আপনার ছোট্ট শিশুটির সর্দি-কাশি কয়েক দিন থেকে। গায়ে হালকা জ্বর। ভাবলেন, নিউমোনিয়া বাধিয়ে বসল না তো। আর অপেক্ষা না করে এখনই চিকিৎ সকের
কাছে নিতে হবে। কেননা, পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায় শিশুদের। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময়।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান তাহমীনা বেগম জানান, পরিবারের বড়দের ভাইরাসজনিত কারণে ঠান্ডা লাগলে শিশুও আক্রান্ত হতে পারে। পরিবেশগত কারণেও শিশুদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি হতে পারে। গ্রামে শীত বেশি পড়লেও, শহরের শিশুদের ঠান্ডার সমস্যা বেশি হয় গাড়ির ধোঁয়া আর ধুলাবালুর কারণে। যেসব বাড়িতে ধূমপান করা হয়, সেখানে ধোঁয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে আপনার আদরের সোনামণি। একই পরিবেশে সবার ঠান্ডা লাগে না। মায়ের বুকের দুধ খায়নি, অপুষ্টিতে ভুগছে, এমন শিশুদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি।
ঠান্ডা লাগলে কী করবেনশীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ছবি: অধুনা
শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে, তাকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান। আর যদি বয়স হয় ছয় মাসের বেশি, তাহলে অল্প অল্প করে পানি, তরল ও নরম খাবার বারবার খাওয়াবেন। তখন একটু লেবু-চা, আদা-চা, তুলসীপাতার রস কিংবা মধু খাওয়াতে পারেন। শিশুকে ঘরে তৈরি করা খাবার দিন, বাইরের কোনো কাশির ওষুধ দেবেন না।
সঙ্গে জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, তাহলে চিকিৎ সকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াতে পারেন। শিশুকে গরম রাখতে চেষ্টা করুন। কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন। সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে বা নাক দিয়ে শব্দও হলেও খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে কটন বাডস দিয়ে নাকটা মুছে দিন।
শিশুকে কোলে নিয়ে কখনোই ধূমপান নয়, এমনকি শিশুর সামনেও নয়। রান্নার ধোঁয়ায়ও তার শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই রান্নার সময় রান্নাঘরের জানালা খুলে দিন বা এগজস্ট ফ্যান চালিয়ে নিন। আর শিশুকে কোলে নিয়ে রান্না করবেন না কখনো। করতে যদি হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন ‘বন্ধু চুলা’ (মাটির একধরনের পরিবেশবান্ধব চুলা)। যাঁরা নিজেরা ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা শিশুকে কোলে নেওয়া ও আদর করা থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে শিশুকে নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক দিন।
কখন যাবেন চিকিৎ সকের কাছে
ঠান্ডা লাগার সাধারণ লক্ষণগুলোর সঙ্গে শিশু দ্রুত, ঘন ঘন শ্বাস নেয় এবং বুকের পাঁজর ভেতরের দিকে ঢুকে যায়, তাহলে চিকিৎ সকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। এ দুটি হল নিউমোনিয়ার লক্ষণ। তাই ঠান্ডা লাগলে শিশুর বুকের দিকে খেয়াল রাখুন। এ ছাড়া শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে, খাওয়া বন্ধ করে দেয়, জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি থাকে, অতিরিক্ত কাশির কারণে ঘুমাতে পারে না অথবা শিশু যা খায়, তার সবই বমি করে দেয়, তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যান অথবা চিকিৎ সকের পরামর্শ নিন।
রাফিয়া আলম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩
Leave a Reply