অপেক্ষাকৃত সাদা ভাত, সাদা ময়দার রুটি, আঁশবিহীন চিনি, শর্করা সমৃদ্ধ বেকারী বিস্কুট, চিপ্স ইত্যাদি খাবার মোটা হবার প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে, ঘটাতে পারে স্বাস্থ্য বিপত্তি।
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বিশেষ করে ভাত, আটা, চিনি, আলু ইত্যাদি আমাদের প্রধান খাদ্য এবং শক্তির সমৃদ্ধতর উৎস। এছাড়া শস্যদানা, ফলমূল, শাক-সবজিতেও অন্যান্য উপাদানের সাথে শর্করা বিভিন্ন মাত্রায় রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে চর্বি বা ফ্যাটের যেমন ভালো-মন্দ রয়েছে শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যেও তেমনি ভালো শর্করা মন্দ শর্করা রয়েছে। ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধ শর্করা জাতীয় খাদ্যের যথাযথ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে অতি-পরিশোধিত শর্করার চেয়ে অপরিশোধিত শর্করা তুলনামূলক বিচারে অধিকতর স্বাস্থ্যপ্রদ। অপেক্ষাকৃত সাদা ভাত, সাদা ময়দার রুটি, আঁশবিহীন চিনি, শর্করা সমৃদ্ধ বেকারী বিস্কুট, চিপ্স ইত্যাদি খাবার মোটা হবার প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে, ঘটাতে পারে স্বাস্থ্য বিপত্তি।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এসব অতি-পরিশোধিত খাবার অতিদ্রুত পরিশোধিত হয়ে রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই গস্নুকোজ হজম করতে ইনস্যুলিন হরমোনের নিঃসরণও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ইনসুলিন যোগাতে ইনসুলিন নিঃসরণকারী প্যানক্রিয়াস গ্রন্থির উপর চাপ পড়ে বেশী। এক পর্যায়ে ইনসুলিন রক্তের সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করার যথাযথ ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতে পারে। দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস। বিজ্ঞানীদের মতে, রক্তে উচ্চমাত্রার গ্লুকোজ রক্তচাপ এবং রক্তের চর্বির মাত্রাও বৃদ্ধি করতে সক্ষম। পরিশোধিত বিশেষ বিশেষ খাবার অতি মাত্রায় গ্রহণের ফলে উদ্বৃত্ত গ্লুকোজ চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে দেখা দিতে পারে মেদবহুলতা। আবার এই স্থুলতার কারণেও বাড়ে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনী ইত্যাদির ঝুঁকি।
টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের প্রফেসর ডিভিড জেনকিনস মনে করেন রক্তে খুব দ্রুত গস্ন্যুকোজ মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এমন সব খাবার বেশী বেশী খাওয়ার সাথে ওভারী, স্তন এবং কোলন ক্যান্সারের সম্ভাব্য যোগসূত্র রয়েছে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে খাদ্যগ্রহণে কেবল চর্বির ব্যাপারে সতর্কতাই যথেষ্ট নয় শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের গুণগতমান বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন জরুরী।
গুণগতমান বিবেচনায় আটার রুটি ময়দার রুটির চেয়ে ভাল।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সুস্থতার স্বার্থে উচ্চ ঐঅ মান সম্পন্ন চিনি, সাদা ময়দা ইত্যাদির বিকল্প হিসেবে আটার রুটি, আঁশসমৃদ্ধ শস্যদানা, শাক-সবজি, ফলমূল গ্রহণের উপর গুরত্ব আরোপ করেছেন।
পাশাপাশি মান অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় জলপাই বা ক্যানোলা তৈল, বাদাম, প্রোটিন জাতীয় খাবার মাছ, মুরগী চর্বিবিহীন মাংস এসবকে মানসম্পন্ন খাবার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বলা বাহুল্য স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অতিপরিশোধিত শর্করা এবং অন্যান্য খাবারের চেয়ে অধিকতর মানসম্পন্ন অপরিশোধিত শর্করা বা অন্যান্য খাবার গ্রহণই শ্রেয়।
————————-
কায়েদ-উয-জামান
সহকারী অধ্যাপক, জীববিজ্ঞান বিভাগ,
শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ, জামালপুর।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ মে ২০০৮
Leave a Reply