অফিসে দীর্ঘ সময় অনেককে একই চেয়ারে বসে কাজ করে যেতে হয়। যানজটের কল্যাণে যানবাহনেও বসে থাকতে হয় আরও দু-এক ঘণ্টা। বাড়ি ফিরে হয়তো খাবারটা সেরে বসেন টিভির সামনে, বসেই থাকেন। কেউ বসে থাকেন কম্পিউটার টেবিলে। একবার হিসাব করে দেখুন, সারা দিনে কতটা সময় আপনি শুধু বসেই কাটালেন!
বসে থাকা মানে কী?
আমাদের মাংসপেশিগুলোকে যখন আমরা কাজে লাগাই, তখন তারা শক্তি আহরণের জন্য দেহের জমা শর্করাকে ভাঙে ও ব্যবহার করে। আবার যখন এরা কার্যহীন থাকে, তখন এই শর্করার ব্যবহার বন্ধ থাকে। তাই ওজন ও শর্করা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কায়িক শ্রম করতে বলা হয়। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, যাঁরা দিনের বেশির ভাগ সময় বসে কাজ করেন, তাঁদের বিপাক ক্রিয়া এত ধীর হয়ে যায়, শর্করা ও চর্বি ভাঙার অ্যানজাইমগুলো এত অকার্যকর হয়ে যেতে থাকে যে তাঁদের জন্য দৈনিক ৩০ মিনিট হাঁটা কাজে না-ও আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাই বলছেন, সারা দিনের কার্যপদ্ধতিতেও খানিকটা পরিবর্তন আনতে হবে। সামান্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ানো বা আড়মোড়া ভাঙা বা খানিকটা চক্কর দিয়ে এলেও এই অ্যানজাইমগুলো আবার সচল হয়ে ওঠে এবং বিপাক ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। বারবার থেমে পড়া বিপাক ক্রিয়াকে এভাবে বারবার জাগিয়ে দিতে হবে।
কীভাবে কাজ করবেন?
বেশির ভাগ অফিস ওয়ার্কই দীর্ঘ সময় বসে থাকার। এর মধ্যে মাথা তোলার সময় কোথায়? তবু চেষ্টা করুন প্রতি ২০ মিনিট পরপর দুই মিনিটের জন্য উঠে দাঁড়াতে বা একটু চক্কর দিতে। টানা তিন ঘণ্টার বেশি কখনো এক জায়গায় বসে থাকা চলবে না। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান হার্ট ফাউন্ডেশন ও আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন সম্প্রতি একটি যুক্ত পরামর্শ দিয়েছে।
অফিসে ফোনে কথা বলার সময় দাঁড়িয়ে পড়ুন বা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলুন
মিটিং বা সহকর্মীর সঙ্গে জরুরি আলাপ হাঁটতে হাঁটতে করা যায়
বাজার বা সন্তানের স্কুলে বা অফিসে যেতে সম্ভব হলে হাঁটুন বা সাইক্লিং করুন
বাড়িতে টিভি দেখার সময় কিছু একটা কাজ করতে থাকুন, যেমন কাপড় ইস্ত্রি বা কাপড় গোছানো
পাবলিক বাস এক স্টপ আগে ছেড়ে দিন ও হেঁটে বাড়ি ফিরুন
নিজের গাড়িটি একটু দূরে পার্ক করুন
বাসে সিটে না বসে দাঁড়িয়ে যাওয়া ভালো।
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল।
গবেষণা যা বলছে
১১ ঘণ্টা : দৈনিক গড়ে ১১ ঘণ্টার বেশি যাঁরা বসে কাজ করেন ৪৫ বছরের পর তাঁদের অন্যদের চেয়ে মৃত্যুহার ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় বসে থাকা টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হূদেরাগের ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি ক্যানসারের হারও বেশি এই দলের মধ্যে।
৪ ঘণ্টা : যাঁরা দৈনিক চার ঘণ্টার কম বসে থাকেন সাধারণত, ঘুমের সময়টা বাদ দিয়ে, তাঁদের মধ্যে এসব রোগের ঝুঁকি কম।
সূত্র: সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
ডা. তানজিনা হোসেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০১, ২০১৩
Leave a Reply