প্রতি বছর গরম আরও বেড়ে চলেছে। পৃথিবী উষ্ণতর হচ্ছে। কিন্তু মানবদেহে অভ্যন্তরীণভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও শরীর চেষ্টা করে নিজের তাপমাত্রা বজায় রাখতে। তখন শরীর ঘামতে শুরু করে। ঘাম বাষ্পীভূত হয়ে উবে গিয়ে শরীরকে শীতল করে। কিন্তু শরীরে যথেষ্ট পানি সঞ্চিত না থাকলে সমস্যা হয়। আর্দ্রতা বাড়লে শরীর গরম হতে থাকে। আর ঘামের উবে যাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শরীর আরো গরম হয়, আর শরীর গরম হলেই হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে।
কাদের হিট স্ট্রোক হয়।
শিশু ও বৃদ্ধদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম। তাই এদের হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ ছাড়া পরিশ্রমের কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে। অনেক্ষণ প্রচণ্ড রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে বা কাজ করলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এ ছাড়া কিছু রোগের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর মাঝে রয়েছে স্ক্লেরোডার্মা, একটোডার্মাল ডিসপ্লেসিয়া জাতীয় চর্মরোগ। ডায়াবেটিস রোগীদের হিট স্ট্রোকের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া কিছু ওষুধ গ্রহণকারীর ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। যেমন- অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যাসপিরিন, মানসিক রোগের ওষুধ। তা ছাড়া খুব বেশি মোটা হলে কিংবা রোদে বা খুব বেশি তাপামত্রায় কাজ করতে হলে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
প্রাথমিক লক্ষণের মাঝে রয়েছে পরিশ্রান্তবোধ করা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরতে থাকা, মাংসপেশিতে ব্যথা বোধ করা। এই পর্যায় পর্যন্ত শরীরে তাপমাত্রা ১০৬ ফারেনহাইটের নিচেই থাকে। ঠিক এ সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে উঠে যায়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। হৃদযন্ত্র বিকল হলে রক্তচাপ কমতে থাকে। ফুসফুসে ক্ষতি হওয়ায় শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটে। কিডনি কাজ না করায় প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। শরীরের রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা হ্রাস পায় ও বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। হিট স্ট্রোকের কিছু উপসর্গ বিভিন্ন রোগ যেমন- সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস, সেপটিসেমিয়া, ধুতরার বিষক্রিয়া ইত্যাদির সাথে মিল রয়েছে। তাই হিট স্ট্রোক ও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজন।
হিট স্ট্রোক হলে কী করবেন
আগেই বলেছি হিট স্ট্রোকের উপসর্গ কিছু রোগের সাথে মিলে যায়। চেষ্টা করতে হবে রোগীকে যথাসম্ভব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে। রোগীকে গরম স্থান থেকে সরিয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশে আনতে হবে। সম্ভব হলে এয়ার কন্ডিশনও ঘরে রাখতে হবে। যেকোনো উপায়ে শরীরের তাপামাত্রা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। পুরো শরীর পানি দিয়ে মুছতে হবে। প্রয়োজনে ভেজা কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখতে হবে। সেই সাথে ঘরে ফ্যান ছেড়ে রাখা দরকার। রোগীর নাক-মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা না হয়। হাসপাতালে রোগীকে অক্সিজেন দেয়া হয়।
তা ছাড়া শরীরে পটাশিয়াম কমে যাওয়ায় পটাশিয়াম ও স্যালাইন দেয়া হয়। রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত দিতে হবে।
তা ছাড়া অন্যান্য সমস্যার জন্য তৎক্ষণাত চিকিৎসা হাসপাতালে শুরু করা হয়। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, হিট স্ট্রোকের রোগীকে তাপামাত্রা কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন দেয়া হয় না। কারণ তাতে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বাড়ে।
হিট স্ট্রোক কিভাবে এড়াবেন
প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন।
পরিশ্রমের কোনো কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করুন।
সম্ভব হলে খোলা হাওয়ায় কাজ করুন। ঢিলেঢালা হালকা সুতির পোশাক পরুন। দিনে দু’বার গোসল করতে পারেন। রোদে গেলে ছাতা ব্যবহার করুন।
শিশু ও বৃদ্ধরা সতর্ক হোন। প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে সতর্ক হোন।
——————–
রিজওয়ানা তালুকদার
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১১ মে ২০০৮
Leave a Reply