বাড়তি ওজনের ছোট-বড় যত সমস্যাস্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন স্বাস্থ্যের জন্য নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ, এটা এখন সবাই জানেন। বাড়তি ওজন মানেই শরীরে মেদের আধিক্য, ফলাফল হূদেরাগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে চর্বি জমা ইত্যাদি কারও অজানা নয়। তাই বর্তমান সময়ে এসব প্রাণঘাতী রোগের প্রকোপ ও ঝুঁকি কমাতে বিজ্ঞানীরা সঠিক ওজন বজায় রাখার দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু ওজনাধিক্যের সঙ্গে আরও নানা ছোট-বড় সমস্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, যেগুলো নিয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয় না। আসুন, জেনে নিই বাড়তি ওজনের কারণে আমাদের আরও কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে।
: অস্টিওআথ্রাইটিস বা বাতের প্রধানতম কারণ হলো ওজনাধিক্য। অতিরিক্ত ওজন বহন করার কারণে মূলত হাঁটু, কোমর বা মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দেয়। কখনো মেরুদণ্ডে হাড় বিচ্যুত হয়ে স্নায়ুকে চাপ দেয়। এ কারণে এমনকি শল্য চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া স্থূল শরীরে গেঁটে বাত বা গাউট, রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি, কবজির স্নায়ুতে চাপ পড়ার কারণে কার্পাল টানেল সিনড্রোম ইত্যাদি সমস্যাও বেশি হয়ে থাকে।
: পেটের পেশির সংকোচন-প্রসারণ দুর্বল হয়ে পড়ে ও হার্নিয়ার ঝুঁকি বেশি। কোনো অস্ত্রোপচারের পর সেই সেলাইয়েও সহজে হার্নিয়া হয়ে যেতে পারে।
: পায়ের শিরা ফুলে নীল হয়ে ওঠার অপর নাম ভেরিকোস ভেইন। এটি ওজনাধিক্য ব্যক্তিদের বেশি হয়।
: পিত্তথলিতে পাথর হওয়া ওজনাধিক্য ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ স্থূল নারীদের এই ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া পেটের খাদ্য খাদ্যনালিতে উঠে আসা বা রিফ্লাক্সের কারণও ওজনাধিক্য। যকৃতে চর্বি জমা যা ফ্যাটি লিভার নামে পরিচিত তা ওজনাধিক্যের একটি সাধারণ সমস্যা। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে, অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও স্থূলতা দায়ী।
: ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র সাধারণ লোকের তুলনায় বেশি হয়। আবার ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে, তার সঙ্গে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাগুলোও বেশি মাত্রায় দেখা দেয়।
: স্থূল শরীরের ব্যক্তিরা বেশি নাক ডাকে। রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে আসা বা স্লিপ এপনিয়ার প্রধান কারণ স্থূলতা। এ ছাড়া সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়াও একটি সমস্যা।
: জরায়ুতে সিস্ট ও উর্বরতা হ্রাসের কারণ হিসেবে স্থূলতা দায়ী। এ ছাড়া স্তন ক্যানসার ও ডিম্বাশয় ক্যানসারের ঝুঁকির সঙ্গেও স্থূলতার সম্পর্ক রয়েছে।
: ত্বকের নানা সমস্যা যেমন ত্বকের রং কালো হয়ে যাওয়া বা অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিক্যানস, ত্বকের কুঁচকিতে সংক্রমণ, যেমন ক্যানডিডা সংক্রমণ এবং লসিকানালিতে পানি জমা—এসব স্থূল শরীরের ব্যক্তিদেরই সমস্যা।
: স্থূলতার সঙ্গে মানসিক সমস্যারও সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে। বিষণ্নতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব বা সামাজিকভাবে হেয় হওয়া ইত্যাদি স্থূলতার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।
অস্টিওআথ্রাইটিস বা বাত
অতিরিক্ত ওজন বহন করার কারণে মূলত হাঁটু, কোমর বা মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দেয়।
হার্নিয়ার ঝুঁকি
পেটের পেশির সংকোচন-প্রসারণ দুর্বল হয়ে পড়ে ও হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
জরায়ুতে সিস্ট
জরায়ুতে সিস্ট ও উর্বরতা হ্রাসের কারণ হিসেবে স্থূলতা দায়ী। এ ছাড়া স্তন ক্যানসার ও ডিম্বাশয় ক্যানসারের ঝুঁকির সঙ্গেও স্থূলতার সম্পর্ক রয়েছে।
পিত্তথলিতে পাথর
পিত্তথলিতে পাথর হওয়া ওজনাধিক্য ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ্ব স্থূল নারীদের এই ঝুঁকি বেশি।
নাক ডাকা
স্থূল শরীরের ব্যক্তিরা বেশি নাক ডাকে। ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে আসা বা স্লিপ এপনিয়ার প্রধান কারণ স্থূলতা।
অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ
ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩
Leave a Reply