কদিন পরেই কোরবানির ঈদ। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসছে পশুর হাট। সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো· খলিলুর রহমান জানান, এবার ঢাকায় ১২টি জায়গায় পশুর হাট বসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও গরু, ছাগলের ব্যাপারিদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ বেশ জোরদার করা হচ্ছে। পশুর হাট তদারকির জন্য ভ্রাম্যমাণ দল তো রয়েছেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ রাখা হয়েছে।
কোরবানির পশুর হাট যেখানে বসছে
ঢাকাঃ আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও পার্শ্ববর্তী চিত্রামহল সংলগ্ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের খালি জায়গায়, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, হোসেনী দালান রোড় (চানখাঁরপুল চৌরাস্তা থেকে বকশীবাজার ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যন্ত), গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, উত্তরা আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও রাজউকের খালি জায়গা, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজার, তালতলা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশের খালি জায়গা, আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গা, বেতার ভবনের পশ্চিম পোস্তগোলা আলম মার্কেটের সমানের রাস্তা, পূর্ব পাশের ব্রিজ-সংলগ্ন খালি জায়গা, ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের আউটফল স্টাফ কোয়ার্টারের দক্ষিণ পাশে ঢাকা সিটি করপোরেশনের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ এবং সূত্রাপুরের ধূপখোলা খেলার মাঠ। এ ছাড়া গাবতলীর পশুর হাট তো আছেই।
ঢাকার বাইরেঃ নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের ঢেলাপীর পশুর হাট, ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ার রামনাথ পশুর হাট, হরিপুরের জাদুরানী পশুর হাট, পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারীর ফকিরগঞ্জ পশুর হাট, হাতিয়ার ওছখালী পশুর হাট, রংপুরের লালবাগ পশুর হাট, বুড়িবাড়ী পশুর হাট, তারাগঞ্জ পশুর হাট, পিরোজপুরের শহর পশুর হাট, পাঁচতারা পশুর হাট, ইন্দুর বাজার, ভাণ্ডারিয়া পশুর হাট, পটুয়াখালীর গলাচিপা বাজার, নলুয়াবাগী, জুলেখা বাজার, আমকলা বাজার, বাদুরা হাট, কলাগাছি হাট, কাটাখালী হাট, কাছিয়া বুনিয়া পশুর হাট, গাহিনখালী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
মনে রাখুন
দীর্ঘদিন ধরে কোরবানির পশু কিনছেন আব্দুল মোতালেব (৫২)। ঝামেলামুক্ত কোরবানির পশুর হাটে পশু কেনার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এগুলো হলো-
হাটে যাওয়ার সময় টাকা-পয়সা সাবধানে রাখতে হবে।
হাতে সময় নিয়ে পশুর হাটে যাওয়া উচিত। তাহলে ধীরসুস্থে, দেখেশুনে কিনতে পারবেন।
দড়ি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
পশুর হাটে দেখা যায় দালালদের উৎপাত। এ থেকে সাবধান থাকুন।।
হাটে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। যাতে পশু লাথি না মারে।
পশুর হাটে যাওয়ার সময় অবশ্যই অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। পশু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন ব্যক্তি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো। একা না গিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে গেলে ভালো।
পশুর হাট থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন পশু হাত থেকে ছুটে না যায়। পশুর হাটে পশু কেনার পর অবশ্যই রসিদ করতে হবে।
পশুর হাটে অপরিচিত মানুষের কাছে কোনো কিছু খাওয়া উচিত নয়।
সাদা কাপড়চোপড় পরে না যাওয়াই ভালো। কারণ, পশুর মলমূত্র লাগতে পারে। পশুর হাটে দুষ্টচক্রের হাতে পড়তে পারেন, সে ক্ষেত্রে সজাগ থাকা।
দামদর করার সময় উত্তেজিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখুন।
পশুর হাটে যাওয়ার সময় খুচরা টাকা নিয়ে যাওয়া।
পশুর হাটে পশু কেনার পর একই সঙ্গে ছুরি, দা, ব্লিচিং পাউডার, খড়, ঘাস ও অন্যান্য জিনিস কিনে ফেললে সুবিধা হবে।
কোরবানির পশুর যত্ন
পশুর যাতে ঠান্ডা না লাগে সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। পশু খোলা আকাশের নিচে না রেখে গ্যারেজ বা ছাউনি দেওয়া কোনো জায়গায় রাখুন।
পশু যে জায়গায় রাখা হবে সেখানে যেন ভিজে বা স্যাঁতসেঁতে না হয়। অবশ্যই শুকনো জায়গায় রাখতে হবে।
পশু রাখার স্থান নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পশুর থাকার জায়গায় খড় বা চট বিছিয়ে দিতে হবে।
পশু যেন ছুটে বেরিয়ে যেতে না পারে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
যদি প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে তবে ছালা বা চট গায়ে দেওয়া যেতে পারে।
পশুকে পানি বা ভাতের মাড় একটু গরম অবস্থায় দিতে হবে।
পশুকে মাঝেমধ্যে গোসল করাতে হবে, যাতে পশুর চামড়া ভালো থাকে।
কোরবানির পশুর খাবার
কোরবানির পশু গরু হলে খড় এবং দানাদার খাদ্য, যেমন-গমের ভুসি, কুঁড়া, খেসারি ভাঙা, ছোলা ভাঙা, ভাতের মাড়, চিটাগুড় খাওয়ানো ভালো। সম্ভব হলে ঘাস দিন। আর ছাগলের জন্য দানাদার খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন রকমের গাছের পাতা, যেমন-কাঁঠাল পাতা।
পশুকে পর্যাপ্ত পরিমাপে পানি ও পরিমিত লবণ খাওয়াতে হবে।
পশুকে অসুস্থ বা অস্বাভাবিক মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে পশু চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হতে হবে।
আবু সাঈদ
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০২, ২০০৮
Leave a Reply