শিশুটি আপনমনে খেলা করছে বাড়িতে। পরম নির্ভরতার সঙ্গে কাছে রয়েছেন বাবা। কিন্তু তিনি টিভি দেখতে দেখতে ধূমপান করছেন। কিন্তু জানেন কি, এই প্রিয় বাবাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছেন নিজের সন্তানের? অনেকেই শিশুদের সামনে ধূমপান করেন। শিশুর জন্য এই পরোক্ষ ধূমপান মারাত্মক ক্ষতি ও হুমকির কারণ হতে পারে।
পরোক্ষ ধূমপানের ফলে শিশুর ধমনির ক্ষতি হতে পারে। এতে পরিণত বয়সে তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুরা এমনিতে দ্রুত শ্বাস নেয়, তা ছাড়া তাদের শ্বাসতন্ত্রও অপরিণত। তাই সিগারেটের ধোঁয়া সহজেই শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে সমূহ ক্ষতি করে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুর নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ হয়।
পরোক্ষ ধূমপানের শিকার মানুষের শরীরের শ্বেত রক্তকণিকা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে শিশু অল্পতেই রোগাক্রান্ত হয়। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ১৭ হাজার শিশু বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ ছাড়া মধ্যকর্ণের প্রদাহ, বধিরতা, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ঝিমুনি, অস্থিরতাও হতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় সিগারেটের ধোঁয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশু গণিত ও যুক্তিবিদ্যায় কম পারদর্শী, তাদের বেশির ভাগেরই মা-বাবা ধূমপায়ী। এরা শিক্ষক ও সহপাঠীর সঙ্গে সঠিক আচরণ করতেও শেখে না।
গর্ভাবস্থায় মা ধূমপান করলে সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ, গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যে রক্ত বাহিত হয়, তার অক্সিজেন ধারণক্ষমতা কমিয়ে দেয় তামাকের কার্বন মনোক্সাইড। নিকোটিন গর্ভফুলের রক্ত সরবরাহ হ্রাস করে। ফলে মায়ের শরীর থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যেতে পারে না, তাই শিশুর বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। এ ছাড়া ধূমপানের কারণে গর্ভপাত কিংবা অপরিণত শিশু জন্মাতে পারে। এই অপরিণত শিশুরা আবার সংক্রমণ বা অন্য কোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, পরিবারে বাবা, বড় ভাই বা অন্য কেউ ধূমপান করলে শিশুরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। প্রকাশ্য স্থানে এবং বাড়িতে—সব জায়গায়ই ধূমপান বর্জন করুন।
ডা. আবু সাঈদ
২৮ মে ২০১৫, ০১:৩২
শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো
Leave a Reply