হার্ট অ্যাটাকের প্রধান ও সাধারণ লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা—এ কথা আমরা সবাই জানি। এই ব্যথা বুকের মাঝখানে বা বাঁ পাশে শুরু হয় এবং ক্রমেই বাঁ হাত, গলা বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথার ধরনটিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাপ দিয়ে ধরে রাখা বা বুকটা দুমড়েমুচড়ে যাওয়ার মতো। সঙ্গে ঘাম হবে প্রচুর। হার্ট অ্যাটাকের এই সাধারণ উপসর্গ হলে কমবেশি সবাই সতর্ক হয়ে ওঠেন এবং জানেন যে এমনটি হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু সব সময় হার্ট অ্যাটাকে এ রকম উপসর্গ না-ও হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দু-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হলো হার্ট অ্যাটাকের প্রধান ও প্রথম লক্ষণ, কিন্তু এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে অন্য কিছুও হতে পারে। হতে পারে এতই সাধারণ কিছু যা আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। তাই জেনে রাখা উচিত হার্ট অ্যাটাকের বিরল উপসর্গগুলোকেও।
বুকে ব্যথার সোজাসাপ্টা ধরন ব্যতীত হার্ট অ্যাটাক বেশি হওয়ার হার দেখা গেছে নারীদের ক্ষেত্রে, বৃদ্ধদের বেলায় এবং দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিক রোগীদের। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সাময়িকীর একটি প্রবন্ধে দেখা যায়, কমপক্ষে ৩১ শতাংশ পুরুষের হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে ব্যথা ছাড়া অন্য ধরনের উপসর্গ হয়, নারীদের বেলায় এই হার ৪২ শতাংশ। সাধারণত ৫৫ বছরের নিচে নারীদের ভিন্ন ধরনের উপসর্গ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসের কারণে দেহের সিমপ্যাথেটিক ও প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে স্নায়ুতন্ত্র সতর্কসংকেত অনুযায়ী সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়, তেমন কোনো উপসর্গই হয় না। একে বলে নীরব হার্ট অ্যাটাক বা সাইলেন্ট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। এই সমস্যা হতে পারে অতি বৃদ্ধদেরও।
—জিনগতভাবে বিশ্বের কিছু জাতির মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ ভিন্ন হয়ে থাকে।
হার্ট অ্যাটাকের অস্বাভাবিক লক্ষণের মধ্যে প্রধান হলো বুকে ব্যথা ছাড়া হঠাৎ শুরু হওয়া শ্বাসকষ্ট, ভীষণ দুর্বলতা বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি, পেটের ওপর দিকে বা পেছনে ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক বা বদহজমের মতো অনুভূতি, বমি ভাব বা বমি, মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা হালকা হয়ে যাওয়া, হূৎস্পন্দনে বা নাড়ির গতিতে অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি। যাঁরা হূদেরাগের ঝুঁকিতে আছেন তাঁদের এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেও সতর্ক হওয়া উচিত। পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তে উচ্চমাত্রার চর্বি আছে এমন ব্যক্তি, ওজনাধিক্য, ধূমপায়ী ব্যক্তিরা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মধ্যে আছেন। যেকোনো অস্বাভাবিকতা, এমনকি কেবল অন্য ধরনের খারাপ লাগার অনুভূতি এদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ডাঃ মৌসুমী মরিয়ম সুলতানা
মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১৭, ২০১৩
Leave a Reply