশেষ পোস্ট এখানে ছাপা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে সাইটম্যাপ দেওয়া আছে। সাইটম্যাপ বোতাম টিপে আপনি একনজরে দেখে নিতে পারেন নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে কী কী দেওয়া আছে। যেমন-আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে আপনি দলটির ইতিহাস, গঠনতন্ত্র, বিভিন্ন স্তরের কমিটি, দলের নানাবিধ সংবাদ, দলীয় সভাপতির বক্তৃতা ও তাঁর লেখা প্রবন্ধ, বাংলা সংবাদ ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
এটি প্রতিদিনই হালনাগাদ করা হচ্ছে। সাইটের প্রথম পাতায় বাঁ দিকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও প্রেসিডেন্ট কর্নারস নামে একটি বিভাগের অধীনে তাঁর বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার, বাণী ও তাঁর লেখা প্রবন্ধের পৃথক বোতাম দেওয়া আছে। এখান থেকে আপনি পছন্দ অনুযায়ী বিষয় বেছে নিতে পারবেন। প্রথম পাতার ডান দিকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি দিয়ে তাঁর ব্লগের ঠিকানা দেওয়া আছে। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, জয় হলেন ব্লগ করা প্রথম বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ। তাঁর ব্লগে গিয়ে আপনি এ বছরের জানুয়ারির ৩১ তারিখে তাঁর মায়ের বিচারের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে লেখা একটি ব্লগ বা ডায়েরির পাতা পাবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে দলের সর্বশেষ সংবাদ পাবেন।
জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে আপনি দলটির উদ্দেশ্য, ইতিহাস, নেতৃত্ব, শাখাসংক্রান্ত তথ্য ছাড়াও তাদের বিভিন্ন প্রকাশনা, ভিডিও ও অডিও ফুটেজ পাবেন। দলীয় কর্মকাণ্ডের অনেক ছবি এখানে পাবেন। এ ছাড়া এ ওয়েবসাইটের একটি বাংলা সংস্করণ রয়েছে। বাংলা লেখা বোতাম টিপে সেখানে যাওয়া যাবে।
আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-দুটি দলের সাইটেই মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে কমিউনিস্ট পার্টির ওয়েবসাইটের কন্ট্যাক্ট আস বা যোগাযোগ বোতামটি সক্রিয় নয়। এ ওয়েবসাইটের বেশির ভাগ বোতামই নিষ্ত্র্নিয়, যেমন একতা, অনলাইন ফরম, ফটো গ্যালারি ইত্যাদি।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় রাজনৈতিক দলের ওয়েবসাইট ছিল সমানে সমান। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সেই নির্বাচনে উভয় রাজনৈতিক দলের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। এমনকি তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির বিষয়ে তারা কী করবে, সে কথা গুরুত্ব দিয়েই উল্লেখ করেছে। সাত বছর আগে নির্বাচনে টিভি, রেডিও ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অগ্রগামী রাজনৈতিক দলগুলো এবার এখনো তেমন সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। ১/১১-এর পর যে পরিবর্তনের হাওয়া, তাতে সেটি কাঙ্ক্ষিত নয়।
ই-মেইলঃ [email protected]
মোহাম্মদ গোলাম নবী
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৫, ২০০৮
Leave a Reply