টেবিলে সারি করে রাখা ৪৮টি আচারের বোতল। টক, মিষ্টি, ঝাল ও অন্যান্য-চারটি বিভাগে মোট ১২টি করে। ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে চলছিল প্রাণ-প্রথম আলো জাতীয় আচার প্রতিযোগিতা ২০০৮-এর বিচারকাজ। ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা নাগাদ একে একে এসে পড়লেন বিচারকেরা। অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ, দিতি, সুইটি, রিচি, মডেল বিন্দু, কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণকলি, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড· ফিরোজা সুলতানা এবং রান্না-বিশেষজ্ঞ সিতারা ফিরদৌস।
এর আগে টেবিলে রাখা বোতলগুলো এক দফা দেখে গেছেন তাঁরা। এবার আবারও আচারের সারির সামনে। চেখে দেখার আগে বাইরের রূপ দেখেই কোন আচারটা মজা হবে-এ নিয়ে শুরু হয়ে গেল বিচারকদের জল্পনা-কল্পনা। টক আচার দিয়ে শুরু হলো বিচারকাজ। কিসের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হবে, মনোযোগের সঙ্গে সবাই বুঝে নিচ্ছিলেন ড· ফিরোজা সুলতানার কাছে। টক বিভাগে আম, জলপাইয়ের আচারই বেশি। দিতি খুঁজছিলেন বরইয়ের আচার আর কৃষ্ণকলির চাই সবজির আচার। আচারের সঙ্গে খিচুড়ির দাবিটাও একসময় জোরালো হয়ে উঠল। খিচুড়ির অভাবটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ছিল চানাচুর আর বাদামের ব্যবস্থা। এরপর শুরু হলো ঝাল বিভাগের বিচার। দেখতে সুন্দর আচারগুলো সব যেন এ বিভাগেই। দর্শনদারিতে বেশি ভোট পাওয়া আচারগুলো খেতে গিয়ে সবার প্রাণান্ত। এর মধ্যে আনা হলো কাঁচামরিচের আচার। মৃদু গুঞ্জন উঠল সবার মাঝে-খেয়ে দেখতে হবে! ততক্ষণে সবার নাক-চোখ ভিজে উঠেছে। সে ধকল না সামলাতেই এসে গেল লাল টুকটুকে বোম্বাই মরিচের আচার। খেতে গিয়ে যেন সবার চোখ একদম ছানাবড়া! মরিচের ভেতরের অংশটুকু ফেলে দিয়ে সেখানে ভরে দেওয়া হয়েছে জলপাইয়ের কুচি। বিন্দু ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্রী।আইডিয়ার এমন অভিনবত্বে মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। একযোগে সবাই ঘোষণা দিলেন-এ আচারটা আমরা বাসায় নিয়ে যেতে চাই। সবুজ বোম্বাই মরিচের একটি আচারও প্রশংসা পেল বেশ।
সবার উহ্-আহ্ থামাতেই যেন ঝাল বিভাগের আচারগুলোর পর ছিল মিষ্টি বিভাগ। মিষ্টি আচারগুলো বেশি করেই খেতে চাইছিলেন সবাই। কিন্তু বিচারকের দায়িত্ব বাদ সাধল সেখানে। এগুলো বেশি খেয়ে ফেললে তো আর বাকিগুলো পরখ করে দেখা যাবে না।
অন্যান্য বিভাগের আচারগুলো সত্যিই চমকপ্রদ। একটা আচার খেয়ে সবার মধ্যে আলোচনা শুরু হলো-এটা কি আমের আচার? আমের খোসাটা এমন পাতলা মনে হচ্ছে কেন? শর্মিলী আহমেদ বললেন, ফজলি আম হতে পারে। কিছুক্ষণ জল্পনা-কল্পনার পর দিতি ধরতে পারলেন-এটা আসলে সবুজ আপেলের আচার! করলার আচারও ছিল এ বিভাগে। তবে করলার তিতাটা কীভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, এ রহস্য ভেদ করা গেল না কিছুতেই। এভাবেই সেদিন জমে উঠেছিল আচারের বিচার পর্ব।
রুহিনা তাসকিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৫, ২০০৮
Leave a Reply