ক্যাসারের কোনো উত্তর জানা নেই, সেটি প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু ফুসফুসের ক্যাসার প্রতিরোধযোগ্য। এটা বলার উদ্দেশ্য হলো-এই রোগের কারণ জানা গেছে। সেটি হলো ধুমপান। ফুসফুসের ক্যাসার সত্যিই একটি বিপর্যয়কর এবং ঘাতক বক্ষব্যাধি। উন্নত দেশগুলোতে ক্যাসারের কারণে যে মৃত্যু ঘটে, তার মধ্যে ফুসফুসের ক্যাসার উল্লেখযোগ্য স্হান দখল করে আছে। প্রতি বছরই এর সংখ্যা বাড়ছে। শহরের বিষাক্ত ধোঁয়া ক্যাসার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সারা জীবন ধুমপান না করলে ও ক্যাসার হতে পারে। আর তা হতে পারে গাড়ির কালো ধোঁয়া বা মিল কারখানার কালো ধোঁয়া, যদি সব সময় নাকে ঢুকতে থাকে তাহলে। ফুসফুসের ক্যাসারের কিছু লক্ষণ আছে। যদিও সব লক্ষণ খুব একটা সুনির্দিষ্ট নয়। প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই কফ-কাশি থাকে এবং শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে অল্প অল্প রক্ত মিশ্রিত কফ যায়। ফুসফুসের ক্যাসারে যক্ষ্মার মতো হঠাৎ করে গলগল করে রক্ত যায় না। যে ব্যক্তি গত ২০ বছর বা তার অধিক সময় ধরে ধুমপান করছেন, তার কাশির সঙ্গে যদি একবারও রক্ত গিয়ে থাকে, তবে অবশ্যই সেটি সন্দেহের উদ্রেক হবে। আর সন্দেহ দেখা দিলেই চিকিৎসক তখন সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে তৎপর হবেন। শতকরা ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অবশ্য শ্বাসকষ্ট নির্ভর করে ক্যাসারটির আকার এবং ফুসফুসে তার অবস্হানের ওপর। শতকরা ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা দেখা দেয়।
এবার স্বরভঙ্গ সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা যাক। কারণ এটি ফুসফুসের ক্যাসারের অন্যতম লক্ষণ। স্বরভঙ্গ বলতে আমরা গলার শব্দ বা আওয়াজ বসে যাওয়াকেই বুঝে থাকি। এতে কখনো রোগী ফিসফিস করে কথা বলে আবার কখনো এতই আস্তে শব্দ করে যে, কিছুই শুনতে পাওয়া যায় না। বস্তুতপক্ষে স্বরভঙ্গ বা গলা বসে যাওয়াটা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসার আওতাধীন বিষয়। কারণ শব্দ নালী বা ল্যারিংসয়ে অল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ দেখা দিলে স্বর ভেঙে যায় এবং রোগীও ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে যান পরামর্শের জন্য। ক্যানভাসার বা রাজনৈতিক নেতাদের যারা উচ্চস্বরে বক্তৃতা করেন, তাদের প্রায়ই গলা বসে থাকে। বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, স্বরভঙ্গের পেছনে ফুসফুসের ক্যাসার এবং যক্ষ্মাই দায়ী। ফুসফুসের ক্যাসার যখন ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হতে থাকে, তখন এক পর্যায়ে গলার বাম দিকের রিকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভটি আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফলে রোগীর শব্দযন্ত্র এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। যেহেতু এই শব্দযন্ত্র শব্দ উৎপাদনের অঙ্গ, তাই রোগীর স্বরভঙ্গ বা গলা বসে যায়। এমন এক পর্যায়ে আসে যে, রোগীর কথা বোঝাই যায় না। অধিকন্তু শব্দযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তার ফলে রোগী কাশিও দিতে পারে না।
কাশির আওয়াজ অনেক সময় গরুর কাশির আওয়াজের মতো হওয়ায় তাকে ‘বোভাইন’ কফ বলা হয়ে থাকে। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফুসফুসের ক্যাসার এবং তার জটিলতা একটু বেশি বয়সে বা বার্ধক্যে দেখা দেয় এবং যারা অতিরিক্ত ধুমপান করতেন, তাদের সহসাই এই সমস্যা দেখা দেয়। তাই একজন বয়স্ক ব্যক্তি বা অতিরিক্ত ধুমপায়ী বয়স্ক ব্যক্তির কাশি এবং গলার স্বর বসে গেলে তৎক্ষণাৎ একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক্স-রে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজন হলে ব্রংকোসকোপীর সহায়তা নিতে হবে রোগ শনাক্ত করার জন্য। একথা মনে রাখতে হবে যদি ফুসফুসের ক্যাসারের জন্য রোগীর স্বরভঙ্গ হয়ে থাকে, তবে বুঝতে হবে যে, রোগীর ক্যাসার অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে।
——————–
অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ
লেখকঃ বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেষ্ট সেন্টার. ৮৫, মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়।
আমার দেশ, ০৬ মে ২০০৮
Leave a Reply