২৮তম বিসিএস পরীক্ষার সময় যত এগিয়ে আসছে আপনার মনে ততই দানা বাঁধছে পরীক্ষা নিয়ে নানা আতঙ্ক। কেমন হবে এ পরীক্ষা, সব প্রশ্নের উত্তর কি দিতে পারব? আচ্ছা, ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকলে কি প্রশ্ন ছেড়ে দিয়ে আসব-ইত্যাদি প্রশ্ন এখন উঁকি দিচ্ছে আপনার মনে। হয়তো নিজের ওপর বিশ্বাসহীনতায় ভুগছেন আপনি। অথচ শুধু মানসিকভাবে স্থির থাকলেই আপনি এই পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাবেন। অন্যান্য যেসব পরীক্ষার্থী আছেন, তাঁরাও আপনারই মতো সাধারণ মানুষ।স্কুলের সেই প্রথম শ্রেণী থেকে আজ অবধি আপনার মস্তিষ্কে সংরক্ষিত আছে হাজারও তথ্য। আর প্রতিটি তথ্যই কোনো না কোনো প্রশ্নের উত্তর। বিসিএস পরীক্ষায় বিশাল এই তথ্যভাণ্ডারের বাইরে কোনো প্রশ্ন আসবে না।
আপনার প্রস্ততি ভালো, তবুও আপনি আতঙ্কিত। আর পরীক্ষার আগের কয়েকটি দিনে এই মানসিক অস্থিরতার নামই পারফরম্যান্স অ্যাঙজাইটি। যা আপনার জানা বিষয়গুলোও ভুলিয়ে দিতে পারে-জানালেন ২২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী ও বর্তমানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা· আহমেদ হেলাল। তিনি বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় মানসিক প্রস্তুতি একটি বড় বিষয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম কথাই হলো আপনি সরকারি চাকুরে হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করবেন কি না। আজকাল অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বেতন-ভাতাসহ নানা কারণে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে চান না। অনেকে আবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও পরে আর সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন না। কেননা সরকারি চাকরিতে সুযোগ যেমন আছে, তেমনি আছে নানাবিধিনিষেধ। আপনি যদি মনস্থির করতে পারেন- সরকারি চাকরিতে যোগদান করবেন, তাহলেই কেবল বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য। কেননা ফরম পূরণ থেকে শুরু করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পার হতে হয় একটি দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। আর তাই আপনাকে হতে হবে ধৈর্যশীল। নিজেকে ধীরে ধীরে যোগ্য করে নিতে হবে বিসিএস পরীক্ষার্থী হিসেবে, পরীক্ষায় অংশ নেবেন এ বিষয়ে মনস্থির করার পর। প্রথমেই আপনার নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে আপনি অনেক কিছুই জানেন। নিজের ওপর বিশ্বাস অর্জন যেকোনো পরীক্ষার ক্ষেত্রেই অনেক বড় একটি বিষয়।
এবার আশা যাক পরীক্ষার দু-এক দিন আগে থেকে কী ধরনের মানসিক প্রস্তুতি বিসিএস পরীক্ষায় আপনার সহায়ক হবে। আপনি মানসিক স্থিরতা আনার জন্য পরীক্ষার দু-এক দিন আগে থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিন। অর্থাৎ আপনার পারিবারিক বা পেশাজীবনের কাজগুলো থেকে অবসর নিন অল্প কয়েকটা দিনের জন্য। পরীক্ষার আগে কোনোভাবেই কোনো মানসিক চাপ নেবেন না। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই নিজের কাজগুলো গুছিয়ে রাখুন, যাতে পরীক্ষার এই সময়টায় আপনি মানসিক চাপহীন থাকতে পারেন। প্রয়োজনে মেডিটেশনের সাহায্য নিতে পারেন। নিজেকে সুস্থির করতে, কাজ বা পড়াশোনার ফাঁকে কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে অথবা বসে থাকুন। ধ্যানমগ্ন হয়ে আসন করতে পারেন। এতে মানসিক সুস্থিরতা আসবে। এ সময় নিয়মিত খাবার খাবেন। তালিকায় শর্করাযুক্ত খাবার বেশি রাখুন। পরীক্ষার আগের রাতে অবশ্যই পেট ঠান্ডা থাকে, এমন খাবার খাবেন। দু-এক দিন আগে থেকেই সময়মতো ঘুমাতে যাওয়ার ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। লক্ষ রাখবেন, আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুম যেন হয়। আরেকটি কথা মনে রাখা জরুরি, পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে স্বাভাবিক খাবার খেয়ে যাবেন। কেননা পরীক্ষার হলে পেটে ক্ষুধা থাকলে মস্তিষ্কে নিউট্রিশন সরবরাহ কমে যায়। যা স্বাভাবিক চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করে।
পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট আগে প্রবেশ করুন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ১০০ নম্বরে। আর তাই মাথা ঠান্ডা রেখে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার তাৎক্ষণিকভাবে মনে পড়ছে তা আগে লিখে তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যগুলো নিয়ে ভাববেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ভালোভাবে লক্ষ করুন, ওএমআর ফরমে আপনার জানা উত্তরগুলোর সঠিক বৃত্তটি ভরাট করেছেন কি না। সবশেষে আবারও মনোযোগ দিন আপনার না পারা প্রশ্নগুলোর দিকে। তবে সময় নিয়ে, আতঙ্কিত হয়ে নয়। ধীরস্থিরভাবে মনে করুন উত্তরগুলো। কোনো অবস্থাতেই অস্থির হবেন না। নিজেকে শান্ত, ধীরস্থির রাখুন। মনে রাখবেন, মানসিক স্থিরতাই পারে আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে।
আরাফাত সিদ্দিকী সোহাগ
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২২, ২০০৮
Leave a Reply