বয়স হলে হাঁটুব্যথা নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। বসা থেকে উঠতে, সিঁড়ি ভাঙতে বা নামাজ পড়তে গিয়ে যখন-তখন হাঁটু দুটো টন টন করে ওঠে। কখনো শব্দও করে। এই হাঁটুব্যথা সব সময় চিকিৎসা করেও পুরোপুরি সারিয়ে তোলা যায় না, কেবল খানিকটা কমিয়ে রাখা যায়।
আঘাতজনিত ব্যথা
সাধারণত অল্প বয়সীরা আঘাতের কারণে হাঁটুতে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট বা হাঁটুর তরুনাস্থি মেনিনকাসে আঘাতের কারণে তীব্র হাঁটুব্যথা হতে পারে। হঠাৎ দিক পরিবর্তন বা সন্ধি মচকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে খেলাধুলা বা দৌড়ানোর সময়। বার্সায় আঘাত বা প্রদাহ হলেও হাঁটুব্যথা হতে পারে। বার্সা হলো হাঁটুর বাইরে তরলপূর্ণ থলের মতো। এটি কুশনের মতো কাজ করে ও আঘাত সামলাতে সাহায্য করে।
ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া
হঠাৎ করে একটি হাঁটুতে তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া বা সঙ্গে জ্বর ইত্যাদি সন্ধিতে সংক্রমণ বা সেপটিক আথ্রাইটিসের লক্ষণ। এসব ক্ষেত্রে সন্ধি থেকে খানিকটা রস বের করার পর পরীক্ষা করে দীর্ঘদিন উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। গেঁটেবাত বা গাউটের কারণেও সন্ধি লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। গেঁটেবাতের চিকিৎসা কিন্তু ভিন্ন, অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক নয়। তাই সমস্যা সঠিকভাবে নির্ণয় না করে চিকিৎসা শুরু করা ঠিক নয়।
বয়সজনিত হাঁটুব্যথা
বয়স বাড়ার সঙ্গে দুই হাঁটুতে যে ব্যথা হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অস্টিওআথ্রাইটিসের কারণে। এই ব্যথা হাঁটু ভাঁজ করা বা নড়াচড়া করলে বাড়ে, সাধারণত ততটা ফুলে বা লাল হয়ে যায় না, তবে কখনো কট কট শব্দ হতে পারে। জীবনাচরণে কিছু পরিবর্তন, গরম বা ঠান্ডা ছ্যাঁক, প্রয়োজনে কিছু ব্যথানাশক ওষুধ বা ফিজিওথেরাপি হলো এই সমস্যার সমাধান। ইদানীং এই সমস্যায় হাঁটু প্রতিস্থাপনও করা হয়।
পাল্টে নিন জীবন
অস্টিওআথ্রাইটিস জাতীয় সমস্যায় ব্যথা হয়তো বয়সের সঙ্গে আপনার জীবনের নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু একে মেনে নিয়ে বরং পাল্টে ফেলুন নিজের জীবনটাকে। অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন ও স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখুন। হাঁটু ভাঁজ করে কাজ করবেন না, মেঝেতে, পিঁড়িতে বা নিচু মোড়া জাতীয় আসনে বসবেন না। অনেকক্ষণ একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না। উঁচু কমোড ব্যবহার করুন। ভারী বস্তু বহন করবেন না। চিকিৎসকের কাছ থেকে পেশির ব্যায়াম শিখে নিন। দিনে দুই-তিনবার গরম ছ্যাঁক নিতে পারেন। ব্যথার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন।
ডা. মৌসুমী মরিয়ম সুলতানা
মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০৭, ২০১৩
Leave a Reply