ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে ২৬ নভেম্বর রাতে ভয়াবহতম সন্ত্রাসী হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের (সোশ্যাল মিডিয়া) সাইটগুলো মেসেজের বন্যায় ভেসে যায়। প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটি করে বার্তা এসেছে। তারা হামলার হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করে; অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা তুলে ধরে। অনেকে মুম্বাইয়ের হাসপাতালগুলোয় নেওয়া আহত ব্যক্তিদের জন্য রক্ত দেওয়ার আবেদন জানায়। আবার অনেকে যাদের এই হামলায় আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব আক্রান্ত হয়েছে তাদের জন্য বিভিন্ন হেল্পলাইনের ঠিকানা ও ফোন নম্বর সরবরাহ করে। টুইটারের সদস্যরা দ্রুত হতাহত ব্যক্তিদের তালিকা জোগাড় করে এবং অনলাইনে পাঠিয়ে দেয়। মুম্বাইয়ে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ১৯৫ জন নিহত হয়। আহত হয় তিন শতাধিক।
বিশ্বজুড়ে টুইটারের সদস্য ৬০ লাখ। টুইটারের কর্তৃপক্ষ পরে হিসাব করে দেখেছে, ২৬ নভেম্বর রাতে প্রতি তিনজন সদস্যের মধ্যে একজন এসএমএস পাঠিয়েছে। একজন লিখেছেন, মুম্বাইয়ে হামলার ঘটনার পর এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট বা নেটওয়ার্কগুলো কতটা সক্রিয় এবং কত দ্রুত মানুষের কাছে বার্তা পাঠাতে সক্ষম। গ্লোবাল ভয়েসের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক আঞ্চলিক সম্পাদক নেহা বিশ্বনাথন বলেন, ‘মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার খবর আমি প্রথম পাই আমার কর্মীদের কাছ থেকে। তারা টুইটার থেকে খবরটি জানতে পেরেছে। লোকজন যা শুনেছে, তারা তা এসএমএস করে পাঠায়। হামলার শিকার হয়েছেন এবং ঘটনাস্থলে ছিলেন এমন পাঁচ-ছয়জনও এসএমএস পাঠিয়েছেন।’ তাজ হোটেলের ভেতরে আটকে পড়া একজন টুইটার সদস্য লেখেন, ‘সন্ত্রাসীরা হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষে এসে জানতে চায়, মার্কিন নাগরিকদের কক্ষগুলো কোন দিকে। এরপর তারা মার্কিন নাগরিকদের জিম্মি করে।’ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর মুম্বাইভিত্তিক ব্লগারদের একটি দল তাদের মেট্রোব্লগকে দ্রুত সংবাদসেবায় পরিণত করে। অন্যদিকে মুম্বাই হেল্প নামে একটি ব্লগসাইট পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের খবর পেতে তার সদস্যদের সাহায্য করে। অনেকে এতে দারুণ উপকৃত হয়েছে। ছবি আদান-প্রদানের ওয়েবসাইট ফ্লিক্র মুম্বাই হামলার প্রচুর ছবি সরবরাহ করেছে। ফটোসাংবাদিক বিনুকুমার রঙ্গনাথনের তোলা প্রচুর ছবি সিএনএন প্রকাশ করেছে। গুগলের মানচিত্র যেসব স্থান ও ভবনে হামলা হয়েছে তার ছবি দেখিয়েছে। সিএনএনের ওয়েবসাইট আইরিপোর্ট ডট কম সন্ত্রাসী হামলার ছবি ও ভিডিও দিয়ে গোটা সাইট ভরে ফেলে। এ সময় একটি গুজবও ওঠে যে ভারত সরকার টুইটারদের মুম্বাই হামলার খবর হালনাগাদ করতে নিষেধ করেছে। কারণ সরকার মনে করে, টুইটারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য থেকে সন্ত্রাসীরা জেনে ফেলবে নিরাপত্তা বাহিনী এখন কী করছে। পরে অবশ্য জানা গেছে, এটা নেহাত গুজব। সরকার এমন কোনো নির্দেশ জারি করেনি।
রোকেয়া রহমান
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৫, ২০০৮
Leave a Reply