আমি প্রায়শই লেখার মধ্যে দু’একটা উদাহরণ দেই। বিষয়টি সহজভাবে বুঝানোর জন্য অনেকেই নানাভাবে উদাহরণ দেন। ইতিপূর্বে আমি তরুণদের বিয়ে ভীতি নিয়ে লিখেছি। ভেবেছিলাম ইত্তেফাকের স্বাস্থ্য পাতায় নারী-পুরুষের প্রাইভেট লাইফের নানা ভুল ধারণা ও অজ্ঞতা নিয়ে লেখার পর তরুণ-যুবকদের নানা সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু আসলে বছরের পর বছর ধরে যে অপচিকিৎসায় দেশের বৃহত্তর তরুণ সমাজ নিজেদের ভয়ানক ক্ষতি ডেকে আনছে তা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমি বহুবার বলেছি তরুণদের শারীরিক অক্ষমতা ভীতি সম্পূর্ণ মানসিক। শতকরা ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগ তরুণ-পুরুষের কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই। যুক্তি দিয়ে, বিদেশী উদাহরণ দিয়ে বলেছি এ ধরনের কাল্পনিক শারীরিক সমস্যা নিয়ে কোন প্রকার বিভ্রান্ত হওয়া উচিৎ নয়। কোন ধরনের চিকিৎসা নেয়া উচিৎ নয়। এ ধরনের দীর্ঘ প্রচারণা সত্ত্বেও এখনও বহু তরুণ-যুবক, অবিবাহিত পুরুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন, প্রতারিত হচ্ছেন, অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। গত সংখ্যায় বলেছিলাম, পুরুষের সন্তান জন্মদানের সমস্যা নিয়ে লিখবো। কিন্তু এ সংখ্যায়ও তা লেখা হলোনা। অন্য একটি মর্মন্তু বিষয় নিয়ে লিখতে হচ্ছে।
গত সপ্তাহের কথা। পুরাতন ঢাকা থেকে আসা এক তরুণ। বয়স কোনভাবেই ১৮/২০-এর বেশী হবে না। চেম্বারে এসে বললেন, ডাক্তার সাহেব আমাকে বাঁচান। এ ধরনের ইমোশন রোগীদের থাকে। প্রায়ই সব তরুণরাই এমন কথা বলেন। জীবন শেষ হয়ে গেছে, নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আগত তরুণটির সমস্যাটিও ভেবেছিলাম গতানুগতিক। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। তরুণের অভিযোগ। তার ধারণা ছিলো সে শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। অজ্ঞতা থেকেই ভুল ধারণা। এ জন্য সে নিকটস্থ একটি ফার্মেসী বা ওষুধের দোকানে যায়। ওষুধের দোকান থেকেই অনেক সময় চিকিৎসা-অপচিকিৎসা দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। তরুণকে যেসব ওষুধ দেয়া হয় তা সেবন করে তরুণের নিম্নাঙ্গ প্রায় অবস বা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এমনকি প্রশ্রাব করার সময়ও কোন অনুভূতি পাচ্ছে না। এ ছাড়া ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তরুণটির নিম্নাঙ্গ ফুলে গেছে। যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে একউিট ইমারজেন্সি। তরুণটিকে পরীক্ষা করে দেখাগেলো বর্ণনার চেয়েও বেশী উপসর্গ রয়েছে তার শরীরে। ওষুধের দোকান থেকে তাকে চার ধরনের ওষুধ দেয়া হয়েছে। একটি ভিটামিন, একটি মানসিক চিকিৎসার ওষুধ, একটি হাই এন্টিবায়োটিক এবং অপরটি নামহীন কালো গোল গোল বটিকা। তরুণটির ড্রাগ রিঅ্যাকশনের প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দিয়ে ভিজিটিং কার্ড ঐ ওষুধের দোকানের ফার্মাসিষ্টকে কথা বলতে বলি। যথারীতি তরুণটিকে উপদেশ অনুসরণ করে। ওষুধের দোকানের তথাকথিত ফার্মাসিষ্ট -এর ভাষ্যমতে কালো রংয়ের গোল বড়িটি যৌন সমস্যা লাঘবে ব্যবহৃত হয়। অনেক ডাক্তার এ বড়িটি সেবন করতে বলেন। তাই তরুণটিকে ওষুধের দোকানি নিজেই চিকিৎসা দিয়েছেন। দোকানি জানালেন কালো বড়িটির কৌটার লেভেলে লেখা আছে হংকং-কোরিয়া। অপচিকিৎসা রোধে বড়িটির নাম বলা হলো না। যাইহোক ওষুধের দোকানির সঙ্গে আর কথা না বাড়িয়ে তরুণটিকে তার শরীরের সর্বশেষ অবস্থা কি হয় তা জানাতে বলি।
যাহোক, মূল কথায়, ফিরে আসি। শুধু সুত্রাপুরের তরুণ নয়, দেশের হাজার হাজার তরুণ এ ধরনের ভুল চিকিৎসা, অপচিকিৎসয় প্রতারিত হচ্ছে, নিজেদের জীবন সংশয়ের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ এসব সমস্যা সম্পূর্ণ মানসিকও অজ্ঞতাবশতঃ কোন ধরনের চিকিৎসা-ওষুধ ছাড়াই সামান্য কাউন্সিলিং করলে এ ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ধরনের সমস্যা থেকে দেশের লাখ লাখ তরুণকে রক্ষার জন্য এবং তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞানসম্মত যৌন শিক্ষার জন্য শুধু ইত্তেফাক নয় অন্যান্য সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সচেতনতা মূলক লেখনী ও অনুষ্ঠান প্রয়োজন। বিভিন্নভাবে হারবাল-আয়ুর্বেদ ও ভূল হোমিও চিকিৎসায় তরুণদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে তাই নয়, বহু এ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার ও তরুণদের যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে অজ্ঞতা ও দুর্বলতার সুযোগে রোগী বানিয়ে দিচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে বাধ্য করছে। তবে মনে রাখতে হবে তরুণ-যুবক পুরুষদের শতকরা ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগ মানসিক। মোটেও চিকিৎসার দরকার নেই। ২/১টি ক্ষেত্রে প্রকৃত শারিরীক সমস্যা থাকলেও উপযুক্ত চিকিৎসায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। এ ক্ষেত্রে যে-কোন সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে পারেন।
—————-
ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ মে ২০০৮
Leave a Reply