ক্যান্সার, বস্নাড ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ নিয়মিত ফলমূল, শাক-সবজি ও তরিতরকারী গ্রহণের মাধ্যমে বহুলাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। অন্যদিকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত চতুষ্পদ জন্তুর মাংস, ভাজা-পোড়া দ্রব্য, পুরাতন বা বাসি খাদ্য ভক্ষণ, নেশা জাতীয় পানীয় পান বা ধূমপান উল্লেখিত রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞের গবেষণায় জানা যায়, শুরুতে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টির জন্য যে সকল রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন হয়, বিশেষ বিশেষ খাদ্যসমূহ সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। যেমনঃ
কাঁচা রসুন ও পেঁয়াজঃ বিশেষজ্ঞের মতে, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কারসিনোজেনসমূহকে রসুন, পেঁয়াজের রাসায়নিক পদার্থ সহজেই ধ্বংস করে দেয়। রসুন দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহু গুণে বৃদ্ধি করে এবং ক্যান্সারসহ নানা রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করে। লোমা লিন্ডার ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষণা রিপোর্টে জানা গেছে যে, রসুনের উপাদানসমূহ ক্যান্সার কোষের জন্য ভয়ানক বিষাক্ত। এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং টিউমার সেলকে ধ্বংস করে দেয়। হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা কিছু সংখ্যক ক্যান্সার প্রতিরোধ করেছেন খাদ্যের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ যোগ করে দিয়ে।
ফলমূল শাক-সবজি ও তরিতরকারীঃ পালং শাক, পুঁই শাক, কচু শাক, লাল শাক, ডাটা শাকসহ সর্ববিধ শাক-সবজি, টমেটো, গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, সীম, শালগম, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা প্রভৃতি তরি-তরকারী, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, কলা, পেয়ারা, পেঁপেসহ নানা ফল-ফলাদি এবং জাম্বুরা, কমলালেবু, কদবেল, বাতাবি-কাগজিলেবু, কামরাঙ্গা, জলপাই, আমড়া, কুলসহ সর্ববিধ টক জাতীয় খাদ্যসমূহে রয়েছে প্রচুর ক্যান্সার বিরোধী উপাদান। এতে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট, ফোলেট, লিউটিন, লাইকোপিন, বিটা-ক্যারোটিন এবং আরো নানা দারুণ উপকারী উপাদান, যা টিউমার কোষের জন্য বিষাক্ত। টক ফল বা টক জাতীয় খাদ্যে অন্য খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যান্সার বিরোধী রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা দেহে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। টাফট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা হতে জানা যায় যে, উল্লেখিত খাদ্যসমূহ দেহাভ্যন্তরে রেটিনোয়িক এসিডে রূপান্তরিত হয়, যা ম্যালিগন্যান্ট সেলকে (ক্যান্সার কোষ) সহজেই ধ্বংস করে দেয়। এছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এসিই, যা ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ প্রতিরোধ করে। যেমনঃ ফাইটোক্যামিকেলের সাহায্যে ক্যান্সার থেকে নিষ্কৃতি লাভ হয় আইটোক্যামিকেলে কুমারিক এবং ক্লোরোজনিক এসিড থাকে, যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ গঠনে বাধাদান করে। বলাবাহুল্য, উল্লেখিত খাদ্যসমূহের নির্যাসে প্রচুর ফাইটোক্যামিকেল আছে। খাদ্য হজমের সময় নাইট্রিক এসিড ও অ্যামিনো এসিডের বিক্রিয়া নাইট্রাস অ্যামিন গঠিত হয়। নাইট্রাস অ্যামিন পরবর্তীতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ বা কারসিনোজেন গঠন করে।
তবে আনন্দের বিষয় হলো, উল্লেখিত খাদ্য রসের ফাইটোক্যামিকেল উক্ত নাইট্র্রাস অ্যামিন গঠনে বাধা দেয়। যার ফলে কারসিনোজেন গঠিত হতে পারে না। ফলে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনাও দূরীভূত হয়ে যায়। শাক-সবজি-তরি-তরকারী বেশি সিদ্ধ হলে তার ক্যান্সার বিরোধী উপাদানসমূহ অনেক কমে যায়। এজন্য তা অর্ধ সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। তবে যেসব খাদ্য কাঁচা খাওয়া সম্ভব, সেগুলো ভালভাবে ধুয়ে কাঁচাই খেতে হবে। কেননা এর দ্বারা পরিপূর্ণ উপকৃত হবেন। স্বাস্থ্যই সুখের মূল। এর জন্য দরকার সুস্থ ও নিরোগ দেহ। আর তা পেতে হলে আমাদের প্রত্যেকের সব বয়সের জন্য দরকার প্রতিদিন পরিমিত টক ও মিষ্টি ফল-ফলাদি ও টাটকা শাকসবজি, তরি-তরকারী আহার করা, যাতে মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ হতে নিশ্চিত নিরাপদ থাকা যাবে।
————————
ডাঃ এম এম সরদার
গ্রীন রোড, ঢাকা। সূত্রঃ ওয়েবসাইট
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ মে ২০০৮
Leave a Reply